ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পানের ঢোপে নেপালের পথে (শেষ পর্ব)

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১৯ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পানের ঢোপে নেপালের পথে (শেষ পর্ব)

লেকের জলে অন্নপূর্ণার ছায়া

ফেরদৌস জামান : দীর্ঘ জার্নির অন্তে পেট পুরে খাবার গ্রহণের পরই চলে যাই অতল ঘুমের দেশে। ভোরবেলা ঘুম ভাঙলে বারান্দায় গিয়ে দেখি সূর্যের প্রথম আলোয় জ্বলজ্বল করে জ্বলছে যেন পর্বতশ্রেণী। সম্মুখের ছোট্ট ফুল বাগান পেরিয়ে ছড়ানো দীর্ঘ মাঠের শেষে পর্বতের চূড়া থেকে সোনালি আগুন যেন গলে পড়ছে চারদিকে। দার্জিলিং টাইগার হিল থেকে সোনালি সূর্যদয় দেখতে গিয়ে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে। এবার সে সাধ আর অপূর্ণ রইল না। বিস্ফারিত নয়নে অবলোকন করি অন্নপূর্ণা রেঞ্জ-এর মায়াবি রূপ। টাটকা অনুভূতি ভাগাভাগি করতে উদগ্রীব হই, কিন্তু কেউ যে পাশে নেই! বন্ধু তখনও গভীর ঘুমে বিভোর।

 

তরুণ বয়েসী দেবেন্দ্র শ্রেষ্ঠ তার স্ত্রী এবং কিশোরী বোনকে নিয়ে হাউসটি চালান। ফুলের মত ফুটফুটে একটি সন্তানও রয়েছে তাদের। পূর্বের কথা মত সকাল দশটার মধ্যে গাইড দীপক একটি ছোট্ট কার নিয়ে হাজির। বেড়িয়ে পরি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ ফেওয়া তাল পরিদর্শনে। মূল শহরটিকে তখন আর দক্ষিণ এশিয়ার শহর বলে মনে হয় না। অনুচ্চ দালানের ফাঁক দিয়ে পথ, যান চলাচলে ভীষণ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। পশ্চিমা পর্যটকরা পায়ে হেঁটেই চলছে, গন্তব্য ওই একটিই- ফেওয়া তাল। কারও হাতে কুলফি তো কারও হাতে চিপস্। অনেকেই আবার নেপালের ঐতিহ্যবাহী  পোশাকে সাজিয়ে তুলেছে নিজেকে, বিশেষ করে মেয়েরা। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় আটশ মিটার উচ্চতায় পোখারার অবস্থান। ঠিক তার বুকের মধ্যে চুপটি করে বসে রয়েছে ফেওয়া তাল। পর্বতের ছায়ায় স্বচ্ছ সবুজ পানি, কত বড় সে সরোবর! দূর পাহাড়ের গায়ে ধুনো মেঘের অলস পরে থাকা, তাকেই পটভূমি করে হঠাৎ অকাশে হাজির হয় প্যারাগ্লাইডিংরত সৌখিন পর্যটকের দু-একটি প্যারাসুট। প্রচণ্ড আগ্রহ থাকলেও অর্থের অপর্যাপ্ততার কারণে প্যারাগ্লাইডিং-এর সাধ আমাদের অপূর্ণই থেকে যায়। তাতে বন্ধু নবীনের মন ছোট্ট শিশুটির মত বেজায় ভারি। হরেক রঙের নৌকা ভাসছে সরোবরের জলে, জনপ্রতি দশ রুপি টিকিটে নৌকায় আরোহণ করি। হাতে বাওয়া নৌকা, চালক একেকজন নারী। একের পর এক নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে সরোবরের মাঝখানে দ্বীপের উদ্দেশে। শত মিটার আয়তনের ছোট্ট দ্বীপে ‘বারাহি টেম্পল নামের একটি মন্দির রয়েছে, যা হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনালয়। ছায়া ঢাকা মন্দির কক্ষের চূড়া থেকে নিচ দিকে চালের প্রান্তদেশ অবধি নামিয়ে দেয়া  হয়েছে একটি স্বর্ণের টিকলী। দিন শেষ হয়ে যায় কিন্তু গেস্টহাউসে ফিরতে আর ইচ্ছা করে না!

