ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পৃথিবীর বিস্ময়কর যত যুদ্ধ

উজ্জল বিশ্বাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৃথিবীর বিস্ময়কর যত যুদ্ধ

উজ্জল বিশ্বাস : যুদ্ধের পরিণতি সব সময়ই ভয়ংকর। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, জয়-পরাজয়, হানাহানি। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে মানুষের আবির্ভাবের সূচনালগ্ন থেকেই গোত্র, সমাজ, দেশ একে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।

 

যুদ্ধ নিয়ে আসে দুঃখ, কষ্ট এবং ভয়াবহতা। তারপরও বন্ধ হয়নি যুদ্ধ। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত হাজারো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এ যুদ্ধে কতশত মানুষ মারা গেছে তার হিসেব নেই। কেউ নিজেদের স্বাধীন করতে, কেউ অন্যের স্বাধীনতা হরণ করতে যুদ্ধে মেতে ওঠেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো যুদ্ধ ক্ষণস্থায়ী আবার কোনোটি দীর্ঘস্থায়ী। আবার এমনও কিছু যুদ্ধের ঘটনা রয়েছে, যেখানে কোনো প্রাণহানি হয়নি। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য যুদ্ধ নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

 

সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলো মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলা এ যুদ্ধে বিশ্বের সব পরাশক্তি দেশই জড়িয়ে পড়ে। দেশগুলো দুটি সামরিক জোট মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তিতে ভাগ হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

 

এ যুদ্ধে ৩০ দেশের ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। ছয় বছরব্যাপী এ যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রেরও প্রয়োগ হয়। যুদ্ধে প্রায় পাঁচ কোটি থেকে সাড়ে আট কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয় রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) ও চীনে।

 

দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ : বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হলো ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ। পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে মুসলমানদের অধিকার থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানশক্তি সম্মিলিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।  আরব দেশগুলো খ্রিস্টানদের সঙ্গে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ।

 

 

১০৯৫-১২৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছরব্যাপী খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ পরিচালনা করে। জেরুজালেমের পূণ্যভূমি দখল নিয়ে দুই-তিন দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছিল মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়। ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় নেতা পোপের নির্দেশে বুকে ক্রুশ চিহ্ন(☨) নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ক্রুশকে যুদ্ধের পতাকা হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলে এ যুদ্ধ ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত।

 

ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধ : জাঞ্জিবারের সুলতান সৈয়দ খালিদ ও ইংরেজদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধ বলা হয়। ১৮৯৬ সালের ২৭ আগস্ট এ যুদ্ধ হয়। মাত্র ৩৮ মিনিট ছিল এ যুদ্ধের স্থায়িত্ব। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সৈয়দ খালিদ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ব্রিটিশ নৌ-সেনাপতি অ্যাডমিরাল স্যার হ্যারিসন সৈন্যবাহিনী নিয়ে সুলতানের রাজপ্রসাদ অবরোধ করে গোলাবর্ষণ শুরু করলে মাত্র ৩৮ মিনিটের মাথায় জাঞ্জিবারের সুলতান পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেন ।

 

মৃত্যু ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ : যুদ্ধ চলে একটানা ৩৩৫ বছর। গুলি ছোড়া হয়নি একটিও। আহত বা নিহত হয়নি একজনও। ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ডাচরা নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করে। রাজকীয় বাহিনী বা পার্লামেন্টারিয়ান বাহিনী কোনো পক্ষকেই সেই সময় তারা সমর্থন দেয়নি। যে দল জিতবে তাদের পক্ষেই তারা যাবে- এমনই ছিল ডাচদের মনোভাব।

 

যুদ্ধে এক সময় পার্লামেন্টারিয়ানদের আধিপত্য বিস্তার হতে থাকে। রাজা চার্লসের অনুগত বাহিনী পিছু হঁটতে থাকে। হাতছাড়া হতে থাকে একের পর এক শহর। পার্লামেন্টারিয়ানদের জয় নিশ্চিত দেখে ডাচরা পার্লামেন্টারিয়ানদের সমর্থন দেয়। পার্লামেন্টারিয়ান বাহিনীর দাপটে রাজকীয় বাহিনী বলতে গেলে ইংল্যান্ড ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

 

রাজকীয় বাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল ইংল্যান্ডের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা কর্নওয়াল থেকে ৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ সিসিলি। গৃহযুদ্ধের শেষ বছর (১৬৫১) সিসিলিতে অবস্থানরত রাজকীয় বাহিনীর যুদ্ধজাহাজের আক্রমণে ডাচ নেভির একটি জাহাজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার পর ডাচ অ্যাডমিরাল মার্টেন হারপার্টজোন ১৬৫১ সালের ৩০ মার্চ রাজকীয় বাহিনীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। স্বাভাবিকভাবেই সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। ক্ষুব্ধ ডাচ অ্যাডমিরাল সিসিলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধ ঘোষণা করে অ্যাডমিরাল ট্রাম্প একটিও গুলি বা গোলা না ছুড়ে জাহাজ নিয়ে দেশে ফিরে যান। সে বছরই রাজকীয় বাহিনীকে হঁটিয়ে পার্লামেন্টারিয়ানরা সিসিলিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে তাদের সঙ্গে আর ডাচদের যুদ্ধ করার সুযোগ হয় না। একসময় ডাচরা তাদের এই যুদ্ধের কথা ভুলে যায়। 

 

নেদারল্যান্ডসের লন্ডন দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধের কথা স্বীকার করে নিলে রয় ডানকান   ডাচ কূটনীতিককে সিসিলিতে আমন্ত্রণ জানান শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৯৮৬ সালের ১৭ এপ্রিল ডাচ রাষ্ট্রদূত রেইন হাইডিকপার হেলিকপ্টারে করে লন্ডন থেকে সিসিলি আসেন এবং শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অবসান হয় একটি রক্তপাতহীন যুদ্ধের, রচিত হয় নতুন একটি ইতিহাসের। যুদ্ধ চলে একটানা ৩৩৫ বছর।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রহমান/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়