ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : সূর্য সন্তানদের হারানোর দিন

এনআর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : সূর্য সন্তানদের হারানোর দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আজ এই ঘোর রক্ত গোধূলীতে দাঁড়িয়ে

            আমি অভিশাপ দিচ্ছি তাদের

            যারা আমার কলিজায় সেঁটে দিয়েছে

             একখানা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ’।

 

কিংবা ‘একঝাঁক ঝাঁ ঝাঁ বুলেট তাদের বক্ষ বিদীর্ণ করুক/এমন সহজ শাস্তি আমি কামনা করি না তাদের জন্য’......।

 

প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান তার কবিতায় এভাবেই জাতির সূর্যসন্তানদের হন্তারকদের শাস্তি কামনা করেছেন।

 

এমনি শোকের আবহ আর শক্তি নিয়ে বছর ঘুরে আবার এসেছে ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন, বেদনাবিধুর দিন।

 

১৯৭১ সালের এইদিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

 

স্বাধীনতাবিরোধী চক্র পরাজয় অনিবার্য জেনে সেদিন এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উপলব্ধি করেছিল, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশ আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বরেণ্য সব ব্যক্তিদের রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়।

 

১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়।

 

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের গলিত ও ক্ষতবিক্ষত লাশ খুঁজে পায়। প্রতিটি লাশে ছিল আঘাতের চিহ্ন। কারও কারও চোখ, হাত-পা বাঁধা। কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি। অনেককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ক্ষত-বিক্ষতের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের মৃতদেহও শনাক্ত করতে পারেননি।

 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গঠিত বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্ত এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব হয়নি। কারণ ফরমান আলীর টার্গেট ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে মেরে ফেলা। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।

 

বুধবার পুরো জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে সেইসব সূর্যসন্তানকে- যাদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা পেয়েছি স্বাধীন মানচিত্র। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। উড়বে শোকের প্রতীক কালো পতাকা। প্রতি বছরের মতো এবারও মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবী কৃতী সন্তানদের অবনত চিত্তে শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৬/এনআর/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়