ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

পুলিশের ইনভেস্টিগেশন মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ : প্রধান বিচারপতি

মেহেদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৫ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুলিশের ইনভেস্টিগেশন মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের ইনভেস্টিগেশন মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন ‘আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরে প্রাক্তন ও বর্তমান আইজিপিকে ডেকে বলেছিলাম, আপনাদের ইনভেস্টিগেশন মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। আপনাদের ট্রেনিং দরকার। আপনারা যেসব ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন, এ ট্রেনিং থিওরেটিক্যাল। প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং হয় না।’

 

রোববার সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁয়ে মানব পাচার সমস্যা উত্তরণ বিষয়ক এক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত মর্মাহত। সেনসেশনাল মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দেখি ত্রুটি থাকে। বিভিন্ন কোর্ট ঘুরে মামলা আমাদের কাছে আসলে আমরা সাজা দেওয়ার মতো কিছু পাই না। কারণ আমরা সাংবিধানিক কোর্ট। এখানে শুধু ইনভেস্টিগেশন অফিসারদের ত্রুটি আছে, সেটা বলব না। প্রসিকিউশনেরও ত্রুটি আছে।’

 

তিনি বলেন, ‘এখানে জনপ্রতিনিধিরা আছেন। আপনাদের জেলায় পাবলিক প্রসিকিউটররা দলীয় লোক। এরা সিআরপিসির (ফৌজদারি কার্যবিধি) সি-ও জানে না। আমাদের ম্যাক্সিমাম আইনজীবী টাকার দিকে ঝুঁকে যাওয়া। টাকার মোহ প্রত্যেকের আছে। আইনের দিকে খেয়াল রাখে না। যার ফলে তদন্ত প্রসিকিউশন হচ্ছে ফাউন্ডেশন। এটা যদি ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়, তাহলে কোনো মতে মামলা টেকানো যাবে না।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পিপি এপিপি সাহেবরা সেনসেশনাল মামলারগুলোর ক্ষেত্রে কেবল পত্রিকায় টেলিভিশনে নাম প্রচার করে। কিন্তু যা সাক্ষ্য প্রমাণ দেয় তা অখাদ্য।’

 

আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থাকে উদ্দেশ্যে করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অপরাধ উদঘাটনের আগে মিডিয়ায় প্রকাশ যেন না করা হয়। যেমন মানব পাচার। এ ক্ষেত্রে যারা পেছনে থাকে, তাদের আগে ধরে তারপর মিডিয়ায় প্রকাশ করা যেতে পারে। না হলে পেছনের লোকেরা তদবির করে ছাড়া পেয়ে যায়।’

 

মানব পাচারে আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বলা হয়েছে, খুব ভালো একটা আইন হয়েছে। আমি আপনাদের সবাইকে বলব, খুবই খারাপ আইন হয়েছে। এখানে এ আইন কেন, এক হাজারটা আইন করেন। কোনোটাই হবে না। আমাদের পেনাল কোডের কিডন্যাপিং বা অ্যাবডাকশন আইন আছে। সেটাকে ঘষে-মেজে এ আইনটা করা হয়েছে। প্রশ্নটা হলো ইমপ্লিমেন্ট করা।’

 

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনগুলো চিন্তা চেতনা না করে করা হয়। আইনগুলোর উদ্দেশ্য, মোটিভ পাওয়া যায় না। আইনে ফাঁক থেকে যায়। যার ফলে আইন করার এক মাস/দুই মাসের মধ্যে সংশোধন করতে হয়। আমরা যেন হুজুগে আইন না করি।’

 

মামলার স্থগিতাদেশের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনগুলো সচেতনভাবে করা দরকার। তদন্ত ভালো করে করা দরকার। তাহলে মামলা স্থগিত হলেও সেগুলোর স্থগিতাদেশ তুলে দেব।’
‘সাম্প্রতিক মানবপাচার পরিস্থিতি এবং সমস্যা উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে এইচআইভি/এইডস, মানবপাচার, জনসংখ্যা ও অভিবাসন সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ এবং মানবাধিকার সর্ম্পকিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ।

 

ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাছান মাহমুদ আলী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপাক ড. মিজানুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, মেহজাবিন মোরশেদ এমপি, ইসরাফিল আলম এমপি, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এমপি প্রমুখ।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৫/মেহেদী/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়