ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নূর আলী লেডিস টেইলার্স || বিশ্বজিৎ চৌধুরী

বিশ্বজিৎ চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১০ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নূর আলী লেডিস টেইলার্স || বিশ্বজিৎ চৌধুরী

বিশ্বজিৎ চৌধুরী

নূর আলী মাস্টারের একটা গল্প আছে। ফেলে আসা জীবনের গল্প। গল্পটা এখানে কেউ জানে না। জানতো একজন, তার সাগরেদ রতন। গ্রাম থেকে যাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল নূর আলী। সে এখন নেই, গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছে। এই দূরের শহরে একলা একা পড়ে থেকে রাতদিন ঘাড় গুঁজে কাজ করে কিছু টাকার মুখ দেখার চেয়ে গ্রামের জায়গা জমি চাষবাসের কাজে লেগে থেকে বাপ-মা, বউ-ছেলে মুখ দেখার সুখ অনেক বেশি বলে তার ধারণা।

`দুনিয়াদারি কয়দিনের চাচা, টাকা-পয়সা দিয়ে কি সুখের হিসেব হয়? টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে বয়স চলে যাবে, তখন দেখবে এদিক ওদিক দুইই নাই...।’
সাগরেদের মুখে এমন মারফতি কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল মাস্টার। এই ছেলেকে যখন সে শহরে নিয়ে এসেছিল দু’বেলা দানাপানি ছিল না পেটে। পাছার কাছে তালি মারা একটা ইজের আর আধময়লা ছেঁড়া গেঞ্জি, নাকের সিকনি চাটতো জিহ্বা দিয়ে।
`আপন চেয়ে পর ভালো তোর পরের চেয়ে বন’- এ ধরনের এক দর্শনসমৃদ্ধ কাব্যবোধের অনুপ্রেরণায় এই ছেলেকে মানুষ করার দায়িত্ব নিতে চেয়েছিল নূর আলী মাস্টার। নিজের জীবন ও জীবিকার অংশীদার করে গড়ে তোলার জন্যে তাকে তালিম দিচ্ছিল সে সেলাইয়ের কাজে। মাস্টারের স্বপ্ন ছিল নূর আলী টেইলার্সে একদিন চারটি মেশিন, আটটি টিউববাতি, দুটি ট্রায়ালরুম ও অন্তত ছয়জন কর্মচারী রাতদিন কাজ করবে। দোকানের দেখাশোনার ভার থাকবে রতনের ওপর, যাকে বলে ম্যানেজার। মাস্টারের তখন বিশ্রাম, ফজর নামাজের পর আবার একটা ঘুম, আর বিকেলে ফুরফুরে পাঞ্জাবি চাপিয়ে নদীর তীরে হাওয়া খাওয়া। সেই স্বপ্নপূরণ আর হলো না। হতকুচ্ছিত হাঁসের ছানাটি রাজহংস বনে গেলো হঠাৎ। উল্টো ওস্তাদকেই একটা লেকচার ঝেড়ে দিয়ে নগদ কিছু পয়সাপাতি নিয়ে স্টিমারে চেপে ফিরে গেলো গ্রামে। এখন এই বয়সে উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয় নূর আলীকে। উপার্জন তার মন্দ নয়। এমনকি একা মানুষের পক্ষে বেশ কিছুটা বেশিই বটে, অন্তত যে জীবনযাত্রার সঙ্গে সে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তার তুলনায়।

দেশের বাড়ির সঙ্গে একমাত্র যোগসূত্র ছিল ছেলেটা। এখন সেই সুতোটাই ছিঁড়ে গেছে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস চেপে নূর আলী ভাবে, ভালো হলো। এখন এখানে তার কোনো সর্বজনজ্ঞাত অতীত নেই। তার পেছনে ফেলে আসা গল্পটি সে নিজে মনে করতে না চাইলে, এমন আর কেউ এখানে নেই যে, সলতে উস্কে দেবে। গল্পটা আর কখনওই দশ কান হওয়ার  আশঙ্কা থাকলো না। কাটা ঘা দেখলেই যাদের নুনের ছিটা দিতে ইচ্ছা করে, বড়ো ক্ষতি হয়ে গেলো তাদের। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ঘটনাটি মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না নূর আলী নিজেই। গত পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর ধরে কোনো না কোনোভাবে খুঁচিয়ে সে নিজেই শুকোতে দেয়নি গোপন ক্ষতটি।

