ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঢাকা নয়, যশোরে প্রথম হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১১ এপ্রিল ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকা নয়, যশোরে প্রথম হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা

ব্যস্ত চারুকলার শিল্পীরা

বিএম ফারুক, যশোর : আজকের পয়লা বৈশাখের অন্যতম আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় যশোরে। এরপর ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেন। ক্রমে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল, ময়মনসিংহসহ সারা দেশে। যশোরে এর প্রথম আয়োজক ছিলেন মাহবুব জামাল শামীম। যশোরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন চারুপীঠ আর্ট রিসার্স ইন্সটিটিউট।

 

রং-বেরঙের প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ছে। মুখোশ পরে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে বর্ণিল পোশাকে তরুণ-তরুণীরা। বাজছে কাঁসর, ঢোল- আজ থেকে ৩১ বছর আগের এক দৃশ্য। বাংলা নববর্ষে এভাবেই প্রথম যশোর শহরে বের হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। এরপর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

 

যশোরের ‘চারুপীঠ’ নামের একটি সংগঠন ১৯৮৫ সালে প্রথম বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মাহবুব জামাল শামীমসহ কয়েকজন।

 

এ প্রসঙ্গে মাহবুবু জামাল শামীম জানান, তিনিসহ চারুপীঠের হিরন্ময় চন্দ, ছোট শামীম এবং আরো কয়েকজন সে সময় এ কাজে অংশ নিয়েছিলেন। এর আগে এই উপমহাদেশে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রার কোনো ইতিহাস নেই। সেদিনের সে আয়োজনের পর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয় নববর্ষের এ আয়োজন। তখন এর নাম ছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এখন এর নাম বদলে হয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। 

 

মাহবুব জামাল শামীম বলেন, ১৯৮৯ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেন। ১৯৯০ সালে বরিশাল ও ময়মনসিংহ শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এর চার বছর পর ১৯৯৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও শহরে ও শান্তিনিকেতনে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা । গত কয়েক বছর ধরে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশব্যাপী মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হচ্ছে।

 

৩১ বছর আগের এ উৎসব  নিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে স্মৃতিচারণ করে শামীম বলেন, যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরনো বাদ্যসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। 

 

তারই ধারাবাহিকতায় এবারও থাকছে নানা আয়োজন। চারুপীঠের শিল্পীরা মনের মাধুরি মিশিয়ে সৃষ্টি করছেন নানা শিল্পকর্ম। যুগোপযোগী সহজে বহনযোগ্য ও সাশ্রয়ী উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পাপেট ও উজ্জ্বল রঙের মুকুট তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। যা বরাবরের মত এবারও যশোরবাসীকে মুগ্ধ করবে ও উপহার দেবে নববর্ষের আনন্দঘন দিন।

 

চারুপীঠ-এর প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তখন দেশের রাজনীতি শিল্পকলার পক্ষে ছিল না। এ রকম এক অন্ধকার যুগে আলোর পথ দেখাতে আমরা সংগঠনটি তৈরি করি।

 

 

তিনি আরো বলেন, যে চিন্তা নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়েছিল, তা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তবে আমরা আশাবাদি। এখন সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তবে পূর্ণতা পেতে আরও সময় লাগবে।

 

মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যশোর শাখার সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ধারণার প্রতীক। ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। আমাদের স্বাধীনতার যে চার মূলনীতি তা এর মধ্যে নিহিত। ধর্মীয় উৎসবের বাইরে এই ধরনের ঋতুভিত্তিক আয়োজন সব মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাইরে বেরুনোর কোনো সুযোগ নেই।

 

সেই ধারণা থেকেই যশোরের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীরা সারা দেশের মধ্যে প্রথম এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেটি মডেল হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। এই ধরনের ঋতুভিত্তিক উৎসব আমরা যত বেশি আয়োজন করতে পারব, ততই মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটবে। 

 

চরুপীঠের মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে এর সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, শিল্পী এসএম সুলতানের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে যশোরের চারুপীঠ। শিল্পী সুলতান শিশুদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করতেন। এ কারণে চারুপীঠ শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করে।

 

শিল্পী সুলতানের শিষ্য মাহবুব জামাল শামীম। তিনি ঢাকা আর্ট কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় চিন্তা করেন ধর্মীয় কারণে বাঙালির জাতীয় কোনো উৎসব নেই। এ কারণে বাংলা নববর্ষকে আমরা জাতীয় উৎসবে রূপ দিতে পারি। যেহেতু এটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব।

 

এ কারণে পয়লা বৈশাখে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালি যাতে রাস্তায় নেমে আসেন। আর রাস্তায় আসাটাকে বর্ণময় করার জন্য মুখোশ, পাপেট ও উজ্জ্বল রঙের মুকুট, প্রাণী তৈরি করা যায় তাহলে মানুষ আনন্দের সঙ্গে শোভাযাত্রায় শামিল হতে পারেন।

 

তিনি বলেন, সামরিক শাসক এরশাদ যে বছর ক্ষমতায় আসেন সে বছর শোভাযাত্রা বের করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তখন সেনাবাহিনীর বাধ্যবাধকতা থাকায় শুধু র‌্যালি করে বাংলা নববর্ষ বরণ করা হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে বড় মাত্রায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।



 

রাইজিংবিডি/যশোর/১১ এপ্রিল ২০১৬/বিএম ফারুক/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়