ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হবে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৫, ৩ জুন ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হবে

কেএমএ হাসনাত : প্রদর্শীত জাতীয় মোট উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। বাজেটের আকার প্রস্তাব করা  হতে পারে দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

 

আজ জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন, আর বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এই নিয়ে জাতিকে টানা সাতটি বাজেট দেওয়ার নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তিনি।

 

এর আগে এইচএম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮২-১৯৮৩ অর্থবছর ৪৭৩৮ কোটি টাকার এবং ১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থবছর ৫৮৯৬ কোটি টাকার দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। তবে ১২টি বাজেট দিয়ে প্রয়াত সাইফুর রহমান সর্বোচ্চ সংখ্যক বাজেট প্রণয়নের রেকর্ড ধরে রেখেছেন।

 

অর্থমন্ত্রী মুহিত এবারের বাজেট দিতে গিয়ে বেশ কটি নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। টানা সপ্তমবার বাজেট দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি তার মত ৮২ বছর বয়সে বিশ্বের আর কোনো দেশের অর্থমন্ত্রীর বাজেট দেওয়ার নজির নেই। প্রতিবারই তার বাজেট বক্তৃতার আকার বেড়েছে, এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।   

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি অর্থবছর বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তা কোনবারই অর্জন করা সম্ভব হয় না। ফলে এ নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে হলে প্রতিবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপর রাখতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নানা ধরনের রাজনৈতিক বৈরি অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আর এ কারণে আসন্ন বাজেটে জিডিপির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে আসন্ন ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে।

 

সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তা  থাকছে না।  বাজেটের আকার দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।

 

আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিটি বাজেটে বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবছরই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছেন। আর এ নিয়ে নানা সমলোচনার মুখেও তাকে পড়তে হয়েছে। তবে এবারের বাজেটে সম্পদ আহরণে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়নো হচ্ছে।

 

রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বছরের মত আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকারও বড় হবে। আমি সব সময় উচ্চাভিলাষী। উচ্চ আকাঙ্ক্ষা না থাকলে বড় হওয়া যায় না। দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়াতে হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়াতে বেশ কিছু নতুন  উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি সার্ভে করেছে। এতে তারা নতুন কিছু খাত চিহ্নিত করেছে। আশা করছি রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে সেটি অর্জন করা সম্ভব হবে।’

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবার ব্যক্তি করের আওতা বাড়ানোর ইচ্ছা ছিল। তা হচ্ছে না। তবে বড় একটা অংশকে করের আওতায় নিয়ে আসব। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কর দেয় মাত্র ১১ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার দশমিক ১ শতাংশের কম। এটা লজ্জার বিষয়। এটা হতে পারে না। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এ হার অত্যন্ত কম। তবে দেশে করদাতার সংখ্যা যে করেই হোক বাড়াব। এনবিআর একটা জরিপ করেছে। কিছু নাম-টাম পেয়েছে। তাদেরকে এবার করের আওতায় আনা হবে। আর এ সংখ্যাও কম নয়।’

 

জানা গেছে, ড.নাসিরউদ্দিন আহমদ এনবিআরের চেয়ারম্যান থাকাকালে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। এতদিন ওই সমীক্ষাটি অনুসরণ করায় কর আদায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। এবার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমীক্ষা  করিয়েছে। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ লাখ মানুষকে করের আওতায় আনা সম্ভব।  এবারের বাজেটে তাদের করের আওতায় আনা হচ্ছে। এ জন্য কর প্রশাসনকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া বাড়ির মালিকদেরকেও করের আওতায় আনতে চলতি অর্থবছর যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।

 

সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে জ্বালানী তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা থাকলেও তা সমন্বয় হচ্ছে না। বাজেটের পর জ্বালানী তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। বাজেটে শিশু বাজেট, ছিটমহলবাসী ও সমাজে অবহেলিত হিজড়া ও দলিত শ্রেণীর মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকবে বলে জানা গেছে। এছাড়া করপোরেট কর কমানো হচ্ছে, করযোগ্য ব্যক্তি আয়ের হার আড়াই লাখ টাকা করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। শেয়ার বাজার বর্তমানে যথেষ্ঠ স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজারের জন্য নতুন কোনো প্রস্তাব থাকছে না। তবে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুন ২০১৫/হাসনাত/রুহুল

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়