যথার্থ যৌবনের নূর আলীর বিয়ের দিন-তারিখ ধার্য হয়েছিল পারিবারিকভাবে। গ্রামেরই এক শ্যামাঙ্গী কিশোরীকে তার জন্য নির্বাচন করেছিল তার বিধবা মা ও ভাই-ভাবী। ভাবি স্ত্রী হিসেবে সাধারণ নারীর পরিবর্তে যে ধরনের পরীর চেহারা অবিবাহিত তরুণের চোখে ভাসে, স্বাভাবিকভাবেই সে ধরনের মেয়ে ছিল না এই কিশোরী। কিন্তু তাতে আর দশ জনের মতোই তারও স্বপ্নভঙ্গ হয়নি বিশেষ। পরীরা তো ঘরে আসে না, মনেই আসে শুধু, এই বাস্তবতার বোধ অন্য দশজনের মতো নূর আলীরও ছিল। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটেছে অন্য জায়গায়। বিয়ের মাত্র দু’দিন আগে মেয়েটি হঠাৎ দু’সন্তানের জনক নূর আলীর জ্যেষ্ঠ সহোদরের সঙ্গে পালিয়ে যায়।
এ ধরনের ঘটনায় গ্রামে যতোটা হৈ চৈ হওয়া উচিত তা-ই হলো এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে এ নিয়ে হাজার গল্পের রেশ শেষ হয়ে এলে গ্রাম্য মুরুব্বিরা দুই পলাতককে ধরে এনে কলেমা পড়িয়ে অসামাজিকতার দায় থেকে মুক্ত করলো। মেয়েটি পরমানন্দে হেসে খেলে ঢুকে পড়লো সতীনের ঘরে।

নূর আলী গ্রামের স্কুলে ক্লাশ এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে মাত্র। তাই তার ক্ষুদ্র জ্ঞানবুদ্ধিতে এ মেয়েটির আচরণ কিংবা পুরো ঘটনাটির কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পায়নি কোনোদিন। নূর আলীর জন্য গ্রামে মেয়ের অভাব ছিল না মোটেই। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতা তাকে হতবিহ্বল করেছে, ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। পুরোপুরি শিক্ষিত না হলেও তার মধ্যে শিক্ষাজনোচিত যে লক্ষণটি শেষ পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে, তা হচ্ছে এক ধরনের ঔদাসীন্য ও নির্লিপ্তি। কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা টু শব্দটি পর্যন্ত না করে নূর আলী গ্রাম ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গ্রামের বাজারে তার যে সেলাইয়ের দোকানটি সবে জমে উঠতে শুরু করেছিল, তার পাট তুলে দিয়ে শহরে রওয়ানা দিয়েছিল সে। বৃদ্ধা মায়ের নীরব ক্রন্দন ছাড়া অন্য কোনো পিছুটান ছিল না নূর আলী মাস্টারের। পুরো ঘটনাটি বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেয়া ও নীরব প্রস্থানের উদ্যোগ গ্রামবাসীর মধ্যে তার প্রতি এক সমীহের ভাব জাগিয়ে তুলেছিল। এটি খুবই উপভোগ করেছে সে। মানুষের চোখে একটু উঁচুতে স্থান পাওয়া সাধারণ একজন নূর আলীর জন্যে অনেক বড় ব্যাপার, তাই বিদায়ের সময় দুঃখবোধের পাশে তার মনে স্থান করে নিয়েছিল কিছুটা আত্মপ্রসাদও।

২.
জীবিকার সন্ধানে গ্রাম থেকে আসা মানুষের জন্য শহরের পথে কখনওই কুসুম বিছানো থাকে না। কিন্তু স্বল্প পুঁজি, অল্প কিছুটা দক্ষতা ও তার অদম্য কর্মনিষ্ঠার কারণে টিকে গিয়েছিল সে। অবশ্য টিকে যাওয়ার কথাটি যতো সহজে বলা হলো, ততো সহজে হয়নি; হলে নূর আলী জীবনের সেরা সময়গুলোর দিকে আর একটু মনোযোগ দিতে পারতো। কিন্তু নূর আলী লেডিস টেইলার্স প্রোঃ নূর আলী মাস্টার লেখা সাইনবোর্ডের ছোট সেলাই দোকানটাকে সোজা করে তুলতে জীবন থেকে পঁচিশ-ছাব্বিশটি বছর কোন ফাঁকে চুরি গেছে খেয়ালই করতে পারেনি সে। এখন পেছনে ফিরে তাকালে মাঝে মাঝে বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে। কেবল দোকানের উপচেপড়া খদ্দেরের ভিড় নূর আলীর স্মৃতি-বেদনার ওপরে খানিক প্রলেপের কাজ করে। তদুপরি অনেকের অগোচরে মাস্টারের নগদ সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা।

