ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ননী-তাহেরের ফাঁসির আদেশ

মেহেদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ননী-তাহেরের ফাঁসির আদেশ

আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

 

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

 

বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।

 

রায়ে ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগ গণহত্যার দায়ে ননী ও তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১ ও ২ নম্বর অভিযোগে তাদেরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।

 

রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর মো. হায়দার আলী, প্রসিকিউটর জেয়াদ আলম মালুম, তুরিন আফরোজ, মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী, তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান ও সিনিয়র কর্মকর্তা সানাউল হক উপস্থিত ছিলেন।

 

ননী-তাহেরের পক্ষে ছিলেন আবদুস সোবাহান তরফদার ও গাজী এম এইচ  তামিম। এ ছাড়া দুই আসামির আত্মীয়স্বজনও উপস্থিত ছিলেন।

 

এর আগে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতিরা। মোট ২৬৮ পৃষ্ঠায় লেখা রায়ের সংক্ষিপ্তাংশ পাঠ করা হয়। রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী। দ্বিতীয়াংশ পাঠ করেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ননী-তাহেরকে পুলিশি প্রহরায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। তার আগে গতকাল ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

 

গত ১০ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন।

 

২০১৩ সালের ৬ জুন এ দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা। এক বছর ৪ মাস ২৮ দিন তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর দেওয়া হয় তদন্ত প্রতিবেদন।

 

প্রসিকিউশন এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

এরপর গত বছর ২ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুই আসামির যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।

 

আসামি রাজাকার ওবায়দুল হক তাহেরের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়ায় ও আতাউর রহমান ননীর বাড়ি কেন্দুয়া এলাকায়। 

 

তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়। তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকা চারটি অভিযোগ থেকে দুটি বাড়িয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) ছয়টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ওই ছয়টি অভিযোগকেই আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করা হয়।

 

প্রথম অভিযোগ :

১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার বাউশী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। পরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী সেতুতে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

 

দ্বিতীয় অভিযোগ :

একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সামনে থেকে ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে।

 

তৃতীয় অভিযোগ :

১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 

চতুর্থ অভিযোগ :

ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী মিলে মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করেন। পরে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেন।

 

পঞ্চম অভিযোগ :

১৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ছয়জনকে অপহরণ করে লক্ষ্মীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।

 

ষষ্ঠ অভিযোগ :

ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী চন্দ্রনাথ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/মেহেদী/রুহুল / এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়