ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্মরণীয় দুই জয়

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্মরণীয় দুই জয়

উইকেট শিকারের পর জাহানারা আলমকে অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে এসেছেন সতীর্থরা

আবু হোসেন পরাগ : নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্ট অবিশ্বাস্যভাবে হেরে হতাশায় পুড়ছে মুশফিকুর রহিমের দল। গোটা বাংলাদেশও নয় কি? হতাশার মাঝে অবশ্য খানিকটা আনন্দের উপলক্ষ এনে দিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।

কক্সবাজারে আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলকে ১০ রানে হারিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রুমানা-সালমারা। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে নয়বারের দেখায় এটা বাংলাদেশের মেয়েদের দ্বিতীয় জয়। প্রথম জয়টি এসেছিল চার বছর আগে। স্মরণীয় এই দুই জয়ের গল্প শুনুন।



প্রথম জয় : (৬ সেপ্টেম্বর ২০১২, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম, ঢাকা)

ওয়ানডেতে এটিই ছিল বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের প্রথম দেখা। মিরপুরে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে স্বাগতিক মেয়েদের দারুণ বোলিংয়ে ৩৪.৪ ওভারে সফরকারীদের ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ৭৫ রানে। ইনিংসে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেন কেবল তিনজন- নিগনম ডু প্রেজ (২৪), সুনে লুস (১৫) ও ম্যারিজান ক্যাপ (১১)।

বাংলাদেশের অফ স্পিনার খাদিজাতুল কুবরা ৮ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে তিনটি মেডেনসহ নেন ৩ উইকেট। আরেক স্পিনার রুমানা আহমেদও ১০ রানে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট জমা পড়ে জাহানারা আলম, সালমা খাতুন ও তাজিয়া আক্তারের ঝুলিতে।

৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৮ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে চারে নামা লতা মন্ডলের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে স্বাগতিকরা। কিন্তু লতা ৩১ রান করে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার পর আবার বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।


একটা সময় বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৬০। জয়ের জন্য তখনো চাই ১৬ রান। রিতু মনির অপরাজিত ১২ রানের সুবাদে ৭৫ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পায় বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৪.৪ ওভারে ৭৫ (প্রেজ ২৪, লুস ১৫, ক্যাপ ১১; কুবরা ৩/৮, রুমানা ৩/১০, সালমা ১/১৭)

বাংলাদেশ : ৩৭.৩ ওভারে ৭৮/৮ (লতা ৩১, রিতু ১২; লবসের ৩/৩২, ইসমাইল ২/৮, ক্যাপ ২/১৩)।

ফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ : লতা মন্ডল।

দ্বিতীয় জয় : (১৬ জানুয়ারি ২০১৭, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, কক্সবাজার)

আগের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারতো বাংলাদেশ। ২২৪ রান তাড়ায় ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রানের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশকে জয়ের পথে এগিয়ে নিচ্ছিলেন শারমিন আক্তার ও রুমানা আহমেদ। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পরই পথ হারায় স্বাগতিকরা, ম্যাচ হারে ১৭ রানে। আজ তৃতীয় ম্যাচে প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরার মতো কেউ ছিল বলেই মনে হয় না!

   
আজ টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক রুমানা। ব্যাটিংয়ে শুরুটাও হয় দারুণ। উদ্বোধনী জুটিতে অভিষিক্ত শারমিন সুলতানা ও শারমিন আক্তার যোগ করেন ৪২ রান। ৫ রানের মধ্যে অবশ্য দুই শারমিনই সাজঘরে ফেরেন। শারমিন সুলতানা করেন ২১ রান, শারমিন আক্তারের ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান।

এরপর তৃতীয় উইকেটে সানজিদা ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে অধিনায়ক রুমানা গড়েন ৪২ রানের ভালো আরেকটি জুটি। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনআপ। ৩২ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৩৬ রানে।

এই পুঁজি নিয়ে জিততে হলে বোলিংয়ে অসাধারণ কিছুই করে দেখাতে হতো বাংলাদেশের মেয়েদের। সেই অসাধারণ কাজটিই করলেন অফ স্পিনার খাদিজাতুল কুবরা। তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন দুই পেসার পান্না ঘোষ ও জাহানারা আলম।


আগের দুই ম্যাচেই শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার আন্দ্রেই স্টেইন ও লিজলে লি।  আজ এ জুটি আড়াই ওভারের বেশি স্থায়ী হতে দেয়নি স্বাগতিকরা। তৃতীয় ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকান শিবিরে আঘাত হানেন পান্না।  তার বলে উইকেটকিপার নিগার সুলতানাকে ক্যাচ দিয়ে ডাক মেরে ফেরেন আগের দুই ম্যাচে ফিফটি করা স্টেইন।

আগের দুই ম্যাচে ফিফটি করা আরেক ওপেনার লি অবশ্য ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। লির সেই ঝড় থামান কুবরা। অফ স্পিনারের বলে বোল্ড লি (৩১ বলে ৪৬)। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৫৫। এরপর সফরকারীদের আরো চেপে ধরেন স্বাগতিক বোলাররা।


৩ উইকেটে ৫৫ থেকে দ্রুতই দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৬৭। এরপর অবশ্য গড়ে ওঠে ২০ রানের একটা জুটি। খাকাকে রানআউটে বিদায় করে এ জুটি ভাঙেন লতা। এরপর কুবরা কিরস্টেনকে বোল্ড করলে সফরকারীদের স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ৯৬। বাংলাদেশের জয় তখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু তখনো একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফন নিকর্ক।

৯ উইকেট পড়ার পর নিকর্ক একাই চালিয়ে যান লড়াই। হাতের মুঠো থেকে বাংলাদেশের জয়টাও যেন তাতে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছিল। অবশেষে ৩২তম ওভারে সালমা খাতুন লেটসোলোকে বোল্ড করে ভাঙেন ৩০ রানের শেষ উইকেট জুটি। তাতেই নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের ১০ রানের রোমাঞ্চকর জয়। এক প্রান্তে ৪২ রানে অপরাজিত থেকে দলের পরাজয় দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক নিকর্কের!



১০ ওভারে মাত্র ৩৩ রানের বিনিময়ে একটি মেডেনসহ ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়িকা কুবরা। জাহানারা ৭ ওভারে ২১ রানে নেন ২ উইকেট। পান্নাও ২ উইকেট নেন ৫ ওভারে ২৫ রান দিয়ে। সালমার ঝুলিতে জমা পড়ে একটি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৪৯ ওভারে ১৩৬ (রুমানা ২৮, শারমিন সুলতানা ২১, নিগার ২১, শারমিন আক্তার ১৭, সানজিদা ১৬; নিকর্ক ২/১৮, ক্যাপ ২/১৮, লুস ২/২৯)

দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩১.২ ওভারে ১২৬ (লি ৪৬, নিকর্ক ৪২*; কুবরা ৪/৩৩, জাহানারা ২/২১, পান্না ২/২৫)।

ফল : বাংলাদেশ ১০ রানে জয়ী।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ : খাদিজাতুল কুবরা



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৭/পরাগ   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়