নূর আলী টেইলার্স কি করে নূর আলী লেডিস টেইলার্সে রূপান্তরিত হলো তার একটি সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত আছে। প্রথম যখন এখানে এসে দোকাটি শুরু করেছিল, এই শহরতলী অঞ্চলটাতে এতো মানুষ ছিল না তখন। নূর আলীর খদ্দের ছিল বন্দর এলাকার নিন্মবিত্ত বা বিত্তহীন কিছু মানুষ। তারা কখনো লুঙ্গি সেলাই করতে, শার্ট রিপু বা প্যান্ট অল্টারের জন্য আসতো তার কাছে। এতে কোনোদিন তার দু’বেলা খেয়ে চলার মতো জুটতো, কোনোদিন একবেলার। কিন্তু বছর কয়েক যেতে না যেতেই হঠাৎ করে যেন মাটি ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে গেলো এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের নামি দামি কারখানাগুলো। ব্যস্, আর যাবে কোথায়। সেই প্রায় জনবিরল এ এলাকায় এখন দিনে-রাতে শয়ে হাজারে মানুষ পিল পিল করে। সকালে অফিসে কারখানায় আসছে দলে দলে নারী-পুরুষ, বিকেলে ফিরে যাচ্ছে দলে দলে। অল্প কয়েকদিনে গজিয়ে গেলো মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, এমনকি অডিও-ভিডিও ক্যাসেটের দোকান পর্যন্ত।
এখানে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, বৈদ্যুতিক বাল্বের ইন্ডাস্ট্রিতে যে মেয়ে-শ্রমিকরা কাজ করতে আসে প্রতিদিন, তাদের একটি অংশ নিয়মিত খরিদ্দার হয়ে গেলো নূর আলীর। বলা যায় তখন থেকেই ভাগ্যবদলের শুরু। একা মানুষ সামাল দিতে পারছিল না। একসময় তার মনে হলো অহেতুক বাড়তি ঝামেলায় না গিয়ে শুধু মেয়েদের জামাকাপড় সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে গেলে হয়। বিশেষত তার নিজেরই যখন লুঙ্গিতে মেশিনের টান দেওয়ার চেয়ে কাঁচুলি সেলাইয়ের দিকে আগ্রহটা বেশি। সেই থেকে নূর আলী লেডিস...।


শুধু সেলাই না, মেয়েদের পছন্দ বুঝে কম দামি সালোয়ার-কামিজ, সায়া-ব্লাউজের কাপড়ও রেখেছে।
নূর আলীর সঙ্গে মেয়েগুলোর ভাব-রসিকতার সম্পর্কও বেশ। কেউ ডাকে, রঙিলা চাচা। কেউ বা দু’পয়সা কম গছাতে না পেরে ডাকে, হুঁশের পাগল। তবে সব সময় হুঁশের পাগল হয়ে বসে থাকে না নূর আলী। মন-দিল্ ভালো থাকলো চা-টা খাওয়ায় কাউকে কাউকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে আবার একটু ছেনালি টাইপের। কারখানার কোনো পুরুষ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এসে ঢলাঢলি করে জামা-কাপড় বানিয়ে দেবার আবদার জানায়। গরিবের মেয়েতো, সব সময় দু’পয়সা লাভের চিন্তা। সবাই অবশ্য একরকম নয়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, তার বেশি বয়সের কারণেই তার সঙ্গে ছুকড়িগুলো বোধ হয় একটু বেশি রসিকতার সাহস পায়। যেমন কেউ একজন হয়তো একটু চোখ টিপে তার চোখের ওপর কোমরটা দুলিয়ে বললো, মাপটা এবার শরীর থেকে নাও না রঙিলা চাচা। আরেকজন হয়তো মাপের জন্য যে পুরোনো ব্লাউজটা নিয়ে এসেছে সেটা নিজের বুকের ওপর চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে, এই মাপটা কেমন চাচা?

নূর আলীর অসুবিধা হয়, সত্যি কথা বলতে কি, এ ধরনের রসিকতায় তার রীতিমত অসুবিধা হয়। পানির পিপাসা পায় ঘন ঘন। রাতে একা বিছানায় এই মাপগুলো যেন চোখের ওপর ভাসে। নিস্ফল আবেগে এই বয়সেও ছটফট করে সে। কিন্তু অভিজ্ঞ নূর আলী মাস্টার জানে, ব্যবসার কাজে সতর্ক না থাকলে চলে না। এরা নিজেরা করবে রঙ্গ-রসিকতা, আবার নিজেরাই হয়তো দুনিয়ার বদনাম ছড়িয়ে ব্যবসার বারোটা বাজাবে। এমনকি এখানকার মাস্তান ছেলে-ছোকড়ার সঙ্গে হাঙ্গামাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে। এদের সঙ্গেই তো হোটেল সিনেমায় যাওয়ার সম্পর্ক মেয়েগুলোর। অতএব নূর আলীর যতো শারীরিক সমস্যাই হোক, সে এসবের মধ্যে নেই।
তুমি ঘরসংসার কেন করলে না চাচা? কেউ কেউ জানতে চায়।
নূর আলী তখন তার দীর্ঘশ্বাস চাপা দেয় নিজস্ব কৌশলে। পেছনের জীবনের গল্পটা মনে পড়ে যায় তার। কিন্তু কিছুতেই ধরা দেয় না। বরং ঘরসংসারের প্রতি তার অনীহার কথা প্রমাণের জন্য বানিয়ে বৈরাগ্যের একটা সুর ফোটায় কণ্ঠে।
কিন্তু এতোসব করেও শেষ রক্ষা হয় না। কেননা নূর আলীর জীবনে সম্ভবত আরো একটি গল্প ছিল নিয়তি-নির্ধারিত। জীবনতৃষ্ণা ও উপভোগের আকাঙ্ক্ষার ওপর যে প্রলেপটুকু চিরস্থায়ী মনে করেছিল সে, যথার্থ উত্তাপে তা গলে যায় মোমের মতো। ঠিক যে তন্ত্রীতে প্রকৃত স্পর্শ পেলে সুর জেগে ওঠে যন্ত্র থেকে, সেই স্পর্শ সুপ্ত বাসনাকে স্পষ্ট করে তোলে তার। আর এখান থেকেই শুরু হলো নূর আলী মাস্টারের জীবনে এক নতুন গল্প।

৩.
অশ্রুরানী নামের এক হিন্দু মেয়ে মাস্টারের রান্না ও বাসন-কোসন মাজার কাজ করে দিয়ে যায় বেশ কিছুদিন ধরে। এটা তার খণ্ডকালীন চাকরি। আসলে সে কাজ করে ইপিজেড এলাকার এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। অন্য খরিদ্দারদের মতো সে-ও দোকানে আসতো কমদামি জামা-কাপড় সেলাইয়ের জন্য। এভাবে ঘনিষ্ঠতা মাস্টারের সঙ্গে। মেয়েটি বড়ো হয়েছে এক অনাথ আশ্রমে। দূরসম্পর্কের এক মাসি ছাড়া আর কেউ নেই। এখন এখানে ফ্যাক্টরির হোস্টেলে থেকে কম বেতনের চাকরি করে।
নূর আলীর দোকানঘরের পেছনেই তার বেডরুম কাম রান্নাঘর। রান্নাবান্না করতো সে নিজের হাতে। অশ্রুরানী নিজেরই একদিন তার রান্না ও বাসন-কোসন মেজে দেয়ার প্রস্তাব করে বলেছিল, দুপুরে শুধু একবেলা খাবার দেবে, টাকা পয়সা লাগবে না।

নূর আলী অবাক হয়ে বলেছিল, তুমি হিন্দু মেয়ে, আমার ঘরে খাবে প্রতিদিন? তা ছাড়া... আমি আবার গরুর গোশত একটু বেশি খাই... বলে এমনভাবে মুখ নামিয়েছিলো, যেন গরুর গোশত খাওয়া তার পক্ষেও কোনো গর্হিত কাজ।
অশ্রুরানী দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেছে, আমার অসুবিধা হয় না। তাছাড়া আমার তো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই, আমার হিন্দুই কী মুসলমানই কী।
ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সামাজিকতার সম্পর্ক না থাকলে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের বাছ-বিচার খুব একটা গুরুত্ব পায় না, এ তথ্যটা নূর আলীর জানা ছিল না আগে। সে শুনে খুশি হয়েছিল।
সেই থেকে রান্নার স্বাদ বদল হয়েছে, নূর আলীর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা হয়ে উঠেছে বেশ তৃপ্তিকর। তো, এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিনকাল। এর চেয়ে বেশি ভালো আর কীইবা আশা করতে পারে সে এ বয়সে। কিন্তু মাস্টারের জীবনের আর একটি নিয়তি-নির্দিষ্ট অধ্যায় বাকি ছিল বলেই হয়তো একদিন অশ্রুরানীর দূরসম্পর্কের মাসতুতো ভাই নেপাল এসে তাকে প্রায় আপাদমস্তক চমকে দিয়ে বলেছিলো, আপনি অশ্রুকে বিয়ে করেন দাদা, তার তো কেউ নাই, আপনিও একা মানুষ...।

