ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দেশীয় শিল্পেই আমাদের টেকসই প্রবৃদ্ধি : মাতলুব আহমাদ

নিয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১৪ জুন ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশীয় শিল্পেই আমাদের টেকসই প্রবৃদ্ধি : মাতলুব আহমাদ

এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সঙ্গে কথা বলছেন নিয়াজ মাহমুদ

দেশের ‘মিনি পার্লামেন্ট’ নামে খ্যাত দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র (এফবিসিসিআই) নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। রাজশাহী চেম্বার থেকে মনোনীত হয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এফবিসিসিআইয়ের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের (২০১৫-১৭) মাধ্যমে তিনি সভাপতি হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি নিটল-নিলয় গ্রুপের তিনি চেয়ারম্যান।

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, প্রস্তাবিত বাজেট, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ও এফবিসিসিআইয়েরর নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি এই ব্যবসায়ী নেতা কথা বলেন রাইজিংবিডির সঙ্গে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির অর্থনৈতিক প্রতিবেদক নিয়াজ মাহমুদ। এই কথপোকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো :
 
রাইজিংবিডি : দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মাতলুব আহমাদ : অশান্ত পরিবেশের মধ্যেও আমরা (ব্যবসায়ীরা) ব্যবসা ধরে রেখেছি। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তিনি শক্তহাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলা করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দরকার শান্ত পরিবেশ। আর সেই কাঙ্খিত পরিবেশ এখন বজায় আছে। ইতিমধ্যেই সরকার একটি ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিয়েছেন।
 
রাইজিংবিডি : প্রস্তাবিত বাজেট কতটুকু ব্যবসাবান্ধব?
মাতলুব আহমাদ : ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটকে সরাসরি ব্যবসাবান্ধব বলা যায়। কারণ, অনেক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অনেক পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এসবের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এবার বাজেটে বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়বে। যা সবার জন্য লাভজনক।

রাইজিংবিডি : বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে আপনি মনে করনে?
মাতলুব আহমাদ : বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থ ব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারায় প্রতি বছরই বাজেট সংশোধন করতে হয়। বাজেট সংশোধনের কারনে আর্থিক  অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য বাজেট বাস্তবায়নে বছরের শুরু থেকেই মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

রাইজিংবিডি : সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এ সফরে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসব চুক্তি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কতটুকু প্রভাব ফেলবে ?  
মাতলুব আহমাদ : প্রটোকল স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে এদেশীয় ব্যবসায়ীরা ভারতের যেকোন স্থানে নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন। ব্যবসায়ীরা ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানেও যেতে পারবেন। এতে ব্যবসার নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এই সংযোগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশসহ এতদঅঞ্চল ব্যবসা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে শীর্ষ অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এছাড়াও বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত রয়েছে তা আরো বিকাশিত হবে।

রাইজিংবিডি : আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এফবিসিসিআইয়ের কোন উদ্যোগ আছে কি?
মাতলুব আহমাদ : আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। পবিত্র রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, সেগুলোসহ সব পণ্যের বিপুল মজুদ রয়েছে। ফলে এবার দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কতিপয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সমূহের আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছে এফবিসিসিআই। তাতে দেখা গেছে, প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি দেশের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে আছে।

এ ছাড়া প্রতিদিন দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতিও মনিটরিং করা হচ্ছে। এতে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই খুচরা বাজারেও এটি স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করছি। বেশি মুনাফার আশায় কাউকে পণ্যের মজুদ না করারও আহ্বান জানাচ্ছি। মুনাফাই জীবন নয়।

রাইজিংবিডি: এফবিসিসিআইয়ের সংস্কারে আপনার উদ্যোগগুলো কী কী?
মাতলুব আহমাদ: এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ২০০২ সালে অনশন করেছিলাম। এটা নিয়ে কাজ হওয়া দরকার। সে জন্য আমাদের নতুন পরিচালনা পর্ষদ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার সদস্য হবে ২৫ জন। সে কমিটিতে স্থান পাবেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতিসহ বর্তমান নেতৃত্ব। কমিটির নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।

রাইজিংবিডি : দেশীয় শিল্প বিকাশে কী ভূমিকা পালন করবেন?
মাতলুব আহমাদ : আমাদের দেশে শুধু পোশাক শিল্পকে সরকার সুযোগ-সুবিধা দেয়। তাই দেশের মোট রপ্তানীর ৮৫ শতাংশই দখল করে আছে এই খাত। দেশের অন্যান্য শিল্প যেমন- মটর সাইকেল, রেফ্রিজারেটর, আইটি খাতের পণ্য এখন বাংলাদেশী উদ্যোক্তারাই তৈরি করছেন। এসব দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। কারণ, দেশীয় শিল্পেই আমাদের প্রবৃদ্ধিকে করে টেকসই। দেশীয় শিল্প সহায়ক কার্যক্রম করতে চেষ্টা করবো।  

রাইজিংবিডি :  নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন?
মাতলুব আহমাদ : শিল্প ছাড়া বেকারত্ব দূর কর যাবে না। তাই এফবিসিসিআইর সহযোগিতায় জেলা পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের নিয়ে শিল্প গড়ে তুলতে চাই। এর ফলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি অর্থনীতির চাকাও মজবুত হবে। আর এসব শিল্প কী ভাবে গড়ে তোলা হবে এবং কে বা কারা শিল্প উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী, তাদের তালিকা করা হবে। এ জন্য এ বিষয়ে আলাদা একটি সার্ভে (জরিপ) টিম গঠন করা হবে। উদ্যোক্তাদের কিছু জমি আর টাকা থাকতে হবে। আমরা তাঁদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করব। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ করিয়ে দেব।

রাইজিংবিডি : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাতলুব আহমাদ : আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ রাইজিংবিডি পরিবারকে।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৫/নিয়াজ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়