ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

রাইজিংবিডি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদেরকে আশ্বস্থ করে বলেছেন, সরকার ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জমি নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। ইতিমধ্যেই সেই সমস্যাটা আমরা সমাধান করে ফেলেছি। বাকি কাজটা আপনাদের ওপরই নির্ভরশীল।’

সোমবার বিকেলে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা ষষ্ঠীর দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সকলে সেটাই মানি আর বাংলাদেশ বিশ্বে সেটার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রত্যেকটা উৎসবে সবাই ভাই বোনের মত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা এই উৎসবটা উদযাপন করে যাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা মুসলমানরা শুধু নয় আমাদের সব ধর্মের মানুষ-হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-সকলে মিলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে এদেশ স্বাধীন করে গেছেন। বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এবং এই বাংলাদেশে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে যার যার অধিকার নিয়েই বসবাস করবে, তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশকে আমরা সকলে একসঙ্গে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ উন্নত হোক, সমৃদ্ধশালী হোক, দারিদ্র মুক্ত এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ হোক এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। আমি এটুকু বলতে পারি, আমি বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি এবং আমরা দুটি বোন বেঁচে আছি এবং আমাদের জীবনের একটাই লক্ষ্য-এই বাংলাদেশটাকে আমরা গড়ে তুলবো। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে প্রতিটি মানুষকে একটি উন্নত জীবন দেব-যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বহু আগেই এই দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতো বলে তিনি উল্লখ করেন।

সরকার প্রধান বলেন, আজকে আমরা আনন্দিত সারা বাংলাদেশেই পূজো হচ্ছে এবং প্রতি বছরই পূজোর সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মন্ডপে পূজো হচ্ছে ( সারা দেশে ৩১ হাজার ২৭২টি পূজা মন্ডপে পূজা)।

তিনি বলেন, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকলেই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় জনগণও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি সারা বাংলাদেশে পূজা অনুষ্ঠানে কর্মরতদের তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি এই উৎসব যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় সেই কামনাও করেন।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মিলন দত্ত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহী সেলিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী রামকৃষ্ণ মিশন পূজামন্ডপ পরিদর্শনে যান। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। স্থানীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ এবং পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারি এ সময় বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী ’৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, দেশে এসে আমি দেখেছি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মুষ্টিমেয় কিছু লোকেরই ভাগ্যোন্নয়ন আর দেশের আপামর জনসাধারণ যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে গেছে। আর দেখেছি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বার বার আঘাত হানতে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন একটা দুর্ভাগ্য ছিল যে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এমনকি আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরাও রেহাই পেত না-এই ধরনের একটা পরিবেশ ছিল। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার। বাংলাদেশে সেই মূল্যবোধটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের সব সময়ই একটা চেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার। যখনই আমরা ক্ষমতায় এসেছি তখনই চেষ্টা করেছি এই বাংলাদেশে যারাই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী আছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আমাদের মুসলমান সম্প্রদায় এর মধ্যে কারা বেশি সংখ্যায় আর কারা কম সংখ্যায় সেটা বড় কথা নয়-যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। সুষ্ঠুভাবে পালন করবে। উৎসবের সাথে সম্মানের সাথে পালন করবে, সেটা নিশ্চিত করা। এই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে সকল ধর্মের মানুষ এক হয়ে যুদ্ধ করে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বাংলাদেশের মানুষের সংঘাত হানাহানি-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস- এর বিরুদ্ধে আমরা সব সময় রুখে দাঁড়িয়েছি এবং জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।

তিনি বলেন, তাই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সকলে মিলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছে।

প্রতিটি উৎসবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালিরা উৎসব পালন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলা নববর্ষের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলা নববর্ষকে নতুন চেতনায় আজকে আমরা নিয়ে এসেছি। এই একটি উৎসব যেটা সকলে মিলে এক হয়ে আমরা উদযাপন করতে পারি।

তার সরকার দেশের সকল ধর্মের মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে বলেন, সরকার বিনা ট্যাক্সে একশ টাকার বিনিময়ে হিন্দুসহ অন্য ধর্মের কন্যা সন্তানকে বাবার সম্পত্তি হেবা করে দেওয়ার অধিকার দিয়ে আইন করে দিয়েছে। যাতে হিন্দু সন্তান হেবা আইন অনুযায়ী পৈত্রিক সম্পত্তি লাভ করতে পারে। মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশপাশি তার সরকার মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাও চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি সেবায়েত, পুরোহিতদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এছাড়া সরকার সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী সকল ধর্মের জন্য একটি করে কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমি সাধুবাদ জানাই আমাদের আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কারণ, তারা সেখানে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেই আমরা একদিকে যেমন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি, সেই সাথে আমাদের সব ধর্মের মানুষ যখন তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে, তখন সেই উৎসবটা যাতে সুন্দরভাবে উদযাপিত হয়, সেজন্যও তারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা চাই, আপনারা যেন সকলে একসঙ্গে মিলে কাজ করেন শুধু একটা লক্ষ্য নিয়ে আর সেই লক্ষ্য হচ্ছে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা।

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ অক্টোবর ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়