ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফিলিস্তিনিরা ফরাসিদের মতোই মানুষ

রহমান সিদ্দিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিলিস্তিনিরা ফরাসিদের মতোই মানুষ

হাদিল হত্যার বিচার দাবিতে দেয়ালজুড়ে পোস্টার

রহমান সিদ্দিক : সব রাস্তাই এখন প্যারিসের দিকে। দুই সপ্তাহ আগে শিল্প-সাহিত্যের তীর্থভূমি প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত ও মর্মাহত। শিল্পী-সাহিত্যিকমহলে একটি প্রচলিত কথা আছে- তাদের দুইটা জন্মভূমি; একটি তার নিজ দেশ, অন্যটি প্যারিস। স্বভাবতই ফরাসি বিপ্লবের এই দেশে এমন সন্ত্রাসী হামলা যেকোনো বিবেকবান মানুষকেই নাড়া দেবে। দিয়েছেও তাই।

 

কিন্তু বিবেকের পথ খোঁজার জন্য তো কেবল মহাসড়ক দিয়ে হাঁটলে চলবে না, কানাগলিতেও ঢুঁ মারতে হবে। তেমনই এক কানাগলির নাম ফিলিস্তিন। গণ্যমাধ্যম থেকে শুরু করে বিশ্বরাজনীতির সব আলো এখন প্যারিসের দিকে; মানুষের চোখও তাই সেখানেই নিবিষ্ট। আমাদের দিকে কটাক্ষ নিয়ে তাকিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের প্রতি নজর দেওয়ার সময় কই।

 

সিরিয়া, বাশার, আইএস, প্যারিস হামলা, শরণার্থী, পুতিন, ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী বিতর্ক, রাশিয়ার বিমান ভূপাতিত, রুশ-তুর্কি বাকযুদ্ধ- এসব এখন গণমাধ্যমের শিরোনাম। প্রতিদিনই ফিলিস্তিনের কাউকে না কাউকে হত্যা করা হচ্ছে। ছোট করে তার সংবাদ হয়তো প্রকাশ হচ্ছে, কিন্তু খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টি না হলে এসব নজর এড়িয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।

 

ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী! পশ্চিমাদের এ সংজ্ঞা নতুন কোনো বিষয় নয়। নিজভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে যখন অস্ত্র হাতে তাদের ভূমি রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়, তখন থেকে পশ্চিমাদের চোখে তারা সন্ত্রাসী। বছর দুইয়েক আগে গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে শিশুসহ কমপক্ষে দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে বোমার আঘাতে, গুলি করে হত্যা করা হলো, তখন ইসরাইল সন্ত্রাসী নয়; তারা আত্মরক্ষার জন্য এসব করেছে।

 

এতো গেল পুরনো কথা। গত দুই মাস ধরে কী হচ্ছে পশ্চিম তীরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে? এই স্বল্প সময়ের মধ্যে দুই শতাধিক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে, গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছে দখলদার ইহুদি ও ইসরাইলি সেনা-পুলিশ। আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ১০ হাজার। এই হিসাব খোদ জাতিসংঘের। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, কিছু ফিলিস্তিনির ছুরিকাঘাতে এই সময়ের মধ্যে একুশজন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা এক অনুপাত দশ হলেও ঘটছে। অথচ কোনো মৃত্যুই কাম্য ছিল না।
ইসরাইলি পুলিশ-সেনাবাহিনী বর্বতার পরাকাষ্টা দেখিয়েই চলেছে। তাদের কমান্ডো বাহিনী হাসপাতালে পর্যন্ত গিয়ে গুলি করে হত্যার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর হেবরনের আল আহলি হাসপাতালে একুশ সদস্যের একটি কমান্ডো বাহিনী আজম আল শালালদেহকে খুঁজতে যায়। ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে আহত হয়ে শালালদেহ ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেনারা যখন শালালদেহর খুঁজে হাসপাতলিটতে ঢুকে হইচই করছিল, এমন সময় তার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বাথরুম থেকে বের হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করে। আর সঙ্গে সঙ্গে তাকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে কমান্ডোরা। ঝাঁজরা হয়ে যায় আব্দুল্লাহর শরীর। এরপর হাসপাতালের বিছানা থেকে আহত শালালদেহকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সেনারা। তার পরিণতি কী হয়েছে, এখনো কেউ জানে না। এতো গেল ইসরাইলি সেনাদের বর্বরতা।  বর্বরতায় পিছিয়ে নেই বেসামরিক ইহুদিরাও। গত সোমবার পশ্চিমতীরে ১৪ বছরের স্কুলবালিকা হাদিল আওয়াদের মৃত্যুকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করব। সে তো ছুরি নিয়ে কাউকে আঘাত করেনি। পাথর ছুড়ে মারেনি ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে। প্রখর মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের হাদিল ক্লাসে সব সময়ই প্রথম হতো। পরীক্ষায় তার গড় নম্বর ৯৬। ভাবা যায়!  অন্যদিনের মতো সোমবার একটু মধু ও দুটো খেঁজুর খেয়ে পরিপাটি করে সেজেগুজে স্কুলে যায় হাদিল। কে জানতো সেটাই তার শেষ যাওয়া। স্কুল শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে মজা করতে করতে যখন বাইরে বের হচ্ছিল, কোনো কিছু বোঝার আগেই এক ইহুদি যুবক তাকে লক্ষ্য করে পর পর কয়েকটি গুলি ছোড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে হাদিল।
ইসরাইলি সেনা-পুলিশ ফিলিস্তিনিদের হত্যা তো করছেই, তাদের নাগরিকদেরও অস্ত্র রাখার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। আর সেই অস্ত্র দিয়ে একের পর এক ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে গত মাসে ইসরাইলের একটি সংস্থা জরিপ চালায়। জরিপে ৫৩ শতাংশ ইসরাইলি বিচারবহির্ভূত হত্যার পক্ষে রায় দেয়।

 

ফিলিস্তিনের নাগরিকদের যেভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, তা ভয়াবহতার দিক দিয়ে প্যারিস হামলার চেয়ে কোনো অংশে কম কী? প্যারিস হামলা যদি সন্ত্রাসী কা- হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলাকে কীভাবে আখ্যায়িত করা যাবে।

 

সন্ত্রাসের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয় পশ্চিমারা। সময়ের পরিক্রমায় এ সংজ্ঞা আবার পাল্টে যায়। পাল্টায় পশ্চিমারাই। গত শতকের আশির দশকের পর থেকে সন্ত্রাসের নতুন সংজ্ঞা নির্বাচন করেছে ইউরোপ-আমেরিকা। মুসলিমরা অসভ্য, বর্বর ও সন্ত্রাসী! তাদেরকে শায়েস্তা করতে হবে। এ হলো পশ্চিমাদের এজেন্ডা। এর আগে ছিল কমিউনিস্টরা। এক সময় কমিউনিস্টরা ছিল অসভ্য ও বর্বর। তাদের শায়েস্তা করার জন্য কোরিয়া, ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনীর গণহত্যা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোও তাদের অস্তিত্ব হারিয়েছে। তাদের শক্তি যেহেতু খর্ব হয়েছে, তাদের নিয়ে আমেরিকাকে আর না ভাবলেও চলে। এখন নতুন করে ভাবতে হবে ইসলাম নিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর মার্কিন জ্ঞানজীবী ফ্রান্সিসকো ফুকোয়ামা যে ‘সভ্যতার সংঘাতের’র তত্ত্ব নিয়ে এসেছেন, এ সংঘাত আসলে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইসলামের। এখন মুসলমানদের সন্ত্রাসী না বানালে তাদের সাম্রাজ্যবাদী ব্যবসায় যে ভাটা পড়ে।

 

 

