ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাট নিয়ে বিপাকে মেহেরপুরের কৃষক

মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৬ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাট নিয়ে বিপাকে মেহেরপুরের কৃষক

জলাশয়ে জাগ দেওয়া পাট

মহাসিন আলী, মেহেরপুর : পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের কৃষকেরা।

 

উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় মাছ চাষের পুকুর, ডোবা অথবা নিচু কোনো জায়গা ভাড়া নিয়ে তাতে শ্যালো ইঞ্জিনের সাহায্যে পানি জমিয়ে পাট পচাতে কৃষককে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি জাগ দেওয়ার সময় পাটের আঁটি ডুবাতে কাদামাটি ব্যবহার করায় পাটের রং হচ্ছে কালো। ফলে পাটের বাজারদরও কম পাচ্ছেন চাষিরা। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের পাটের চেয়ে মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কম পাচ্ছেন তারা। এতে লোকসানের মুখে পড়ছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক।

 

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, জেলায় এবার প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৮৮ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, লোকসান কমাতে কাদা মাটি বাদ দিয়ে মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিতে হবে। আর কৃষকেরা বলছেন- বর্তমানে জেলার কোথাও উন্মুক্ত জলাশয় নেই বললেই চলে।
মেহেরপুর জেলায় সাধারণত ভারতীয় ও দেশি তোষা জাতের পাটের চাষ হয় বেশি। তবে পাট চাষের বড় অন্তরায় পানি। এক সময় জেলার ভৈরব, কাজলা, ছেউটিয়া নদীতে প্রচুর পানি থাকত। বইতো স্রোত। চাষিরা এসব নদীর স্রোতের পানিতে পাট জাগ দিতেন। তাতে পাটের রং হতো সোনালি। খরচও হতো অনেক কম। পাশাপাশি অনেক খাল-বিল ছিল যেখানে পাট জাগ দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই এবং ওই সব নদী, খাল-বিলের বেশির ভাগ ভরাট হয়ে গেছে। তাই কোথাও স্রোতের পানি বা মুক্ত জলাশয় নেই।

 

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস, কফিল উদ্দিন, ছেকেন আলীসহ আরো অনেকে জানান, বর্তমানে পাট জাগ দেওয়ার মুক্ত জলাশয় বলতে কিছু নেই। নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে ভৈরব নদীর খনন কাজ চলছে, তাই সেখানে পাট জাগ দেওয়া নিষেধ। বিলগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সমিতির মাধ্যমে মাছ চাষ করা হচ্ছে। তাই বিলেও পাট জাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাধ্য হয়ে পুকুর, ডোবা, নিচু জলাশয় ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। ভাড়া নিতে অনেককে আবার সিরিয়াল দিতে হচ্ছে। সেখানে শ্যালো ইঞ্জিনের সাহায্যে পানি জমিয়ে কাদামাটি চাপা দিয়ে পাট পচাতে হচ্ছে। এতে প্রতি বিঘা জমির পাট পচাতে বাড়তি এক হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। আবার বদ্ধ পানিতে কাদা-মাটি দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের রং কালো হচ্ছে। ফলে কাক্সিক্ষত মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। পাট চাষ থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ বছর বৃষ্টির অভাবে সেচ খরচ হয়েছে অনেক বেশি এবং পাট লম্বাও হয়েছে কম। তাই পাট বিক্রি করে খরচ উঠবে না। এক বিঘা জমির পাট বিক্রি করে কৃষকেরা পাচ্ছেন কোনো রকমে উৎপাদন খরচের সমান বা তার চেয়ে কম। তবে জমি লিজ নেওয়া হলে লিজের টাকা ঘর থেকে দিতে হবে।

 

Meherpur

বিকল্প ব্যবস্থায় পাট জাগ

 

মেহেরপুরের কৃষকরা আরো জানান, পাটের রং এবং মান ভালো হওয়ায় উত্তরবঙ্গের পাটের দাম এখানকার চেয়ে মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি। তাই তাদের পাটে লোকসান হবে না। এখানে খোলা স্রোতের পানিতে পাট জাগ দেওয়ার সুযোগ থাকলে কৃষকেরা লাভবান হতেন।

 

জেলার গাংনী উপজেলার কুঞ্জনগর গ্রামের পাটচাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, কৃষি অফিস পলিথিন, বালি ও বস্তা ভর্তি ইট দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু জায়গা ও সময় স্বল্পতা ছাড়াও এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় চাষিরা কেউ এ পরামর্শ মানছেন না। একই কথা জানালেন গাংনী উপজেলার বাথানপাড়ার কোরবান আলী ও রাইপুরের মকলেছ মাস্টার। 

 

এদিকে পাট ব্যবসায়ী তানজিলুর রহমান জানান, তিনি বিভিন্ন জেলা থেকে পাট কিনে দেশের বিভিন্ন মিলে পাট বিক্রি করে থাকেন। এখানকার পাটের স্থায়িত্ব কম। অন্যদিকে কাদামাটি দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের রং হয় কালো। ফলে মিল মালিকরা কাক্সিক্ষত দাম দিতে চান না এখানকার পাটের। উত্তরবঙ্গের জেলাতে পাট বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকায়, ফরিদপুর অঞ্চলের পাট বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৭৫০ থেকে ১৮০০ টাকায় আর মেহেরপুরের পাট বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৩০০ থেকে ১৩৫০ টাকা করে।  

 

সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাদামাটি দিয়ে পাট জাগ না দিয়ে পাটের জাগের ওপর ইট অথবা পলিথিনে মাটি ভর্তি করে জড়িয়ে রাখতে হবে। তাহলে পাটের রং কালচে হবে না। এছাড়াও মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ তাদের।

 

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেজবাহুল হক জানান, পাট জাগ দেওয়ার ফলে দেশীয় মাছ উৎপাদন ব্যাহত হয়। দেশি মাছ বৃদ্ধি যেন ব্যাহত না হয় সে কারণে মুক্ত জলাশয়ে পাট পচানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  

 

রাইজিংবিডি/মেহেরপুর/২৬ আগস্ট ২০১৬/মহাসিন আলী/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়