ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

প্রেমে পড়লে শরীরে যা ঘটে

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রেমে পড়লে শরীরে যা ঘটে

মডেল: টগর ও ফিটন খান, ফটোগ্রাফি: অপূর্ব খন্দকার

মোখলেছুর রহমান : আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিনে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে পালন করবে জীবনের অনিন্দ সুন্দর এই সম্পর্কটি। কিন্তু ভালোবাসা আসলে কি? বিজ্ঞানীরা এই সম্পর্কটিকে কিভাবে দেখেন?

 

যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা সংবাদপত্র ডেইলি মেইল এই প্রশ্নটি নিয়েই হাজির হয়েছিলেন মানুষের মনস্তাত্বিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা ‘মাই ব্রেস্ট’ এর একদল গবেষকদের কাছে।

 

গবেষকদের মতে, বর্ধিত হৃদস্পন্দন, ঘর্মাক্ত মুখমন্ডল এবং ক্ষুধামান্দ্য-এসব কিছুই একজন মানুষের প্রেমে পড়ার লক্ষণ। ভালোবাসা বলতে শুধু অবিরাম একটি সম্পর্কে জড়ানোকেই বুঝায় না। সেখানে বিভিন্ন রাসায়ন, নিউরন এবং হরমোন অনুক্রমে একসঙ্গে কাজ করে যা আমাদেরকে অন্য কারো প্রতি আসক্ত হতে সাহায্য করে।

 

‘মাই ব্রেস্ট’ এর একদল গবেষকদের একটি ইনফোগ্রাফিক তৈরি করেছেন যাতে ভালোবাসার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে, এই প্রক্রিয়ার সময় আমাদের মন ও দেহে কি ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

 

তারা ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘প্রেম একটি শক্তিশালী আবেগ যা সর্বজনীনভাবে মানুষের দ্বারা অনুভূত হয়। তা সত্ত্বেও আমাদের এই অনুভূতির কারণ সবচেয়ে রহস্যময় এবং এখনো অধরা রয়ে গেছে আমাদের কাছে। তবে আমরা একবার স্ক্র্যাচ করে আমাদের মনের ইচ্ছা, প্রেম এবং অন্যের প্রতি মোহ বা টান অনুভব করার পেছনে একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছি।’

 

‘শরীরের হরমোন এবং অণুর সমন্বয় সম্পর্কের তিনটি পর্যায়-কাম, আকর্ষণ এবং সংযুক্তি, যা আমাদের প্রেমে গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে। এবং প্রতিটি ধাপেই আলাদা আলাদা রাসায়ন কাজ করে যা আমাদের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।’

 

গবেষকদের মতে, ইতিহাসের প্রতিটি প্রেম কাহিনি রাসায়নিক ডোপামিন দিয়ে শুরু হয়েছিল যা মস্তিষ্ক ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি হতে উৎপাদিত হয়।

 

আধুনিক মনোবিদ্যা অনুযায়ী, এই রাসায়নিক উপাদান হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, অনেক অঙ্গ, ঘাম গ্রন্থি এবং অঙ্গকে প্রভাবিত এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূলত জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। যদি আপনি একটি সম্পর্ক প্রাথমিক পর্যায়ে অধিক ঘামেন তবে এর জন্য ডোপামিনকে দায়ী করা যেতে পারে। এর দ্বারা আপনার মেজাজ এবং আবেগ প্রভাবিত হয়, যা ব্যাখ্যা করে কেন আপনি মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত বা স্বাভাবিকের চেয়ে সুখী হন।

 

আপনার শরীর এই ক্ষমতাশালী রাসায়নিক উপাদান দ্বারা পূর্ণ হওয়ার পরে আপনি কাম পর্যায়ে প্রবেশ করেন, যা যৌন হরমোন টেসটোসটের এবং ইস্ট্রজেন দ্বারা চালিত হয়। এই হরমোন আপনাকে একটি সঙ্গী খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং এটি আপনার যৌন চাহিদার জন্য দায়ী প্রধান হরমোন। একবার যদি আপনি কাউকে কামনা করতে শুরু করেন, এরপর আপনি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবেন।

 

ভালোবাসার যাত্রার এই অংশ ডোপামিন এবং নরপাইনফ্রাইন দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা পরে সেরোটোনিন মাত্রায় হ্রাস পেয়ে একসঙ্গে মিলিত হয়।

 

ইনফোগ্রাফিক অনুযায়ী ‘যখন দুইজন মানুষ একে অপরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে তখন এই ককটেলের চনমনে ও উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায় এবং তাদের কাছাকাছি হওয়ার ইচ্ছাও বৃদ্ধি পায়।’

 

মাই ব্রেস্ট এর গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন যে, এই আকর্ষণের শারীরবৃত্তীয় কিছু লক্ষণ আছে যেমন-হৃদস্পন্দন, ঘাম এবং বর্ধিত শ্বাস শক্তি।

 

এটা সম্ভব যে কেউ কারো প্রতি অনেক বেশি আকর্ষণ অনুভব করলে এইসব রাসায়নিক পদার্থের একটি বড় অংশ শরীর থেকে বের হয়ে আসে এবং এইভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, তবে এটা পরিমাপ করা কঠিন। আপনি যখন কারো প্রতি আসক্ত হন তখন নিউরোট্র্রান্সমিটার নরপাইনফ্রাইন এবং হেনিলেথিলেমিন (মটর) কারণে তার প্রতি আপনার ফোকাস অতিরিক্ত হয়।

 

কিন্তু যদি কোনো কারণে আপনার এই সম্পর্ক ব্যর্থ হয় তখন এই রাসায়নিক উপাদানের মাত্রাও কমে যায়  যা আপনার মনটা খারাপ হওয়া এবং আপনার দুঃখে খেতে না পারার মত কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

এখন আপনি যে বিশেষ কারো প্রতি আকর্ষণ অনুভব করছেন, খুব শীঘ্রই আপনি তার সংযুক্ত হয়ে যাবেন। দুইজনের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী সংযুক্তির পেছনে হরমোনের বিভিন্ন সেট জড়িত।

 

যেমন অক্সিটসিন এবং পিটুইটারি গ্রন্থি-নিঃসৃত একরকম হরমোন যা ক্রিয়া কমায় ও রক্তচাপ বাড়ায়। এর মানে দাড়ায় যে অক্সিটসিন এবং পিটুইটারি গ্রন্থি-নিঃসৃত একরকম হরমোন যা ক্রিয়া কমায় ও রক্তচাপ বাড়ায় এবং এটি মানুষের বিবাহ করার পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

 

এ প্রসঙ্গে মাই ব্রেস্ট এর গবেষকরা বলেন, এটা ঠিক যে বিজ্ঞান একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের পিছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। তার মানে এই নয় যে, এটিই ধ্রুবক সত্য। সম্পর্কের জটিলতার কারণে এটা বলা কঠিন যে একটি সম্পর্ক কখনো বিবর্ণ হবে না।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়