প্যারিস হামলার পর দুজন ব্যক্তির কথা খুব মনে পড়ছে। সমসাময়িক এই দুই চিন্তাজীবী এক সময় প্যারিসের রাস্তায়, ক্যাফেগুলোতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। একজন হলেন, অস্তিত্ববাদী দার্শনিক জ্যঁ পল সার্ত্র; অন্যজন তারই বন্ধু উপন্যাসিক ও দার্শনিক আলব্যের কামু। সন্ত্রাস নিয়ে পশ্চিমাদের সংজ্ঞার পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য এখন আর তাদের মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কামু নিজেকে মূলত দার্শনিক বলে দাবি করেননি; তার উপন্যাসের মধ্য দিয়েই তার যা কিছু দার্শনিক বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। তবে তার দুটি উল্লেখযোগ্য বই ‘রেবেল’ ও ‘মিথ অব সিসিফাস’-এ কিছু দার্শনিক বক্তব্য সন্নিবেশিত হয়েছে। এ বই দুটি আসলে তার উপন্যাসেরই সার কথা। কামুর ‘রেবেল’ ছিল প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। তার বিশ্লেষণ ছিল ‘আমরা এখন একটি পরিকল্পিত ও খাঁটি অপরাধপ্রবণতার যুগে বাস করছি।’ বিশ্বের সব ঘটনা যে পশ্চিমাদের পরিকল্পনা বা নকশা অনুযায়ী চলছে, তা কামু আগেই স্পষ্ট করেছেন। তার ভাষ্য গত শতকের পঞ্চাশের দশকের; কিন্তু তা এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। কেন প্রাসঙ্গিক তার উত্তর মিলবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টের বাকচালে।

 

রুজভেল্ট মার্কিনিদের কাছে মহান প্রেসিডেন্ট বলে খ্যাত ছিলেন। গত শতকের গোড়ার দিকে বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্তা ছিলেন চৌকস এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্ট্রেনাস লাইফ’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের জাতীয় ইতিহাস রাজ্য জয় এবং বিস্তারের ইতিহাস। অধম বর্বরদের হয় পালাতে হবে, নয় পরাজিত হতে হবে- এই তো নিয়ম। কারণ যারা শক্তিধর এবং সভ্য তারা কখনো যুদ্ধের স্পৃহা হারিয়ে ফেলে না।’

 

১৪৯২ সালে বাহামা দ্বীপপুঞ্জে যে কলম্বাস বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল, রুজভেল্টের ভাষায় ওই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা ছিল অধম বর্বর। ফলে সেখানকার ভূমিপুত্রদের নির্বিচারে হত্যার মধ্য দিয়ে আসলে কলম্বাস পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছে। এরপর রুজভেল্টের উত্তরসুরীদের ভাষায় কমিউনিস্টরা ছিল একই রকমের বর্বর; ফলে কোরিয়া, ভিয়েতনামে চলেছে গণহত্যা। এখন নতুন করে তারা আবিষ্কার করল মুসলমানরা বর্বর। তাদেরকে শায়েস্তা করতে কামুর ভাষায় নতুন নকশা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের এই নকশা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে তালেবান, আল কায়েদা ও আইএস। কারণ রুজভেল্টের উত্তরসুরীদের যুদ্ধের স্পৃহা বজায় রাখার জন্য যুদ্ধক্ষেত্র দরকার। আর সেই যুদ্ধক্ষেত্রের নাম ইসলামি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী!

 

বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় কামুর মতো আরেকজন প্যারিসের কণ্ঠস্বর জ্যঁ পল সার্ত্রের অভাব অনুভূত হচ্ছে। সার্ত্রে ছিলেন আরেক ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলেরে নেতৃত্বে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। রাসেল ট্রাইব্যুনাল ভিয়েতনামে অজস্র যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার কারণে আমেরিকাকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছিল। রাসেল ট্রাইব্যুনালের কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না; ওটা ছিল একটি বিবেকি ট্রাইব্যুনাল। ফলে আমেরিকাকে অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। কিন্তু বিবেকি মানুষের কাঠগড়ায় আমেরিকা আজন্ম অপরাধী।

 

মানুষ নিয়ে সার্ত্রের একটি অদ্ভুত মূল্যায়ন আছে। সার্ত্রের চোখে ‘মানুষ স্রেফ আছে’ (ম্যান ইজ সিম্পলি ইজ)। তার ওপর নেই, পেছন নেই, সামনে নেই। স্রেফ মানুষ। এই ‘স্রেফ’ শব্দটি দিয়ে তিনি শুধু মানুষের কাঠামোটাকেই বুঝিয়েছেন, আর কিছু নেই। না হলে আজকের প্যারিস হামলার পর ফরাসিরা অন্তত সন্ত্রাসের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারতো। তারা আমেরিকা-ইসরাইলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারতো। কারণ এর জন্যই তো এ দুটি রাষ্ট্রই মূলত দায়ী।

