ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নার্সারিতে বদলে গেছে ইদ্রিস আলীর জীবন

ফয়সাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১৩ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নার্সারিতে বদলে গেছে ইদ্রিস আলীর জীবন

নার্সারিতে ইদ্রিস আলী

ফয়সাল আহমেদ, ঝিনাইদহ : নার্সারি করে ইদ্রিস আলী এখন স্বাবলম্বী। ২৫ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা বিশাল আকারের নার্সারিতে রয়েছে দেড় লাখ গাছের সমাহার। স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছেন। অথচ শুরুতে তার জীবন মোটেই এমন ছিল না।

তার শুরুটা এ রকম- মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের হোসেন আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে ইদ্রিস আলী আর্টের কাজ শুরু করেন। প্রথমেই তিনি ঢাকার সাভারে খালাতো ভাই আজম আর্টের দোকানে কাজ শুরু করেন। তারপর যশোর, ঈশ্বরদী মিলিটারি ফার্মে কাজ করেন। ৫ বছর কাজ করেন তিনি। সেখান থেকে টাকা জমিয়ে তিনি পাড়ি  জমান সৌদি আরবে। সেখানেও আর্ট ও শোভা বর্ধনের কাজ করতেন। দীর্ঘ ১২ বছর সৌদি আরবের খামিজ মোসাইদ শহরের আবু আতাব কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। চাকরিতে যে বেতন পেয়েছিলেন তা দিয়ে সংসার চালানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন নি তিনি।

বিদেশে চাকরির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে  ৩ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন ইদ্রিস আলী। ‘গাছ মাছ ঘাস-সবে মিলে করি চাষ, গরু যদি থাকে পাশে দুধে-মাছে বার মাস’ এ শ্লোগানে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন নার্সারি। মেহগনি, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন শুরু করেন। চারা একটু বড় করে জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা।

৫ বিঘা থেকে বর্তমানে ২৫ বিঘা জমিতে নার্সারি করেছেন তিনি। ১০/১২ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। নার্সারি করে জমি কিনে বাড়ী করেছেন। সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। নার্সারির পাশাপাশি তার রয়েছে ৩ টি পুকুরে মাছ চাষ, গরু পালন ও নেপিয়ার ঘাস চাষ।

প্রথমে ফলদ ও বনজ মিলিয়ে ১০ হাজার চারার বীজ রোপণ করেন। চারাগুলো বড় হলে ভ্যানে করে ৯ হাজার চারা হাটগোপালপুর, মধুপুর, গোয়াপাড়াসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে ৫০ হাজার টাকা লাভ করেন।

পরের বছর ১৫ বিঘা জমিতে গাছের বীজ রোপন করে তা বড় করে বিক্রি করেন। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার নার্সারির পরিধি। সে এখন ২৫ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকারের নার্সারি। নার্সারি করে সে এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে নার্সারিতে গাছের সংখ্যা দেড় লাখ। তার নার্সারিতে প্রতিদিন ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন।

ইদ্রিস আলী বলেন, ‘নার্সারি আমাকে শুধু স্বাবলম্বী করেনি, আমার আর্থসামাজিক অবস্থারও ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটিয়েছে। বর্তমানে আমার কোনো অভাব নাই। অনেক পরিশ্রম ও জীবনের সাথে সংগ্রাম করে আজ আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। পাশাপাশি আমার দেখাদেখি এ এলাকার আরো অনেকেই নার্সারি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে, হয়েছে স্বাবলম্বী। আমি ৭ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। যা বিক্রি করেও আমার আয় হচ্ছে প্রতিদিন।’

তিনি বলেন, ‘আমার এই নার্সারি আরও বৃহত্তর পরিসরে করার মানসিকতা রয়েছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথবা কোন ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেলে নার্সারি বড় করতে পারতাম। সেই সঙ্গে এ এলাকার অনেক বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতাম।’

 


রাইজিংবিডি/ঝিনাইদহ/১৩ জুলাই ২০১৫/ফয়সাল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়