ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ড. ইউনূসের জন্মদিনে আয়োজন ছিল না এবার

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ জুন ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ড. ইউনূসের জন্মদিনে আয়োজন ছিল না এবার

ইউনূস সেন্টারে ভক্ত অনুরাগীদের মাঝে ড. ইউনূস (ফেসবুক থেকে নেওয়া)

শাহ মতিন টিপু : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনূস সেন্টারের ফেসবুকে লেখা হয়েছে, ‘আপনার প্রজ্ঞার আলোয়, আলোকিত হোক শতকোটি প্রাণ, সারা বিশ্বময়।’

 

১৯২৮ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বখশীর হাটে জন্ম তার। তার পিতার নাম হাজী দুলা মিয়া সওদাগর, মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। ড. ইউনূসকে বলা হয় ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। তার সামাজিক ব্যবসা ধারণাও ব্যাপক প্রশংসিত।

 

গত পাঁচ বছর ধরে ড. ইউনূসের জন্মদিনকে সামাজিক ব্যবসা দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে ইউনূস সেন্টার। তবে এ বছর ২৮ জুনের আগে রোজা শুরুর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত ২৮ মে অর্থাৎ একমাস আগেই সামাজিক ব্যবসা দিবস পালিত হয়েছে। আর এ কারণেই ড. ইউনূসের জন্মদিনে কোন আয়োজন ছিল না এবার।

 

তবে জন্মদিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অভিনন্দনবার্তা আর ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন।

 

জন্মদিনের প্রথম প্রভাতে ইউনূস সেন্টারে সহকর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তার হাতে গড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহকর্মীরাও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। জার্মান প্রেসিডেন্ট জোয়াকিম গোয়াক-এর পক্ষে ঢাকার জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিন্স প্রফেসর ইউনূসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ আমেরিকার সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা জানান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তরাও ব্যক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও প্রফেসর ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানান তার ছাত্র, সহকর্মীসহ বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।

 

`চাকরিপ্রার্থী নই, আমরা চাকরিদাতা` এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়েছে এবারের সামাজিক ব্যবসা দিবস। দিবসটিতে ড. মুহম্মদ ইউনূস ‘তিন শূন্য’ থিওরির কথা শোনান। তিনি বলেন, ‘তিনটি শূন্য নিশ্চিত করতে পারলেই বিশ্ব এগুবে। শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব আর শূন্য মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ।’ আর এ লক্ষ্যে অনেকটা শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকে একটি নতুন রূপ দিতে হবে। যেটা আমাদের প্রয়োজন তা জেনে তবে নিশ্চিত করার পথে এগিয়ে যেতে হবে।’

 

উইকিপিডিয়ার তথ্যনুযায়ী, ড. ইউনূস দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ভিক্ষের সময়। স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবন মান উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে- এই অনুভবে গবেষণামূলক গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৪ সালে মুহাম্মদ ইউনূস তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন যা সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় অধিগ্রহণ করে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। এই গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমই তার বিশ্ব পরিচিতি এনে দেয়। ২০০৬ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একইসঙ্গে তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও এ পুরস্কারে ভূষিত হয়। ২০০৭ সালের ১৭ নভেম্বর নরওয়েতে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।

 

মুহাম্মদ ইউনূসের সহধর্মিনী ডঃ আফরোজী ইউনূস। ব্যক্তিগত জীবনে মুহাম্মদ ইউনূস দুই কন্যার পিতা। মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ছোট ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর টিভি ব্যক্তিত্ব। খুব সাদাসিধা জীবনযাপনে অভ্যস্থ ড. ইউনূস পড়েন গ্রামীণ চেকের কাপড়ের পোশাক-আশাক।

 

গত বছর তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের তালিকায় স্থান করে নেন। জুরিখভিত্তিক ‘গ্লোবাল থট লিডার ২০১৪’ জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের তালিকার পঞ্চম স্থানেই অবস্থান ড. ইউনূসের। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। এরপর রয়েছে ‘ইন্টারনেটের পোপ’ হিসেবে পরিচিত টিম বারনার্স-লী। তৃতীয় অবস্থানে ভারতের নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং চতুর্থ স্থানে চেক রিপাবলিকের লেখক মিলান কুন্দেরা। এরপরই অর্থাৎ বিশ্বের শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী চিন্তাবিদের তালিকার পঞ্চমে ড. ইউনূস।

 

অধ্যাপক ইউনূসকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানজনক ডিগ্রি দিয়েছে। ১০টি দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১১২টি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। দেশে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে। আন্তর্জাতিক ৩৪টি কমিশন এবং ৩৬টি উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ইউনূস। উদ্ভাবনী ব্যবসা নিয়ে নিরলস কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ফরচুন ম্যাগাজিন তাকে এ কালের মহাউদ্যোক্তা হিসেবে অভিহিত করেছে।

 

ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেন। ব্যুরো অব ইকোনমিক্সে গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে চট্টগ্রাম কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সম্মানজনক ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান। সেখানে ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতির ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব নেন। এখানে শিক্ষকতাকালে গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনের কাজে হাত দেন। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গ্রাম জোবরায় গ্রামীণ নারীদের নিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করেন। সেই প্রচেষ্টা থেকেই জন্ম গ্রামীণ ব্যাংকের।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৫/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়