ডিজিটাল নির্ভরতায় কমছে স্মৃতিশক্তি
সমরজিৎ ঘোষ || রাইজিংবিডি.কম
মানুষ আজকাল কম্পিউটারকে তার নিজস্ব মস্তিষ্কের ‘বর্ধিতাংশ’ হিসেবে ব্যবহার করছে। অকারণ ডিজিটাল নির্ভরতায় লোপ পাচ্ছে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি। ছবি : এডুকেশন ভিউজ
সমরজিৎ ঘোষ : শৈশবে মুখস্থ করা ফোন নম্বর দিব্যি স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে, অথচ এখন পরিবারে ক’জন সদস্য সেই সংখ্যাটা নাকি চট করে বলে ফেলা যায় না। ক’টা ইন্টারভিউ মাড়িয়ে তবে চাকরি পেয়েছেন, সেই সংখ্যাটা কোনোমতেই মন থেকে মুছেনি, অথচ এখন কত নম্বর চাকরি করছেন বলতে গেলেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। এমন মানুষের সংখ্যা নাকি দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ ওইসব মানুষের অতিমাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভরতা। একদল ব্রিটিশ গবেষকের দাবি, দিন দিন কম্পিউটার আর সার্চ ইঞ্জিনের ওপর অকারণ নির্ভরতার কারণে মানুষের স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে।
মানুষ আজকাল তথ্য মুখস্থ করার পরিবর্তে কম্পিউটারে কাজ সারছে। কিংবা কিছু হলেই গুগলে (কিংবা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে) ঢুঁ মারছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের গবেষক মারিয়া উইম্বার বলেন, ‘তথ্য খোঁজাখুঁজির কারণে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে।’
ছয় হাজার বয়স্ক মানুষের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। এদের কেউ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নাগরিক; কেউ কেউ ইতালি, স্পেন ও বেলজিয়ামের অধিবাসী। নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবার্গের নাগরিকও অংশ নিয়েছিলেন স্মৃতি-স্বভাব নিয়ে এই জনজরিপে।
কোনো তথ্য মনে করতে দিলেই এদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রথমে কম্পিউটারের সহযোগিতা নেয়। এই প্রবণতা সবেচেয়ে বেশি ব্রিটিশদের মধ্যে। অর্ধেকেরও বেশি বয়স্ক ব্রিটিশ তথ্য খুঁজতে প্রথমেই সার্চ ইঞ্জিনের দ্বারস্থ হয়।
দুর ছাই! কিছুতেই মনে পড়ছে না। ছবি : ডেসার্ট নিউজ
এই ধরনের কম্পিউটার নির্ভরতা স্মরণশক্তি উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। বোতাম চেপে বের করা তথ্য খুব সহজেই নাকি ভুলে যায় মানুষ- জরিপটি সেরকমই বলছে। ড. উইম্বার বলেছেন, ‘আমরা যখন কোনো কিছু স্মরণ করি তখন আমাদের স্মৃতি আরও শক্তিশালী হয়। এবং একই সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক স্মৃতি যা আমাদের বিচলিত করতে পারে আমরা তা ভুলে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য বা কোনো ঘটনা মনে করার প্রক্রিয়া স্থায়ী স্মৃতি গড়ার খুব কার্যকরী উপায়।’
উইম্বার আরও যোগ করেন, ইন্টারনেটে একাধিকবার খোঁজা তথ্য স্মৃতিকে সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে না।
স্মৃতিশক্তি নিয়ে গবেষণামূলক জনজরিপটি পরিচালনা করেছে ক্যাসপারস্কি ল্যাব। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক এই প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, মানুষ আসলে কম্পিউটারকে তার নিজস্ব মস্তিষ্কের ‘বর্ধিতাংশ’ (এক্সটেনশন) হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে।
তথ্য খোঁজ করলে যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ‘চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকবে’ এই নির্ভাবনায় মানুষ এখন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও মনে রাখা বাদ দিয়েছে। এই প্রবণতাকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল স্মৃতিবিলোপ’।
তথ্যঋণ : বিবিসি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ অক্টোবর ২০১৫/তাপস রায়
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন