ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছাত্রলীগের এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করছে

রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৫ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছাত্রলীগের এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র মুক্তাদির শাওনের ওপর বর্বর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করছে।

চুয়েট ছাত্রলীগের নাহিদ পারভেজ গ্রুপ শাওনকে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী দাবি করে, তার ওপর হামলার জন্য ছাত্রলীগের ইমাম বাকের গ্রুপকে দায়ী করেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইমাম বাকের গ্রুপ।

নাহিদ পারভেজ জানান, যে ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে শাওনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। সেই স্ট্যাটাসের জন্য শাওন আগেই ক্ষমা চেয়েছেন। টাইমলাইন থেকে সেই স্ট্যাটাস মুছেও দিয়েছে। তারপরও তার ওপর এমন বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

নাহিদ পারভেজ জানান, মুক্তাদির শাওন ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপরপক্ষের ছাত্রলীগের ৮-১০ জন শাওনকে কুদরত-ই-খুদা হলের ৩৬৪ নং কক্ষ থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে একটি সিএনজি চালিত ট্যাক্সিতে করে চুয়েটের পাশে অবস্থিত ইমাম গাজ্জালি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। কেটে দেওয়া হয় তার জিহ্বাও। ভেঙে দেওয়া হয়েছে শরীরের অসংখ্য হাড়। উপড়ে ফেলা হয়েছে হাতের নখ। বর্বর আঘাতে থেতলে দেওয়া হয়েছে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।

তিনি আরো জানান, নির্যাতনের দীর্ঘ সময় পর তার সহপাঠীরা খবর পেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শাওনকে উদ্ধার করে প্রথমে চুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন।  পরে আহত অবস্থায় রাত ৯ টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। ঢাকায় নিয়ে প্রথমে তাকে এপোলো হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

তবে শাওনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগের অপর পক্ষের নেতা ইমাম বাকের। শাওনের ওপর নির্যাতনের সঙ্গে তার গ্রুপের কেউ জড়িত নয় বলেও দাবি করেন ইমাম বাকের।

এদিকে শাওনের সহপাঠী আনজামুল হক আনন্দ জানান, কয়েকদিন পরেই শাওনের নামের পাশে ইঞ্জিনিয়ার কথাটা লেখা হতো। নির্মম নির্যাতনে শাওন এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

আনন্দ বলেন, গত ২০ দিন ধরে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় শাওনের চিকিৎসায় চার লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। চুয়েটের শিক্ষার্থীরা যে যার সাধ্যমত সহায়তা করছে। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য আরো অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই আমরা সবার কাছে শাওনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছি। শাওনের চিকিৎসার সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে একটি ইভেন্টও খোলা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাগ ডে পালনের জন্য যে টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল সেই টাকাও শাওনের চিকিৎসায় ব্যয় করা হচ্ছে।

চুয়েটের সহকারী ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মশিউল ইসলাম বলেন, শাওনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সামসুল আরেফিনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনার কারণে শিক্ষা সমাপনী উৎসবও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব শুরু হওয়ার কথা ছিল।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ এবং নির্মাম নির্যাতনের শিকার হন চুয়েট কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মুক্তাদির শাওন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর হামলার শিকার হবার পর গত ২০ দিন ধরে শাওন অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও পরে ঢাকার অ্যাপোলোতে এবং সর্বশেষ ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয় তাকে। এদিকে তাকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন করেছে তার সহপাঠীরা।





রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৫ অক্টোবর ২০১৬/রেজাউল/রুহুল  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়