 

 অপরূপ ফেওয়া তাল

 

আগের দিনের মত দীপক গাড়ি নিয়ে হাজির, সাথে সদ্য গাছ থেকে আনা কেজি চারেক আপেল। সেই আপেল খেয়েই কাটল সারাদিন। দেভিস ফল আহামরি কিছু নয়, অবার সাধারণ ঝরনার মতও নয়। দূর পথ মাড়িয়ে একটি ফুটো দিয়ে পানি ঝড়ছে প্রবল বেগে। ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেনিং মিউজিয়াম (আইএমএম)-এর বিশেষত্ব হল, হিলারী ও শেরপা নোরগের এভারেস্ট জয়ের পঞ্চাশ বছর পুর্তি স্মরণ উপলক্ষে তা সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। দার্জিলিং হিমালয়ান মাউন্টেনারিং ইনস্টিটিউট- এর মত পর্বত আরোহীদের নিকট আইএমএম-ও গুরুত্বপূর্ণ। পোখারা ভ্রমণে অন্যতম আকর্ষণ মাহেন্দ্রা কেভ। জীবনে প্রথম কোনো গুহায় প্রবেশের অনুভূতি ছিল অনেক রোমঞ্চকর। গুহা প্রাচীর ঘেমে বড় ফোটার পানি ঝরছে টপ টপ শব্দে। আর তাতেই ক্ষণে ক্ষণে ভেঙে যায় গা ছমছমে সে নীরবতা। একটি জাতীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণা অর্জনে যাদুঘর হল অন্যতম উপাত্ত। সেই মানসে আমাদের পরোবর্তী গন্তব্য পোখারা রিজিওনাল মিউজিয়াম। কত কষ্টসাধ্য জীবন সংগ্রামের পর্ব চুকিয়ে তারা (নেপালীরা) যে বর্তমান পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে, তার গোছালো একটি ধারণা পাওয়া যায় এখানে। স্থানীয় এক কিন্ডার গার্টেনের সমস্ত বাচ্চাকে যাদুঘর দেখাতে নিয়ে এসেছেন শিক্ষিকা পূর্ণিমা শ্রেষ্ঠ। লাল টকটকে পোশাকে আবৃত পূর্ণিমা অনেক বাচ্চার ভিড়ে কেবলই শিক্ষিকা নন, যেন কচি কচি অজস্র পাতায় ঘেরা একটি গোলাপ কলি। বাচ্চাদের কোলাহলে ভুলে যাই পরোবর্তী ভ্রমণ পরিকল্পনা, তাদের সাথে কেটে যায় বেশ খানিকটা সময়।

