ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সবকিছু বিবেচনা করে বাল্যবিবাহ আইন হয়েছে’

এনআর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সবকিছু বিবেচনা করে বাল্যবিবাহ আইন হয়েছে’

সংসদ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবকিছু বিবেচনা করে বাল্যবিবাহ আইন করেছি। এটা একটা বাস্তবতাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।

 

বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

 

গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬ খসড়া অনুমোদন হয়েছে। এতে মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ে না দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তাতে বিশেষ ক্ষেত্রে বিয়ের প্রসঙ্গটি ১৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে- বিশেষ ক্ষেত্রে আদালত ও অভিভাবকের সম্মতি নিয়ে নির্ধারিত বয়সের আগেও বিয়ে দেওয়া যাবে।

 

বাল্যবিবাহ আইনের বিশেষ ধারা নিয়ে সমালোচনাকরীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাল্যবিবাহ আইনে বিশেষ নিয়ে অনেক কথা বলতে পারেন। কারণ সমাজে তাদের দায়-দায়িত্ব খুব কম। কারণ তারা দুটো এনজিও করে পয়সা কামায়।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সরকার প্রধান হিসেবে বলবো, আমি যতক্ষণ সরকারে আছি তখন আমি মনে করবো এই দায়িত্ব আমার। সন্তানটাকে সমাজে তার একটা স্থান করে দেওয়া। সেজন্যই আমরা বিশেষ বিধানটাকে রেখেছি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থাটা বিবেচনায় নিতে হবে। যারা কোনোদিন গ্রামে বাস করেননি, গ্রামের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের কোনো বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, শুধু একবার গেলাম আর দেখলাম, মুখের কথা শুনলাম- এতেই সমাজ ব্যবস্থা জানা হয় না।’

 

বাল্যবিবাহ আইনের বিশেষ ধারা নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে সংসদ নেতা বলেন, ‘দিনের পর দিন গ্রামে যদি কেউ বসবাস করে থাকে বা গ্রামে জন্ম নিয়ে থাকে তাহলেই গ্রামের বাস্তব পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারে এবং জানতে পারে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমি জানি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে অনেক কথা বলছেন এবং যারা কথা বলছেন- তারা কিন্তু গ্রামে দুই বছর একটানা কোনো গ্রামীণ পরিবেশে বা পরিবারের সঙ্গে থাকে নাই। গ্রামের পারিবারিক সমস্যা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তাছাড়া আমাদের দেশে কিছু বিষয় আছে। সে বিষয়গুলো সম্পর্কেও তারা কখনো চিন্তা-ভাবনা করেন না। যে কারণেই তাদের অনেকেই অনেক বড় বড় কথা বলেন।’

 

বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আইনটি সংশোধন হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তবে কেন লাগালাম, এটা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠছে। যেহেতু তারা বাস্তবতার অনেক উর্ধ্বে রাজধানীতে বসবাস করছে। রাজধানীর পরিবেশটাই তারা দেখে। বাস্তব অর্থে গ্রামীণ পরিবেশ সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।’

 

‘প্রত্যেক আইনেই খুব রিজিট হতে পারে না। প্রত্যেক আইনেই নিশ্চয়ই কোনটা বিশেষ অবস্থার সুযোগ রাখতে হয়’ বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

 

তিনি বলেন, ‘কোনো একটা অনাকাঙ্খিত অবস্থার সৃষ্টি হলে সেখানে কি করণীয় হবে? তার একটা সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। আর সেটা যদি না দেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য একটা বিপর্যয় নেমে আসবে।’

 

এক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের নির্ধারিত আইনের বয়সসীমা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা মেয়ে যে কোনো কারণেই হোক যদি ১৩/১৪, ১৫ বছরের সময় গর্ভবতী হয়ে গেল। তাকে অ্যাবরশন করানো গেল না। তাহলে যে শিশুটি জন্ম নেবে সেই শিশুটির অবস্থান কি হবে? তাকে কি সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধ বলে কেউ নেবে? নেবে না? তাহলে ওই বাচ্চাটার ভবিষ্যৎ কি হবে? তার ভাগ্যে কি জুটবে? এরকম যদি কোনো একটা ঘটনা ঘটে?’

 

‘তবে যদি অ্যাবরশন করা আইন এখানে হয় তাহলে সমস্যা নেই। আর তা যদি না হয় তাহলে যে মেয়েটার সন্তান হল তার ভবিষ্যৎ কী? যে সন্তানটার জন্ম হল তার ভবিষ্যৎ কী?’

 

‘আর সেখানে যদি বাবা-মা এবং আদালতের মতামত নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মেয়ের জীবনটাও বেঁচে গেল আর যে বাচ্চাটা হল তারও একটা বৈধতা পেল এবং ওই শিশুটার একটা ভবিষ্যৎ থাকল।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে বা ওয়েস্টার্ন দেশের অনেক দেশে বিয়ের বয়সই হচ্ছে ১৪ বছর। কোথাও আবার ১৬ বছর। কিন্তু এসব জায়গায় টিনএজ মাদারের সংখ্যা অসংখ্য। এটা একটা সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। কারণ  ওই সমস্ত বাচ্চা মায়েরা কখনো অ্যাবরশন করতে চায় না। বাচ্চা হওয়ার পর ওই মা দুই তিন বছর বাচ্চাটাকে পালন করে। তারপর তার মায়ের কাছে রেখে চলে যায়। ওই দেশে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে কেউ প্রশ্ন করবে না অবৈধ সন্তান না বৈধ সন্তান।’

 

‘কিন্তু আমাদের দেশে কি হবে? বাবার নাম কি, মায়ের নাম কি? সমস্ত তথ্য দিতে হবে। না হলে ওকে কেউ ভর্তি নেবে না। আবার বিয়ে দিতে গেলে ছেলে হোক মেয়ে হোক বলবে অবৈধ সন্তান বিয়ে হবে না। তাদের কেউ চাকরি দেবে না। কিন্তু ওয়েস্টার্ন দেশে এটা তো কোনো বিষয় না। তারা এটা গ্রহণ করে নেয়’ বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ডিসেম্বর ২০১৬/এনআর/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়