এমন একটি অকল্পনীয় প্রস্তাবের ধাক্কায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে নূর আলী। তার মতো ষাটোর্ধ প্রৌঢ়ের জন্য এর চেয়ে আশ্চর্যের প্রস্তাব আর কি হতে পারে! বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথাই জোগায় না তার মুখে। তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে নেপালকে পাল্টা প্রশ্ন করে, এটা কী করে সম্ভব? কোথায় তার বয়স, কোথায় আমার... তা ছাড়া তোমরা হিন্দু।
কেন দাদা, বেশি আর কম বয়সের বিয়ে এর আগে আর কখনো হয় নাই? আপনি যদি রাজি থাকেন সম্পূর্ণ ইসলামী ধর্মমতে বিয়ে হবে, অশ্রু রাজি আছে, আপনাকে সে খুব পছন্দ করে।
এই শেষের কথাটা নূর আলীকে প্রায় দুলিয়ে দেয়। হ্যাঁ, জাতধর্মের ব্যাপারে অশ্রুর বিশেষ সমস্যা নেই বটে। তবু এই বয়সে... আবার নতুন করে... মাস্টার প্রায় ডুবন্ত মানুষের মতো তাকায় নেপালের দিকে; নেপাল হাত ধরে ডাঙায় তোলে তাকে, এতো ভাবাভাবির কী আছে দাদা, জীবনতো একটাই।
পায়ের নিচে মাটি পেয়ে যেন মাস্টার নির্দ্ধিধ কণ্ঠে বলে ওঠে, ঠিক আছে ভাই, আমি রাজি, দিনতারিখ ঠিক কর।

হাতে এক সপ্তাহ সময় রেখে নূর আলীর বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হলো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণকালে অশ্রুরানীর একটি নতুন নাম ঠিক করতে হবে। মাস্টারের নিজের আবার অশ্রুরানী নামটি বেশ পছন্দ। কখনও অশ্রু, কখনও রানী- দু’নামেই ডাকে সে। ভবিষ্যতেও এ দুই নামেই ডাকার ইচ্ছা তার। শুধু পোশাকি একটা নতুন নাম দিলেই চলবে।
নূর আলী দেহ-মনে নদীভাঙনের পানি ঢুকে পড়ে। অদ্ভূত অনুভূতি হয় তার। অশ্রুরানীকে ঘরের কাজের সময় আড়াল-আবডাল থেকে অনেকবারই লক্ষ্য করেছে সে। বয়সটা কম হলেও বাড়ন্ত শরীর, খেটে খাওয়া মেয়েদের যা হয়। এখানকার আর অন্য দশটি মেয়ের মতো অশ্রুরানীর শরীরের মাপও দর্জি নূর আলীর চোখে ভেসেছে অনিদ্র রাতে। অদ্ভূত এক প্রস্তুতিতে টানটান হয়ে ওঠে সে।

