ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পুরাণকথা || দেবতার রক্তে মানুষের সৃষ্টি

সঞ্জীবন চট্টোপাধ্যায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৭ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরাণকথা || দেবতার রক্তে মানুষের সৃষ্টি

তিয়ামাত ও মারদুকের যুদ্ধ

সঞ্জীবন চট্টোপাধ্যায় : মারদুক ছিলেন বজ্রদেবতা। তবে পানি, সবজি চাষ, বিচার ও জাদুর ওপর তার ক্ষমতা ছিল বলে তিনিই ছিলেন ব্যাবিলনীয়দের প্রধান দেবতা। খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ শতাব্দিতে বিখ্যাত ব্যাবলনীয় সম্রাট হাম্বুরাবির সময় মারদুকের পূজা হতো। ব্যাবলনীয়দের মতে, দেবতাদের সেবার জন্য মারদুকই মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে দেবতা তিয়ামাত আর মারদুকের দ্বন্দ্ব যুদ্ধ থেকে। যুদ্ধে তিয়ামাত পরাজিত হন এবং মারদুক তাকে খণ্ডিত করে এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেন। মারদুক ও বিশ্বসৃষ্টির রহস্য নিয়ে ব্যবিলনীয়রা রচনা করেছিল ‘এনুমা ইলিশ’ নামের একটি মহাকাব্য। সাতটি কাদামাটির ফলকে লেখা এই মহাকাব্যটি ব্যাবিলনীয়রা নববর্ষের দিন পাঠ করতো। ইরাকের মসুল শহর থেকে ব্যাবলনীয় সম্রাট আসুর বানিপালের ধ্বংসপ্রায় পাঠাগার থেকে এটি ১৮৪৯ সালে উদ্ধার করেছিলেন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক অস্টেন হেনরি লেয়ার্ড।

উদ্ধার হওয়া এসব ফলকের পঞ্চম নম্বরটিতে লেখা ছিল:

‘যখন আকাশের ছিল না কোনো নাম

পৃথিবীরও ছিলা না কোনো পরিচয়

আদি দেবতা আপসু তাদের এক করলেন...’

 

আপসু ছিলেন মিঠা পানির দেবতা, আর তিয়ামাত লোনা পানির দেবী। তাদের দুজনের মিলনে সৃষ্টি হলো বিশাল বংশধারা। ছোট ছোট দেবতাদের চেঁচামেচির কারণে আপসু শান্তিতে ঘুমাতে পারছিলেন না। যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আপসু এসব দেবতাদের হত্যা করতে চাইলেন। বিষয়টি তিনি তার স্ত্রী তিয়ামাতকে বললেন। কিন্তু তিয়ামাত তাদের দাদী। তাই তার ভেতরে নাতি-নাতনিদের জন্য স্নেহ উথলে উঠল। ছোট ছোট এসব দেবতাদের যাতে হত্যা করা না হয় সেজন্য তিনি আপসুকে অনেক বোঝালেন। কিন্তু আপসু রাজী হলেন না। তার পক্ষ নিল ছেলে কুয়াশার দেবতা মাম্মু।

 

সবচেয়ে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান নদীর দেবতা ইয়া দাদার এ ষড়যন্ত্রের কথা জেনে গেলেন। ইয়া জাদুবলে আপসুকে অজ্ঞান করে তাকে হত্যা করেন ও মাম্মুকে বন্দী করেন। পরে ইয়া আপসুর পানির ওপর প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং তিনি দেবতাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হন। ইয়া পরে বিয়ে করেন দামকিনা নামের এক দেবীকে। তাদের দুজনের ঘরে জন্ম হলো চার কান ও চার চোখওয়ালা বৃষ্টি ও ঝড়ের দেবতা মারদুক।  

 

এদিকে স্বামী হত্যার খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন তিয়ামাত। ইয়াকে হত্যার জন্য ড্রাগন ও দৈত্যদের নিয়ে বিশাল বাহিনী তৈরি করলেন তিনি। এ বাহিনীর প্রধান করা হলো দেবতা কিঙ্গুকে। তিয়ামাতের এই বিশাল বাহিনীকে কীভাবে মোকাবেলা করা হবে ভাবতেই হয়রান হয়ে পড়লেন ইয়া। শেষ পর্ন্ত লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মারদুককে আহ্বান করলেন ইয়া। মারদুক লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আগে দেবতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন- যদি তিনি তিয়ামাতকে পরাজিত করতে পারেন তাহলে তার ওপর শাসনভার ন্যাস্ত করতে হবে। আর্শীবাদস্বরূপ দেবতারা মারদুককে দড়ি ও রাজদণ্ড দিলেন।

 

এরপর বজ্র ও ঝড় নিয়ে তিয়ামাতের বাহিনীর ওপর আঘাত হানলেন মারদুক। হামলার প্রচণ্ডতার মুখে তিয়ামাতের সেনারা সব পালিয়ে গেলে। শেষ পর্ন্ত তিয়ামাতকে সম্মুখ সমরে আহ্বান করেন মারদুক। মারদুককে  খেয়ে ফেলতে হা করলেন তিয়ামাত। তখন তার মুখে বায়ু প্রবেশ করিয়ে দিলেন মারদুক। এতে হৃৎপিন্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে মারা গেলেন তিয়ামাত। পরে মারদুক দু’টুকরো করে ফেললেন তিয়ামাতের শরীর। তার অর্ধাংশ দিয়ে তৈরি করলেন আকাশের খিলান এবং অপর অংশ দিয়ে পৃথিবী। তিয়ামাতের থুতু থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ধাবমান মেঘমালা, বায়ু ও বৃষ্টিধারা। তার বিষ থেকে কুয়াশা, অশ্রু থেকে ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস এবং স্তন দিয়ে পর্বতরাশি সৃষ্টি করা হলো।

 

যুদ্ধজয়ের পর মারদুক দেবতাদের ফসল উৎপাদন ও খাল কাটায় নিয়োগ করেন। কিছুদিন পর দেবতারা অভিযোগ করেন, তারা এ কাজ করতে করতে ক্লান্ত এবং এগুলো আর করতে চান না। তখন মারদুক তিয়ামাতের সেনাপতি কিংগুকে হত্যা করলেন। তার রক্তের সংঙ্গে পৃথিবীর কাদা মিশিয়ে মানুষ সৃষ্টি করলেন দেবতা ইয়া। এরপরই দেবতাদের বিশ্রামে পাঠিয়ে দেন মারদুক এবং মানুষকে তাদের সেবায় নিযুক্ত করেন তিনি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ অক্টোবর ২০১৫/শাহেদ/তাপস রায়

 

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়