XvlO1uT/23zH5O5/Clse3djt273/Fe32bufSo5/U9I8vSEeMvt9N21Zqo4PT9WPH1OXKP3c2d6XXa/uGY4v7bySRdlGxR13HaDXme8i+GbZ8xhBP8A9NLfuvd/gV3b/njvv27f+vbTfkb/AOHl69k/La/DlyrwABxhX/7D9F7pflL+z81A/af7k81gxtHGydkRsYkNhZvmOgq637+8s/jpcvDVYXLe7unfcjQ/lAvXNftLs99+59JbtG31fd9f9vta361623/Az/7e3vHhu7fH/wCqvbkMtXJdx3brzcfHjHiKMWb/AJVnHlyc/wAp38lDvlfvO1iBcm5t6U7h+WjXyrhG+clD/wBNIeE339ne27f7dn/Rv1tQvZ9fFfs7t4ts3dz7be29c8xHzcj4psZkOPpgk8/MnvI4M03kchy6LA6i6m+4rzsOduNV/CeOx4pHeHbMkbARuLqQbakjjS2Z/wC5j23vtHyf/rbtKp+Cvtltx3i+3h9t6piby0XPlbnNjR1ax9hB2kAg6gcBatzWKkBd5too50DT6kfJw5cf/OjxW2rfZxPC9WKRQZ8XIxWEzIeBV2U3sOIOvSqGLlCaEKl22i28EcbcqZy//ay/LwPDjb0qXDe0nz8F/wBq23h+L1qWtFTtTyrKy3e7CxBIHEVrFiEjFVQKnV2ZTc9DzrGN/vN/u22D/l4ffTS7ufcvu93y7Ptt/SlkZaBMG1KaxEEUiiSBdm5VZSS53W106c6LL4vCm3TQAoWZrX9qkKfceFx0vSs1+7kX3W2r81uh6a3/AKVZ8B8mNt3/AO1Jfd8trj593KucnI9AVb/G1WXOZkmRhl07xRALpcFwVOgbnb76+8VnZrSCGRFdbEh1Nj9xpDzmz6mT/e3bDu2bt3z/AP8Akfh2/l21f/aO39P/ANv3Ln/d3d23p+C1Xhzo7uueYhyoWTsMeS0fdaB0S/zEaH4EVq4+yuhytlhft3//AD7rf9O3Sp2Rfsm1tv8A+K2z+OtVBlqEGj+74JAn1pnAzseH9PKjVo2uDIOIU8bik+XP7KVzL9lvmvY/La9CXFvMjDk9F+ffuvKgyvKZXZZmgikMcG/WyLwF+NRZle8Sx+4HX28v/HrTE23vSbv/ALjfNe/H+3nXuHbZkbbcDft/N/17vw/CuXsrUqeV+cn3QUkA14kXBHIH4U1DNta5I2nQk8qSb5xfbflt4/w0pmHlw463/rS0UCy6DBnleIoVBUG4Y8/S9U4pRtuosOnG1SPHW7PO1x8l9nE1RT5hw4/hrpg/FXx2ToJa7dddOBp6PJdMU4907JO65XcQx5ikIvlPDj9lMRfMttt/Th/GsW/Uq9inZUUilnVtyn5nve/xpCSFIrvICSOHO/wroZvk/wDT4G+2pOVt2r/t3v8Ahvf/AErSbdEPsp75bC5Qa8BcWYH7Kwc4hymXc4pFm22BB5Xta/wNZzLe7dt467r/AMdtIrey8eJtvtb/AKf+Nc+QDUpZu4bu7V0WN46aVY4Wl+kjlV2M0ilAyjXS+t6b8bD4wRzw4oSV2NonLWLbPRra1Cffuw7fUX3Lx2bb/wD4L6baL4nb9dHfsX3H/e3cf/x203/wrlyAsXlXRh80QTRwO9mTj4MMuXuzIwsugXtttsRY6i9j9lLz7EcxIqWW+1uBA+2msvd/kdOO5L93bu4jrpu6Vjy+7va9u9z03/woQejv9E0mbzcX0ZrdykxxO8ckjEjaSLDgelTpZJZIyVXbIDtYqL3sdfhVmL/alt113f8A616TT53vtvccOP22roDqHlfvSsEDFw7khSNG53HD2iqGPFIAVZd4ALFRYWPX3W0r3Hv3ntfh+G3/AOlRZ928Wvy47bfbeqiytGyVTEc75BYgEaHUEfH40f6aLs7tO/xt+G/wo0//ALVL7rX5f7fHnaha/U/Z6W/8qB5OKUdJ5uY7V//Z" alt="" />

 ডেভিস ফলস

 

ফাইন আর্ট গ্যালারী পরিদর্শনের পর বাইসাইকেল যোগে চলে যাই বিন্দাবাসীনি টেম্পল অভিমুখে। নানা স্যুভেনিরের পসরায় সাজানো দোকানগুলো প্রবেশ পথেই। বৌদ্ধ মূর্তিসহ ফসিল ও দামি পাথরের খণ্ড এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্নে ঠাসা প্রতিটি দোকান। মনের সাধ মিটিয়ে লেকের জলে বোটিং করা বাকি রয়েছে। হোটেল থেকে সরোবর মাত্র পনেরো মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। প্রতি ঘণ্টায় নৌকা ভাড়া ৮৫ রুপি। জলের বুকেই কাটিয়ে দেই দিনের লম্বা একটি অংশ। ইসরাইলী বা ইহুদী বলতে আমাদের মন নেতিবাচক ধারণায় ঠাসা। শুধু তাই নয় বাংলাদেশী পাসপোর্টে পর্যন্ত পরিস্কার উল্লেখ রয়েছে, ’ইসরাইল বেতিরেকে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য’। বাংলাদেশ সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার পর ইয়েথেনের দুঃখ- চাইলেই সে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত ও ম্যানগ্রভ বন দেখতে পারবে না কারণ সে ইসরাইলী। বোটিং-এর মাঝে আলাপ-পরিচয় হলেও অল্প সময়ের মধ্যে আন্তরিকতা অনেক দূরেই পৌঁছে যায়। দূর পাহাড়ের শীর্ষে ঘন সবুজের মাঝখান থেকে সাদায় সোনালি চূড়া বের করে দিয়ে রেখেছে ওয়ার্ল্ড পীস প্যাগোডা। একা ঘুরতে আসা ইয়েথেনের বড় ইচ্ছা সেখানে একবার যাবে। পর দিন সকলে মিলে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তাবও করে। কিছুই করার নেই, সময় যে আমাদের ফুরিয়ে এসেছে, দেশে ফেরার বাস টিকিট কনফার্ম করা হয়েছে- একদিন আগেই। সুতরাং ফিরতেই হবে আমাদের।

 

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৫/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়