ইতিমধ্যে খবরটা চাউর হয়ে যায়। ঢাকের শব্দ খাটের নিচে থাকে না আর। ইপিজেড এলাকার ফ্যাক্টরির মেয়েরা নানান রঙ্গ-রসিকতা শুরু করে দেয় এ খবর শুনে। তুমি তো এখন আর চাচা না, দুলাভাই-এই বলে শ্রাব্য-অশ্রাব্য রসিকতা করে বেশরম মেয়েগুলো। তবে সবচেয়ে অশ্লীল মনে হয় তার পাশের দোকানদার আমানুল্লার উক্তি। চোরের মতো হেসে বলেছিল, খবরটা শুনলাম মিয়া, শোভানাল্লাহ, জিনিসটা পেয়েছো জবর...।
মানুষকে ‘জিনিস’ বলা, বিশেষত যে কিনা তার স্ত্রী হতে যাচ্ছে, খুবই অশিক্ষিতসুলভ আচরণ বলে মনে হয় ক্লাশ এইট পাশ নূর আলীর। কিন্তু কথাটা সে হজম করে এবং ভদ্রতা করে হাসে। এ রকম কিছু মানুষ সবসময়েই দেখা যায়, অন্তত নূর আলী অনেক দেখেছে। নাদুস-নুদুস একটি গরু দেখলে এর কয় মণ মাংস হবে, স্বাদ কেমন হবে, তা নিয়ে ভাবে এ ধরনের মানুষগুলো। সবকিছুকেই ভোগ্যপণ্য কিংবা দ্রব্যমূল্যে যাচাই করার একটা প্রবণতা। উচ্চশিক্ষাবঞ্চিত হয়েও নূর আলী এভাবে অভ্যস্ত নয়, অন্তত নারী তার কাছে ‘জিনিস’ নয় কিছুতেই।
এর মধ্যে বিয়ের আয়োজনসংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনার জন্য নেপাল তার কাছে যাওয়া-আসা করে নিয়মিত। এ মাসতুতো সম্মন্দিটিকে নূর আলীরও বেশ পছন্দ। তার ব্যস্ততার দিকটা বিবেচনা করে নিজেই অনেক কাজ গুছিয়ে এনেছে নেপাল।

সকালে অশ্রুরানী ঘরের কাজকর্ম করে দিয়ে যায় নিয়মিত। ইদানিং তার চোখের সামনে বেশি পড়তে চায় না মাস্টার। তাকে দেখলেই কেমন বুকের ভেতর গুড়গুড় শব্দ শুনতে পায় সে। এখন দোকানের পেছন দিকের ঘরটা, যেটা নূর আলীর বেডরুম কাম কিচেন, তার একটা চাবি সে দিয়ে রেখেছে অশ্রুকে। কদিন পরে এই ঘরের অংশীদার সেও হবে, এ বিচেনায়।
বিয়ের ঠিক দিন দুয়েক আগে নূর আলীর মনে হলো একবার মূল শহর থেকে ঘুরে আসা দরকার। কিছু কেনাকাটা, দেশি যে কয়েকজন মানুষ সেখানে, তাদের সাথে একটু যোগাযোগ, এসব টুকিটাকি কাজ সেরে নেওয়াটা জরুরি। লাভ-লোকসানের কথা সব সময় ভাবলে চলে না, তাই একদিন দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল সে।
সকালে অশ্রুরানীকে সে জানিয়ে দিল একটা দিন সে এখানে থাকবে না। জরুরি প্রয়োজনের কথাটাও জানাল। সে যেন এ দিকটা একটু দেখে-শুনে রাখে। অশ্রুরানী মুখে কিছু বলে না, শুধু মাথা নামিয়ে তার কথায় সায় দেয়। বড়ো ভালো লাগে মাস্টারের।

পুলকিত মনে বিকেলের দিকে টাউন সার্ভিসের বাসে চাপলো নূর আলী। অন্যবারের মতো ব্যবসার কাজে হুড়োহুড়ি করে যাওয়া তো নয়। একটু সেজেগুজে, গায়ে সুগন্ধ মেখে, পান চিবুতে চিবুতে বাস স্টপেজে এলে পরিচিত লোকজন তাকায় সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে, কি মিয়া, শহরে যাও? খুব খোশবু মেখেছো গায়ে...।
মাস্টার হাসে, কিছুটা রহস্যময়ও করে তুলতে চায় সে তার হাসি, বলে, জ্বী, অল্প কিছু কেনাকাটা আছে।
বিয়ের বাজার বুঝি?
উত্তর না দিয়ে নূর আলী হাসে, তাতেই উত্তরটা পাওয়া যায়।

যত সময় লাগবে মনে হয়েছিল কেনাকাটায়, ততটা লাগেনি। হঠাৎ করে কেমন একটা হাতখোলা ব্যাপার এসে গেছে তার মধ্যে, এতে বেশ সময় বাঁচে। মেয়েদের পরিধেয় সেলাই করতে করতে যার জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটে গেল, সেই লোকটার মধ্যেও কেমন একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছিল নববধূর জন্য শাড়ি চুড়ি বাছাই করতে গিয়ে। কেনাকাটার পর দেশি দু’একজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ এবং নিজের আসন্ন বিবাহ সংবাদ তাদের জানানোর দায়িত্ব পালন শেষে নূর আলী দেখলো রাত তখন মোটে সাড়ে ন’টা। সে তার বাড়ি কাম দোকানে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো। অকারণে হোটেলের ভাড়া গোনার কোনো মানে আছে বলে মনে হয় না তার। বরং বেশ বড়সড় একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারটা সেরে নিয়ে ফিরতি বাসে চাপল সে।

