ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ধাতব মুদ্রা পানিতে ভাসলেই টাকা (ভিডিওসহ)

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধাতব মুদ্রা পানিতে ভাসলেই টাকা (ভিডিওসহ)

আরিফ সাওন : ‘ধাতব মুদ্রা পানিতে ভাসলেই টাকা! লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা! কত নেবেন, কত নিতে পারবেন! রুম ভর্তি টাকা! যা নিতে পারবেন তুলে নিয়ে আসবেন! শুধু মূদ্রা পানিতে ভাসলেই হলো!’ এ ভাবেই একজনকে বলছিলেন ক্রেতার নিয়োগ করা কেমিস্ট।

 

জবাবে তিনি বলছিলেন, টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা হবে। প্রয়োজনে ইউরো নেব। বহনে সুবিধা হবে। এক বান্ডিলে অনেক টাকা হবে।

 

তখন কেমিস্ট বলছিলেন, আর একটা কাজ করতে পারেন। আমরা বিদেশি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে দেব। কার্ড দিয়ে টাকা তুলবেন। প্রয়োজনে এ দেশে নাই-বা থাকলেন। টাকা হলে কি আর দেশে থাকার দরকার আছে? ইতালি বা আমেরিকায় থাকবেন।

 

এই প্রতিবেদক মাত্র একবারই সেই কেমিস্টের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। পরে তাকে আর পাওয়া যায়নি। তিনি একজন ক্রেতার অধীনে ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন।

 

সেই কেমিস্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধাতব মুদ্রা বলতে বোঝায় কয়েন। এখন আমাদের দেশে এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন রয়েছে। এই কয়েন বিক্রি করা যায় না। বিক্রির জন্য কিছু বিশেষ কয়েন এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দরকার।

 

জানা যায়, ১৭১৭, ১৮১৮ ও ১৮৩৯ সালের কয়েন বিক্রি হয়। এতে বটগাছ, উস্তেলতা, জোড়া ডাব, খেজুরগাছ ও রানী মার্কা থাকে। কয়েন হতে পারে তামার বা রূপার। অবশ্যই সেই কয়েন হতে হবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং তাতে আরবি, ফার্সি বা উর্দু লেখা থাকলে চলবে না।

 

কেমিস্টের ভাষ্যমতে, এই ধরনের একেকটি কয়েনের দাম ৫ কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে দাম নির্ভর করে কয়েনটি পানিতে ছেড়ে দিলে ভাসে কি না তার ওপর। কোন কয়েন কত তাড়াতাড়ি ভাসলো আর কতক্ষণ ভেসে থাকলো তা দেখা হয়। যত কম সময়ে ভেসে উঠবে তত বেশি দাম হবে। পানিতে ভাসার পরীক্ষাও করা হয় বিশেষ কায়দায়।

 

এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে কাঁচের বোতল বা জার ব্যবহার করা চলে না। প্লাস্টিকের বোতল কেটে তাতে পানি ঢেলে সেই পানিতে কয়েনটি ছাড়া হয়। ২০ মিনিটের মধ্যে সেটি ভেসে উঠলে বুঝতে হবে এর কার্যকারিতা আছে। আর না ভাসলে কার্যকারিতা নেই। ২০ মিনিট সময়ের আগেও ভেসে উঠতে পারে। যদি কয়েনটি পিতল, কাসা বা লোহায় তৈরি কোন পাত্রে দীর্ঘদিন রক্ষিত থাকে তাহলে এর কার্যকারিতা লোপ পায় এবং তা ভেসে উঠে না।

 

এটা হলো প্রাথমিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় টিকে গেলে অর্থাৎ কয়েন পানিতে ভেসে উঠলে তার ছবি তুলে ক্রেতার কাছে পাঠানো হয়। সেখানে বাকি পরীক্ষা করা হয়। ওজনেরও একটা পরীক্ষা রয়েছে। এ ছাড়া কয়েনের ওপর চিনি রাখলে চিনি গলে যায় কিনা সেটাও লক্ষ্য করা হয়। আরও একটি বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা হয়। তা হলো, কয়েনটি চুম্বকের মতো ধান অথবা চালকে আকর্ষণ করতে পারে কিনা। কারণ, কয়েনটি আসল হলে এবং তার কাছে ধান বা চাল রাখা হলে সেই ধান বা চালকে চুম্বকের মত আরো কাছে টেনে নিয়ে আসার ক্ষমতা কয়েনটির থাকে।  

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেবল ১৮১৮ সালের কয়েনে যদি বটগাছ মার্কা থাকে তাহলে সেটা পানিতে না ভাসলেও বিক্রি করা যায়। এর দাম মেলে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা।

 

জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘এই কয়েন কি কাজে ব্যবহার করা হয় তা সঠিকভাবে জানা নেই। দামী কোন গহনা তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে।’

 

এই কয়েন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা যায়- এটা শুনে অবাক হন জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. পরিমল বালা। তিনি বলেন, ‘কয়েনের আসলে কোনো কার্যকারিতা আছে কিনা তা আমার জানা নেই।’

 

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, লাভবান হওয়ার আশায় অনেকে নকল কয়েন বানিয়ে বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন। কয়েন যাতে পানিতে ভাসে তার জন্য অনেকে স্বর্ণকারের স্মরণাপন্ন হন। সেখানে নকল কয়েন বিশেষভাবে কেটে ভেতরে খোল বানানো হয়। এই খোলের মধ্যে শোলা বা কর্ক জাতীয় বস্তু ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে কয়েন পানিতে ভেসে থাকে। তবে এই প্রক্রিয়ায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, ক্রেতা নিজে বা তাদের কেমিস্টরা কয়েনের ওজনও মেপে দেখেন। খোল বানালে কয়েনের ওজন কমে যায়।

 

কয়েনের সন্ধানে ঘোরা এক ব্যক্তি সম্প্রতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি একটি কয়েন দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি আসল নয়। এখন পর্যন্ত আসল কয়েন তিনি পাননি। তিনি বলেন, ‘যার কাছে কয়েন দেখতে গিয়েছিলেন সেই ব্যক্তি এর পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু আসল কয়েন তিনিও পাননি। শুধুই টাকাই ঢেলেছেন।’

 

উল্লেখ্য, আসল কয়েন পাওয়া না গেলেও রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদক নকল কয়েনের ছবি সংগ্রহ করেছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কেবল রাজধানী ঢাকায় নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এ ধরনের কয়েন বেচাকেনার চক্র আছে। অনেকেই কয়েন বেচাকেনায় সর্বশান্ত হয়েছেন। একটি আসল কয়েন পাওয়া যায় কিনা- সেই আশায় এর পেছনে ঘুরে ঘুরে অনেক সময় নষ্ট করেছেন। এক পর্যায়ে অনেকে কর্মঅক্ষম হয়ে পড়েছেন। অনেকের মস্তিস্ক বিকৃতির মত অবস্থা হয়েছে। তারপরও তারা নেশাগ্রস্তের মতো একটি ‘আসল কয়েন’ সংগ্রহের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। 

 

কয়েনের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো অপর একজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একটা কয়েনের দাম ৫০০ কোটি টাকা! যদি খুঁজে পাই তাহলে তো এক দানেই এতো টাকার মালিক বনে যাব।’

 

সেই কয়েন যদি শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে না পারেন তাহলে কী করবেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিনিস থাকলে ক্রেতার অভাব হয় না। খুঁজে পেলে অবশ্যই ক্রেতাও পাব, বিক্রিও করতে পারব, রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাব।’


 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়