ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁসে সরকার সংশ্লিষ্টরা জড়িত: টিআইবি

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৫ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রশ্ন ফাঁসে সরকার সংশ্লিষ্টরা জড়িত: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকার সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ জড়িত বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

 

একই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসের প্রক্রিয়ার সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একাংশের সম্পৃক্ত রয়েছে। আর এ কাজে প্রশ্ন প্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লেনদেনের হওয়ার তথ্য সংস্থাটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

 

রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বুধবার দুপুরে ‘পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস : প্রক্রিয়া, কারণ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবি এক গবেষণ প্রতিবেদনে ওই তথ্য উঠে এসেছে।

 

গবেষণা পরিকল্পনা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায়, নীনা শামসুন নাহার ও রুমানা শারমিন। গবেষণাটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই সময়কালের মধ্যে পরিচালিত হয়।

 

টিআইবির গবেষণার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রশ্ন ফাঁস ও ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়ানো ও বাজারজাতকরণে সম্ভাব্য অংশীজনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান জড়িত। একই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একাংশ সরকারি নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, গাইড বই ব্যবসায়ী, ফটোকপিয়ার, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন এবং মোবাইল, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে।

 

প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পূর্বে, প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর এবং পরীক্ষায় প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর এককভাবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং দলগতভাবে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, গবেষণায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি উচ্চপর্যায় থেকে অস্বীকারের প্রবণতা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার তথ্যও উঠে এসেছে।

 

গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রশ্ন প্রণয়নের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, ম্যানুয়াল পদ্ধতির সঙ্গে অনেকের সম্পৃক্ততাও প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। গবেষণায় প্রশ্ন ফাঁসের তিনটি পর্যায়ের মোট ১৯টি ঝুঁকি চিহ্নিত করা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- একই শিক্ষকের প্রতিবছরই প্রশ্ন প্রণেতা ও মডারেশনকারী হিসেবে নিয়োগ, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকে পুঁজি করে ওই সকল শিক্ষকদের নিজ স্কুল ও কোচিং সেন্টারে অর্থের বিনিময়ে সাজেশন বিতরণ, ম্যানুয়ালি গণনা ও কম্পোজ করা, প্রশ্নগুলো কম্পোজের পর প্রুফ দেখার সময় এবং ছাপানোর কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রশ্ন মুখস্ত করা এবং বোর্ডের একাংশের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস ও পরবর্তী সময়ে মোবাইল ফোন, ইমেইল, ফেইসবুক, ভাইবারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো ইত্যাদি।

 

গবেষণায় প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধে সরকারি কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ২০১৪ সালে পিইসিই ও ২০১৫ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার, থানায় অভিযোগ ও মামলা দায়ের, পরীক্ষা কেন্দ্র স্থগিত, ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা স্থগিত করাসহ নজরদারি বৃদ্ধি করা, প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিজি প্রেসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, পেপার ডিটেক্টর, ভল্ট ডোর, নতুন গোপন ক্যামেরা, সিসিটিভি বসানো হয়েছে এবং মুদ্রিত প্রশ্ন সিলগালা করতে স্ট্রংরুম তৈরি করা ইত্যাদি।

 

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি ভাগিদার রয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ের ভাগিদারদের যোগসাজশ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সম্ভব নয়। তাই প্রশ্নপ্রত্র প্রণয়নে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

 

গত চার বছরে (২০১২-২০১৫) বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় মোট ৬৩টি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগসহ বেশ কিছু তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে এ প্রবণতা শুরু হয়। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও গত পাঁচ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ একটি নিয়মিত ঘটনা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরের বিভিন্ন সময়ে মোট ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পিইসিই ও জেএসসি পরীক্ষার সবগুলো পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগের তথ্য পাওয়া যায়।

 

গবেষণায় উত্থাপিত সাত দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো- শাস্তির মাত্রা চার বছরের পরিবর্তে পূর্বের ন্যায় ১০ বছর নির্ধারণ ও প্রয়োগ, কোচিং সেন্টার নিষিদ্ধকরণে সরকারের ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ এর অস্পষ্টতা দূর করা এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশ্ন ফাঁস রোধ ও সৃজনশীল পদ্ধতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গাইড বইয়ের আদলে প্রকাশিত সহায়ক গ্রন্থাবলী বন্ধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ, প্রশ্ন প্রণয়ন ছাপানো ও বিতরণের কাজটি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ, প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গঠিত যেকোনো তদন্ত প্রতিবেদনের ফল জনসম্মুখে প্রকাশ এবং প্রশ্ন ফাঁস রোধে বহুনির্বাচনী প্রশ্নব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে রহিতকরণ ইত্যাদি।

 

টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ আগস্ট ২০১৫/এম এ রহমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়