বাসটা প্রায় ফাঁকা। জানালার পাশে চমৎকার হাওয়া পাচ্ছিল। বাসের দুলুনিতে নূর আলীর তন্দ্রার মতো হয়েছিল একটু, তাতেই অশ্রুরানীর মুখ ভেসেছিল চোখে। সদ্য কেনা শাড়ি পরা, নতুন বউয়ের সাজ, কিন্তু অশ্রু কাঁদছিল। তারপরই তন্দ্রা ছুটে যায়...। সে পায়ের কাছে রাখা মালপত্তরগুলো হাত দিয়ে ধরে দেখে সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
রাতের প্রায় ফাঁকা রাজপথে বাসটা যখন বাতাস কেটে সাঁই সাঁই ছুটছে, তখন নূর আলীর হঠাৎ করেই মনে হলো অশ্রুরানী নামটা যেন কেমন। রানীর চোখে কি অশ্রু থাকে? এক কথা থেকে হাজার কথা। এরকম হাজার ভাবনার কিলিবিলি মাথার ভেতর। শেষ হয়, যখন বাস থামে শেষ স্টপেজে।

সামান্য একটু পায়ে হাঁটা পথ। কিন্তু নূর আলীর ওপর ভর করে বাড়ি ফেরার ক্লান্তি। মালপত্তর আর শরীরটাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় একবার, এত রাতে মূল দরজা খোলার দরকার নেই। সে একটু ঘুরপথে পেছন দরজা, অর্থাৎ তার বেডরুম কাম কিচেনের কাছেই চলে আসে।
ঘরে আলো জ্বলতে দেখে অবাক হয়ে যায় নূর আলী। আশ্চর্য! এত রাতে অশ্রুরানীর তো ঘরে থাকার কথা নয়। ভুল করে সুইচ অফ না করেই চলে গেছে হয়তো। কিংবা এমন হতে পারে তার যাওয়ার সময় ইলেকট্রিসিটি ছিল না, যা প্রায়ই হয়, সে চলে যাবার পর এসেছে, এখনও জ্বলছে। যতো যুক্তি নিয়েই সে মনে মনে নাড়াচাড়া করুক, পুরোপুরি নিঃসংশয় হতে পারে না কিছুতেই। তাই সন্তর্পণে দরজার কাছে এসে একটা ছোট্ট ফুটো দিয়ে ঘরের ভেতর চোখ রাখে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে কেঁপে ওঠে নূর আলী মাস্টার। বজ্রপাতে একজন জলজ্যান্ত মানুষের মৃত্যুও বোধকরি এতটা হতবিহ্বল করতে পারত না তাকে। সে অবাক হয়ে দেখে অশ্রু, অশ্রুরাণী, তার ঊর্ধ্বাঙ্গ নিরাবরণ, শুধু ফাঁসখোলা সায়া জড়িয়ে আছে নিচের অংশে, উপুড় হয়ে আঁকড়ে ধরেছে একটি পুরুষদেহ। স্বল্প আলোতেও নূর আলী দেখতে পেল নেপালকে, প্রচণ্ড খরার পর জলসিক্ত মাটির মতো পড়ে আছে সে নূর আলীর বিছানায়। পিষ্ট হচ্ছে গভীর সুখে।

এই দৃশ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে ধাতস্ত হতে বেশ খানিকটা সময় নেয় মাস্টার। মেরুদণ্ড বেয়ে একটা ঘামের স্রোত নেমে যাবার অনুভূতি টের পায় সে। ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ়ের সঙ্গে নিজের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়ের বিয়ে ঠিক করার ব্যাপারে নেপালের উদ্যোগ ও ব্যস্ততার অর্থ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে।
এ রকম একটি ঘটনায় কি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা উচিত, ভাবতে গিয়ে সে টের পায় নিজেকে অসম্ভব অবসাদগ্রস্ত মনে হচ্ছে তার। স্নায়ুগুলো যেন ঠিকমতো কাজ করছে না। হাতঘড়িতে সময়টা দেখে নেয়। টাউন সার্ভিসের শেষ বাসটা এখনও ছাড়েনি ভেবে স্বস্তি পায় সে। রাতে আবার মূল শহরে গিয়ে হোটেলে রাতযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাতে সে যে একবার ফিরে এসেছিল, এ কথাটা অজানা থেকে যাক সকলের কাছে।

