ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পূর্বাচলে কনভেনশন সেন্টার হবে ১৩০ তলা

কে এম এ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ২৯ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পূর্বাচলে কনভেনশন সেন্টার হবে ১৩০ তলা

কে এম এ হাসনাত : ঢাকা মহানগরীসংলগ্ন পূর্বাচলে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক কনভেশন সেন্টার ও এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ খুব শিগগির শুরু হবে। কনভেনশন সেন্টারের মূল ভবনটি ১৩০ তলা হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে কথা ছিল কনভেনশন সেন্টারটি কেরানীগঞ্জে হবে। তবে কেরানীগঞ্জে কনভেনশন সেন্টার স্থাপন না হলেও সেখানে বড় আকারে নৌ-পথভিত্তিক পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে কেপিসি গ্রুপ। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

দেশের সর্বোচ্চ ভবন এই কনভেনশন সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কেপিসি গ্রুপ। ২০১৭ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শনিবার সরকারি ছুটির দিনে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রকল্প সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে কেপিসি গ্রুপের প্রধান বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ড. কালি প্রদীপ চৌধুরীসহ পূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রস্তাবিত কনভেনশন সেন্টার ও এক্সিবিশন সেন্টারের নকশাসহ বিভিন্ন বিষয় পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বলে সূত্র জানায়।

এর আগে ঢাকার কাছাকাছি একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও এক্সিবিশন সেন্টার স্থাপনের জন্য জায়গা নির্বাচনের জন্য পূর্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রেল মন্ত্রণালয় ও সড়ক বিভাগের প্রতিনিধিরা আছেন।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আগামী ২০১৬ সালে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) বার্ষিক বৈঠক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকটি যাতে নতুন কনভেনশন সেন্টারে করা যায়, সে বিষয়টি সামনে রেখে দ্রুত কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ অবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে জমি হস্তান্তরের আগেই প্রকল্প এলাকার মাটি পরীক্ষাসহ প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে বিনিয়োগকারী সংস্থা কেপিসিকে অনুরোধ জানান তিনি।

ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে এর আগে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। শুরুতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চীনকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তারা রাজিও হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কেপিসি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ড. কালি প্রদীপ চৌধুরী জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। সিলেটের এই ধনাঢ্য ব্যক্তি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগ্রহ দেখান।

সূত্র জানায়, কেপিসির সঙ্গে এরই মধ্যে বেশ কটি বৈঠক হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক অধিবেশনের সময়  ওয়াশিংটনে অবস্থানকালে প্রকল্পটি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কেপিসি চেয়ারম্যান ড. কালি প্রদীপ চৌধুরীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিকভাবে কেরানীগঞ্জে কনভেনশন সেন্টারটি নির্মাণের চিন্তা করা হয়েছিল। কিছু কারিগরী সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত পূর্বাচলে কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। কারণ কেরানীগঞ্জে যে স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছিল সেখানকার ভূ-প্রকৃতি প্রকল্পের উপযোগী নয়। সেখানে ১৩০ তলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

এদিকে পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জনা গেছে, পূর্বাচলে ২৪৫ একর জমি আছে। প্রকল্পটির জন্য ৫৬ দশমিক ৩ একর জমির প্রয়োজন হলেও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে  ৬০ একর জায়গা দেওয়া হবে।  বিনিয়োগকারীদের অবশ্য আরো বেশি জমির চাহিদা ছিল। পূর্বাচলে এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। কাজেই পূর্বাচলেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারী সংস্থাও এ বিষয়ে রাজি হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে প্রকল্প এলাকায় যেতে ১১টি প্রবেশ পথ রয়েছে। এখানে ছয়তলা বিশিষ্ট ৬ হাজার ২৮৩টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে।  এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বড় ভবন হবে। কনভেনশন সেন্টার ছাড়াও প্রকল্প এলাকায় আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল, হেলিপ্যাড, স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল, গলফ মাঠ, বয়স্কদের আবাসন, শপিংমলসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।

জানা গেছে, কনভেনশন সেন্টারে ৫ হাজার আসনের একটি গ্যালারি ও ৫০০ আসনের দুটি গ্যালারি থাকবে। থাকবে ২০০ আসনের ১০টি সেমিনার কক্ষ। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের প্রায় ১০০টি দফতর থাকবে। ক্যাফেটরিয়া, রেঁস্তোরা ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে উঠতে পারে। কাছাকাছি এলাকায় দুটি হোটেল, একটি শপিং প্লাজা ও একটি এক্সিবিশন হল রাখা হবে। থাকবে ৫০০ গাড়ি রাখার পার্কিং ব্যবস্থা।

গত ৮ অক্টোবর কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি লেখেন। এতে তিনি ১৩০ তলা কনভেনশন সেন্টারটি ২০১৭ সালের মধ্যে নির্মাণ করবেন বলে জানান। যদিও এই অল্প সময়ের মধ্যে এই বিশাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা দরুহ। তবু কেপিসি গ্রুপ প্রকল্পটি ওই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করবে।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৫/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়