 

আজকের মানুষের মনোজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে গণমাধ্যমগুলো। ১৪৯২ সালে দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। এক কলম্বাসের আটলান্টিকের ওপার যাত্রা। দুই মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার। একে অন্যে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলেছে তারা। এই দুই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউরোপীয়রা বিশ্বব্যাপী তাদের উপনিবেশ স্থাপন করতে পেরেছে। এখনো ছাপা হওয়া কালো অক্ষরগুলো পশ্চিমাদের নির্দেশ মেনে চলে। সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপ-আমেরিকা এই মাধ্যমটিকেই তাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। আজকে এই গণমাধ্যমের সব আলো গিয়ে পড়ছে প্যারিস হামলার খবরের ওপর। এই সুযোগে ফিলিস্তিনে প্রতিদিন একে একে হত্যা করে যাচ্ছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী।
এটা সত্য যে, প্যারিস হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এক সময় যেই ফ্রাঁসোয়া ওলাদঁ আমেরিকার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছিলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতন না হলে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব না; সেই ওলাদঁ এখন বলছেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাশারের প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে ফ্রান্সের এই দাবি কতদিন অক্ষুণ্ণ থাকবে তা বলা মুশকিল।

 

ধরে নিলাম প্যারিস হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ওলাদঁ ও তার মিত্ররা ইরাক-সিরিয়া থেকে আইএসের নিশানা পর্যন্ত মুছে দিবে; তাতেই কি সন্ত্রাস বন্ধ হবে? ইসরাইলের জায়ানবাদী রাষ্ট্র যতদিন থাকবে, সন্ত্রাসও তার ডালপালা বিস্তার ঘটাবে। জ্যঁ পল সার্ত্র ইহুদি রাষ্ট্রের এই অস্তিত্বটাকে মেনে নিয়েছিলেন, না নিয়ে উপায় ছিল না; কারণ এটা একটা বাস্তবতা। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবিকেও সমর্থন জানিয়েছেন। এই দাবি আর কিছু না, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি ভূখ-। বামপন্থি ওলাদঁ যদি সার্ত্রের এই ডাক না শোনেন, আইএস নিশ্চিহ্ন করেও কোনো লাভ হবে না। কারণ সেখান থেকে জন্ম নিবে আরো শত শত আইএস। ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মোকাবিলা হবে সন্ত্রাস দিয়েই।

 

শেষ করছি সার্ত্রেকে দিয়েই। সার্ত্রে এক সময় রান্নাবান্না নিয়েও বিস্তর গবেষণা করেছেন। তার রান্নার রেসিপি থেকে উঠে এসেছে অনেক দার্শনিক ভাষ্য। বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠীর নির্লিপ্ততা তার রঙ্গরসিতকা এখনো প্রাসঙ্গিক। দার্শনিকরা অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখতে পারেন; প্যারিস হামলার মতো এমন ঘটনা হয়তো আগেই দেখতে পেয়েছিলেন সার্ত্রে। দেখতে পেয়েছেন বলেই আজকে তার স্বদেশি শাসকগোষ্ঠীর জন্য একটি রান্নার রেসিপি দিয়ে গেছেন। সেটা একটি টুনা ক্যাসেরোল। উপকরণ : একটি বড় ক্যাসেরোল ডিশ। প্রথমে ক্যাসেরোল ডিশটাকে ঠান্ডা ওভেনে বসাতে হবে। ওভেনের সামনে একটি চেয়ার বসাতে হবে আজীবন। ভাবতে হবে আপনি কত ক্ষুধার্থ। রাত নামলেও প্রদীপ জালানো যাবে না।

 

প্যারিস হামলা আমাদের মনে করে দেয় সার্ত্রের বিদ্রুপাত্মক রান্নার রেসিপি। ঠান্ডা ওভেনে টুনা ক্যাসেরোল রান্না হচ্ছে। রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। কিন্তু বাতি জ্বালানো যাবে না। বাতি জ্বালালেই যদি ইসরাইল-আমেরিকা ক্ষ্যাপে ওঠে? তাদের ক্ষ্যাপানোটা কি ঠিক হবে?

 

লেখক : সাংবাদিক

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৫/রহমান

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়