৪.
বিয়ের মাত্র একদিন আগে নূর আলীর মুখে এক অদ্ভূত কথা শুনে বোকা বনে যাওয়ার যোগাড় সকলের। বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটে না। এ-কান, ও-কান হয়ে কথাটা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পরিচিত সকলের মধ্যে। অনেকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করে তাকে। অনেকে আবার অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে শুধু। ভিড় জমে যায় তার ছোট্ট দোকানঘরটার মধ্যে। স্বয়ং পাত্রীও সেখানে উপস্থিত। প্রশ্নমুখর মানুষগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে মাস্টারের মুখে একগাল অনাবিল হাসি। লুকোচুরি খেলায় সকলকে ফাঁকি দিতে পেরে চঞ্চল শিশুর মুখে উদ্ভাসিত হয় যে হাসি, সেই আকর্ণ বিস্তৃত হাসিতে মুখ ভরিয়ে নূর আলী বলে, বিয়ে-শাদী করার ইচ্ছা আমার কোনোকালেই ছিল না, কয়েকদিন মজা করে দেখলাম। অশ্রুরানী আমার মেয়ের মতো, তাকে স্নেহ করি আমি, তাই তার বিয়েটা আমি নিজেই দিতে চাই, কালকেই তার বিয়ে হবে।

মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে সবাই। যেন কথা সরে না কারও মুখ দিয়ে। তবু কথা ওঠে কার সঙ্গে? কাল কার সঙ্গে বিয়ে হবে অশ্রুরানীর?
একটা নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং সেই নাটকের প্রধান ভূমিকায় নিজেকে অবতীর্ণ করতে পারার ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করে সে। একটু সময় নিয়ে আরও একটি বোমা ছুঁড়ে দেয় কৌতুহলী শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে, বিয়ে হবে নেপালের সঙ্গে।
সেটা কি করে হয়? নেপাল প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে, অশ্রু আমার মাসতুতো বোন... তা ছাড়া...।
কেন ভাই, হিন্দুদের মধ্যে এর আগে আর কোনোদিন এ রকম বিয়ে হয় নাই? মাস্টারের প্রশ্ন।
নেপাল মুখ নিচু করে। অশ্রু হঠাৎ করে এসে মাস্টারের পা ছুঁয়ে সালাম করে ফেলে।
মেয়েটার দিকে একবার ভাল করে তাকায় মাস্টার। একটা প্রচণ্ড ক্রোধের বোধ তার মাথায় দ্রুত প্রবাহিত হয়। কিন্তু সে দেখে, সমবেত সকলে এক আশ্চর্য সমীহের চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে নিশ্চিত হয়, তার মহত্বের  কথা, দরিদ্র একটি মেয়ের প্রতি নিঃস্বার্থ মমত্বের কথা দশ কান হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। সুতরাং পিতৃসুলভ আচরণ করতে হয় তাকে, মাথায় হাত রেখে সে দোয়া করে অশ্রুরানীকে।

গার্মেন্টস ও বাল্ব ফ্যাক্টরির কয়েকটি বাচাল মেয়েকে এ সময় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়।
সবচেয়ে অন্যরকম আচরণটি করে তার প্রতিবেশী দোকানদার আমানুল্লাহ, সে এসে হঠাৎ মাস্টারের হাত দুটো চেপে ধরে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললো, এতটা বছর একসঙ্গে থেকেও তোমারে চিনতে পারি নাই, তুমি মিয়া ফেরেশতা আদমি।
মহৎ ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে এবার সত্যি নিজেকে মহৎ মনে হতে থাকে নূর আলী মাস্টারের।
অশ্রু ও নেপালের বিয়েটি চুকিয়ে একবার গ্রামের বাড়িতে যাবে ঠিক করলো নূর আলী।
প্রায় পঁচিশ বছর আগে ক্ষোভ ও দুঃখের ওপর প্রলেপ দিয়ে ত্যাগের মহিমায় ‘গরিয়ান’ হয়ে এই শহরতলীতে এসেছিল একটি যুবক। আজ আবার তার মহত্ত্বের কথা এখানে লোকমুখে উচ্চারিত হবে, এই সান্ত্বনা মনে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল প্রৌঢ় নূর আলী। জীবনের কাছ থেকে অপ্রাপ্তির বেদনাটুকু একান্তই তার নিজস্ব। দীর্ঘনিশ্বাসের মতো তাকে সে আড়াল করে রাখবে নিজের ভেতর।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়