ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পরীক্ষা || আহসান হাবীব

আহসান হাবীব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১২ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরীক্ষা || আহসান হাবীব

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
আমাদের পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের শেষ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে (আমার ছোট বোনের মেয়ে) নিয়ে আমিও গেলাম পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিতে। গিয়ে দেখি হুলস্থুল কাণ্ড! প্রতিটি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কম করে হলেও তিনজন করে গার্ডিয়ান। আর যারা গাড়িওলা তাদের কথা কি আর বলব; এই প্রচণ্ড ভিড়ে  আমাদের একদম গেটের কাছেই তাদের নামতে হবে। আর তারা পারলে গাড়ি নিয়ে পরীক্ষার্থীকে  সিটে  বসিয়ে দিয়ে আসেন। আমি দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করে কয়েক শ্রেণির গার্ডিয়ান আবিষ্কার করলাম।

তজবি গার্ডিয়ান : এই গার্ডিয়ানদের সবাই মহিলা এবং সবার  হাতে তজবি। তারা ননস্টপ তজবি গুণছে এবং একটু পর পর পাশে বসা ছেলের (ছেলে ইতিমধ্যে উচ্চস্বরে আইল্যান্ডে বসে পড়ছে) মাথায় ফু দিচ্ছে।

ডাব গার্ডিয়ান : এই গার্ডিয়ানদের সবার হাতে একটা করে ডাব ( স্ট্র লাগানো)। এরাও সংখ্যায় দু’তিনজন। এখানেও পরীক্ষার্থী বসে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে গুনগুন করে পড়ছে। পাশে ডাব হাতে গার্ডিয়ানরা দাঁড়ানো। ভাবটা এমন যে, ছেলে বই থেকে মুখ তোলামাত্র তারা ডাবের স্ট্র ছেলের মুখে গুঁজে দেবেন।
 
বকোয়াজ গার্ডিয়ান : এই গার্ডিয়ান আশপাশের গার্ডিয়ানদের সঙ্গে গপ্পো জুড়ে দিয়েছে উচ্চ স্বরে, গপ্পের ধরন অনেকটা এই রকম : এরা কি পরীক্ষা দেয় পরীক্ষা দিয়েছি আমরা।ইন দ্যা ইয়ার নাইনটিস হানড্রেড সিক্সটিতে আমার সিট পড়ল... ইত্যাদি, ইত্যাদি। তার গল্প অবশ্য অন্য গার্ডিয়ানরা  শুনছেন না বরং বিশেষ বিরক্ত হচ্ছেন। কারণ তার বকবকানিতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

কালেক্টর গার্ডিয়ান : এই গার্ডিয়ানদের দেখা যায় পরীক্ষা শেষে। এই গার্ডিয়ানরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে আসা ফ্রি ফ্রি প্রসপেক্টাস গাদা গাদা কালেক্ট করে। তিনি তখনই গবেষণা করে বের করে ফেলেন ছেলে বা মেয়েকে কোন কোচিং সেন্টারে ঢুকাবেন।

আমার হাতেও কে যেন একটা কোচিং সেন্টারের প্রসপেক্টাস দিয়ে গেল। চার রঙে আর্টকার্ডে ছাপা ল্যামিনেশন করা বেশ কায়দার প্রসপেক্টাস। কিন্তু প্রসপেক্টাস হাতে নিয়ে আমি হতভম্ব হলাম। সেখানে ছাপা হয়েছে গোটা পঞ্চাশেক ছেলেমেয়ের ছবি যারা গত বছর তাদের কোচিং সেন্টারে কোচিং করে বুয়েট, মেডিক্যাল বা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। সফল হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ছবি তারা ছাপতেই পারে। কিন্তু প্রতেক্যের ছবি হা করা এবং মুখের সামনে একটা করে রসগোল্লা ধরা। মানে তাদের মিষ্টি মুখ করার ছবি।

আমার তখন মনে পড়ল দেশের প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোতে যখন জন্মদিন পালন করে তখন তারা দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের দাওয়াত করে এবং এ ওকে কেক খাইয়ে দেয়। সেখানে দেখা যায় হা করা ছবি। অর্থাৎ কেক গিলছেন বরেণ্যরা (দু’একজনের আলজিবও দেখা যায় তখন)।  খুবই কুৎসিত দৃশ্য। সত্যি কথা বলতে কি প্রসপেক্টাসের মিষ্টি খাওয়ার ছবিগুলো দেখে আমার খুবই মন খারাপ হলো। আমাদের রুচি এতটা নেমে যাবে কেন? কোন ছবিটা ছাপা উচিৎ আর কোন ছবিটা ছাপা উচিৎ নয় এটাও কি আমরা বুঝি না?

বরং মিষ্টি নিয়ে একটা সত্য ঘটনা শেয়ার করা যাক। এইচএসসি’র রেজাল্ট বের  হয়েছে মিষ্টি কেনার হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। গার্ডিয়ানরা দুই কেজি, তিন কেজি, পাঁচ কেজি পর্যন্ত মিষ্টি কিনছেন। দাম কোন ব্যাপার না! এক গার্ডিয়ানকে দেখা গেল তিন কেজি মিষ্টি কিনলেন। তারপর বললেন, ‘এক কেজি টক দইও দেন ভাই।’
- টক দই কেন এই দিনে?
- আরে সবাই কি ভাল করে নাকি? একজন, দু’জন তো খারাপও করে। টকদই তাদের জন্য।
তারপর একটু থেমে ফিসফিস করে বললেন, ‘তবে যে খারাপ করেছে তাকে নিয়েই আমি বেশি আশাবাদী!’

আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন আমাদের এক পাগলা টাইপের স্যার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাশ পাওয়া ছাত্রের থেকে থার্ড ক্লাশ পাওয়ার ছাত্রের গুরুত্ব বেশি মনে করি। কারণ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ঐ রেজাল্ট নিয়ে তাকে আরো কঠিন ফাইট দিতে হয় এবং প্রায়শই সে সফল হয়!’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৫/তাপস রায়  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়