ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাহাড় চূড়ায় পূর্ণিমার আলো

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড় চূড়ায় পূর্ণিমার আলো

ফেরদৌস জামান : সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে অথবা নতুন বছরের সূর্যকে স্বাগত এবং পুরনো বছরের সূর্যকে বিদায় জানাতে আমরা সাধারণত সৈকত কিংবা দ্বীপে গিয়ে থাকি। কিন্তু উদ্দেশ্য এবং স্থান উভয় দিক থেকেই আমাদের পরিকল্পনাটি ছিল একেবারেই ভিন্ন- বছরের বিশেষ পূর্ণিমা উপভোগ করা। আর সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সমুদ্র সৈকত কিংবা দ্বীপ কোনটাই নয়, বেছে নেই পার্বত্য অঞ্চলের উঁচু এক জায়গা। আপন বৈশিষ্ট্যের কারণে বছরের দুইটি পূর্ণিমা বিশেষ।  এ ধারণা কেন হলো, সে ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। তবে পূর্ণিমা দর্শনের  বাসনা নিয়ে বেরিয়ে পরি ঢাকা থেকে কয়েকশ কি.মি. দূরে দেশের পার্বত্য এলাকার উদ্দেশ্যে।

 

দিনটি ছিল গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর, কোরবানি ঈদের এক বা দুই দিন পর। ঠিক তার পরের দিন ২৭ তারিখ রাতেই পূর্ণিমা। রাজধানীর কলাবাগান বাস কাউন্টার পাড়ায় গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই পর্যটক। ঈদের লম্বা ছুটিতে বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবার পরিজন নিয়ে দু’চার দিনের জন্য বেরিয়ে পড়েছে। ভোরে বান্দরবান পৌঁছে দেখি আগে থেকেই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমিয়েছে। তাদের সকলের উদ্দেশ্য বান্দরবানের প্রকৃতি কাছ থেকে দেখা। বছর পাঁচেক আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না। ভ্রমণ বলতে আমরা কেবল কক্সবাজার, সিলেট বিভাগ অথবা সুন্দরবন বেছে নিতাম। কারণ বিকল্প হিসেবে আজকের মত তখনও অন্য জায়গাগুলি তেমন প্রচারে আসেনি। সুতরাং, বর্তমানের চিত্র বেশ আলাদা।

 

 

পাহাড়ের ওপর সেনাক্যাম্পে রিপোর্ট করতে  হবে, তারপর পরবর্তী পথের দিকে এগিয়ে চলা। গোড়া থকে পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করতে অতিক্রম করতে হবে ১৭০০ ফুট। রোদ ছিল বেশ তাই পানির মজুদটা ঠিকঠাক করে নিলাম, তার আগে ওদের দুজনকে বিদায় জানাতে হল কারণ আমাদের গন্তব্য সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্ণিমা দেখতে আমাদের সবসমেত আরোহণ করতে হবে তিন হাজার ফুট ওপরে। কিছুক্ষণ উঠার পর দেখি, অন্তত প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর সামান্য ছায়া পেয়েই বসে পড়েছে একেকটি দল। ঈদের পর হওয়ায় অনেকেই পা বাড়িয়েছে পাহাড়ের দিকে, যাদের অনেকেরই পাহাড় ট্রেকিং-এর পূর্বাভিজ্ঞতা নেই। পানির মজুদ প্রায় সকলেরই শেষ। পানি চাইলে দু’একজনকে দিতেও  হয়েছে। ইতিবাচক দিক হল, ইদানিং পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পাহাড়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের সংখ্যাই অধিক। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে মাদ্রাসা শিক্ষকদের দলটিকে দেখে। আমরা যেখানে হাফপ্যান্ট, টি-শার্ট পড়েই কুলাতে পারছি না। সেই পরিস্থিতিতে তারা পাঞ্জাবি-সালোয়ার ও টুপি-পাগড়ি পড়ে রওনা দিয়েছেন। আলাপ করে জানা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষার রক্ষণশীলতা উপেক্ষা করে মাঝে মধ্যেই তারা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন এবং শিক্ষার্থীদেরকেও ভ্রমণে উৎসাহিত করেন।

 

সেনাক্যাম্পে  গিয়ে দেখি প্রায় একশ মানুষের ভিড়। কোনো কেনো দলের সদস্যদের গায়ে আবার একই রং ও নকশার গেঞ্জি- মাস্টার ট্র্যাকার, এক্সট্রিম ট্র্যাকার, মুসাফির ইত্যাদি নামের একেকটি দল। এন্ট্রি করতে যতটুকু সময় লাগল ততটুকুই, এরপর আমরা উঠতে লাগলাম উপরের দিকে। কাঙ্ক্ষিত বসতিতে পৌঁছার আগেই রাত হয়ে যায়। আগে পিছে কেউ নেই, গহীণ পাহাড়ি অরণ্যে কেবল মাত্র আমরা কজন। চারিদিক থেকে ধেয়ে আসছে ঝিঝি পোকার শব্দ। তাতে যেন দুই কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ছোট্ট ঘরটায় ব্যাকপ্যাক রেখে পাশের বাড়িটাতে খাবার রান্না করতে বলি। চারদিকের দৃশ্য আমার দেখা পর্বত্য অন্য সব পাড়ার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর! তিন হাজার ফুট উঁচুতে হওয়ায় দৃষ্টি যতদূর যায় চোখে ধরা দেয় শুধু অসংখ্য পাহাড় চূড়া। সমস্ত পাহাড় পায়ের নিচে মনে হয়। সমস্ত প্রস্তুতি শেষে কাঠের বারান্দাটার সম্মুখে তাবু খাটানোর ব্যবস্থা করি। ঠিক তার বাম পাশে বিছানা বিছিয়ে যে যার মত অবস্থান নেই। কাঁসার থালার মতো জ্বলজ্বলে বিশেষ চাঁদটি যেন ক্রমেই চলে এল খুব কাছাকাছি। ছড়াতে থাকল রাশি রাশি মিষ্টি আলো। পাশ থেকে সহযাত্রী আলমগীর আলী শেখ এর কণ্ঠ থেকে মৃদু আবেগের শান্ত গলায় বেরিয়ে আসে পঙ্কজ উদাসের ‘চাঁদনী রাত মে চান্দকে সামনে, রূপসে পার্দা হাটা না গাজাব হো যায়ে...চান্দনী রাত মে...।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জানুয়ারি ২০১৬/তারা         

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়