পোড়া দোকানেই স্বপ্ন বুনছেন ব্যবসায়ীরা
আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম
আহমদ নূর : মার্কেটের ভেতরে ঢুকতেই পোড়া গন্ধ। একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। রয়েছে অন্ধকারও। এর ভেতরেই কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা।
কেউ ময়লা সরাচ্ছেন। কেউ দেয়ালে লাগা কালো ধোঁয়া মুছছেন। রং দিচ্ছেন। অনেকে আগুনে পোড়া দোকানকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলছেন। আবার কেউ দোকানে নতুন মালামাল উঠাচ্ছেন।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এ মার্কেটে গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে আগুন লাগে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ধসে পড়া কাঁচা ও সুপার মার্কেট থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ভেতরে আগুনের কুণ্ডলিও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ডিএনসিসি মার্কেটের পাকা সুপার মার্কেটের ডি-৭ নম্বর আমিরুল ইসলাম ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায়, দোকানে নতুন করে রং করা হচ্ছে। মার্কেটে আগুন লাগার সময় যেসব মালামল নষ্ট হয়েছিল সেগুলো বের করে নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। আবার দোকানের সামনে নতুন মালামাল এনে রেখেছেন, যা পরবর্তী সময়ে তুলা হবে।
দোকানের মালিক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘যা হবার হয়ে গেছে। এখন নতুন করে আবার সব শুরু করতে চাই। পেছনের দিকে তাকালে তো আর সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে না।’
ক্যান্ডেল রোজ নামের ডি-৮ নম্বর দোকান নতুন করে ডেকোরেশন করা হচ্ছে। অন্ধকারে চার্জার লাইট জ্বালিয়ে দোকানে কাজ করছেন কর্মীরা। দোকানের মালিক মো. মোহসিন জানান, মার্কেটে ক্রোকারিজ ও ঘড়ির জন্য সবার পছন্দের দোকান ছিল ক্যান্ডেল রোজ। নান্দনিক ডেকোরেশনের জন্য মূলত ক্রেতারা এখানে আসতেন। কিন্তু আগুনে দোকানের মালামালের সঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের ডেকোরেশন নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে আবার সবকিছু করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে কী হয়েছে তা এখন আর ভাবতে চাই না। নতুন করে ব্যবসাটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
নূর হার্ডওয়ারের কর্মচারী সুলেমান মিয়া বলেন, ‘মালিকের সঙ্গে মিলে কাজ করছি যেন তাড়াতাড়ি দোকান খোলা যায়। দোকান খোলা গেলে আমাদের আবার কাজের সুযোগ তৈরি হবে। মালিকও কিছুটা লোকসান থেকে বাঁচবে।’
মার্কেটের সি-৪ নম্বর দোকান আনোয়ার ব্রাদার্সে কাজ করেন দিলিপ বিশ্বাস। আগুন ও ধোঁয়ায় দোকানের সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খালি দোকান নিয়ে বসে আছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগুনে তো সব নষ্ট হয়ে গেছে। তাই খালি দোকান নিয়ে বসে আছি। শনিবার থেকে দোকানে মালামাল তুলা হবে।’
এর আগে সকালে ডিএনসিসি মার্কেটে দোকান না খোলার আহ্বান জানান করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশনের। মার্কেট খোলা হবে কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে করপোরেশন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তৈরি করা একটি প্রতিনিধিদল মার্কেট পরিদর্শন করবেন। তারা যে প্রতিবেদন আমাদের দেবেন তার ওপর ভিত্তি করে মার্কেট খোলা বা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে মেয়রের এমন বক্তব্যের এক ঘণ্টা পর ব্যবসায়ী সমিতি নির্দেশে ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা শুরু করেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জানুয়ারি ২০১৭/আহমদ নূর/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন