দক্ষিণাঞ্চলের চামড়ার বাজার মন্দা
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম
নিজম্ব প্রতিবেদক, খুলনা : ঈদুল ফিতরে কেনা গরু-ছাগলের চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ অঞ্চলের চার জেলার ব্যবসায়ীরা।
ক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে বিক্রি মূল্য কম হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি পিচ চামড়ায় মূল্য কমেছে কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে।
এদিকে, গত বছরের কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম না পাওয়ায় এ অঞ্চলের ৬০ শতাংশ আড়ৎ বন্ধ হয়ে গেছে। ঋণগ্রস্ত চার-পাঁচজন আড়ৎদারও এলাকা ছেড়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম হওয়ায় স্থানীয় বাজারে বড়ধরনের দর পতন হয়েছে। ফলে আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। চামড়ার বাজারের মন্দাভাবের জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্র জানান, গেল বছরের ঈদুল আযহায় দক্ষিণ জনপদ থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার পিচ গরুর চামড়া ট্যানারিতে বিক্রি করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের ৫০ শতাংশ মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। চলতি মূলধন না থাকায় খুলনার শেখপাড়া, দৌলতপুর, খালিশপুর, চুকনগর, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া, যশোরের রাজাহাটের ৬০ শতাংশ আড়ৎদারের বিকিকিনি বন্ধ রয়েছে।
দৌলতপুরের আবুল হাসেম ও পাটকেলঘাটার চারজন ঋণগ্রস্ত আড়ৎদার ব্যবসা বন্ধ করে এলাকা ত্যাগ করেছেন। খুলনার প্রসিদ্ধ আমান লেদার গত ১০ মাস যাবত বিকিকিনি বন্ধ রেখেছে। জানুয়ারি মাসে প্রতি পিচ গরুর চামড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের চামড়া দেড় শ টাকার পরিবর্তে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শেখপাড়াস্থ আড়ৎদার কার্তিক এন্টারপ্রাইজের মালিক কার্তিক ঘোষ জানান, ইউরোপে চামড়া রপ্তানী বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। সেখানে ইউরোর দর পতন হয়েছে।
ট্যানারি মালিকরা সেদেশে চামড়া রপ্তানী করতে পারছে না। ফলে তারা দক্ষিণাঞ্চলের আড়ৎদারদের কোরবানির চামড়ার দাম পরিশোধ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, এ কারণে এ অঞ্চলের আড়ৎদারদের মূলধনের সংকট দেখা দিয়েছে। কোরবানির বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এমন ধরনের দর পতন হয়।
সাতক্ষীরা জেলা সদরের চামড়া ব্যবসায়ী মঈনুদ্দিন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের কেনা পশুর চামড়া এখনো বিক্রি করতে পারেননি। কেনা দামের চেয়ে ট্যানারি মালিকরা অনেক কমমূল্যে চামড়া কিনতে চায়।
লোকসান এড়াতে আড়ৎ শত শত পিচ চামড়া মজুত রয়েছে। জেলার ৩০টি আড়তের মধ্যে ২০টির বিকিকিনি বন্ধ রয়েছে।
পাটকেলঘাটা মোকামের ব্যবসায়ী মহাদেব দাশ জানান, ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করলে কোরবানির চামড়া দেওয়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সর্বস্তরের চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহে ভাটা পড়েছে।
বাগেরহাট জেলার কচুয়ার চামড়া ব্যবসায়ী রস্তম আলী জানান, নগদ টাকায় চামড়া কিনে বাকিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। মূল্য কবে নাগাদ পরিশোধ হবে এ বিষয়ে তারা অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, যশোর জেলার রাজারহাটের আনুমানিক দেড় শ আড়তের মধ্যে ৮০টির বিকিকিনি নেই। রাজারহাট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার হাট। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে বিকিকিনি হয়।
যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমার কারণে এ অঞ্চলে বড় ধরনের দর পতন হয়েছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে সরকারের উদ্যোগের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। মনিরামপুরের ক্ষুদে ব্যবসায়ী অমল দাশ জানান, এক শ ফুট ধরে চামড়া কিনে ৮০-৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের বড় ধরণের লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
রাইজিংবিডি/৩ আগস্ট২০১৫/খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/রণজিৎ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন