ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে আশার আলো পাতকূয়া

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৩০ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বরেন্দ্র অঞ্চলে আশার আলো পাতকূয়া

বরেন্দ্র অঞ্চলের স্থাপিত একটি পাতকূয়া

তানজিমুল হক, রাজশাহী : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে প্রধান খাদ্যশস্য ধান। আর ধান উৎপাদনে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূউপরিস্থ পানি অভাব থাকায় ধান উৎপাদনে প্রধানত গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও ফসল উৎপাদনে বছরের পর বছর ধরে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দিনে দিনে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ স্থাপন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির কম ব্যবহার করে স্বল্প সেচে লাভজনক ফসল উৎপাদনে ডাগওয়েল বা পাতকূয়া  পদ্ধতি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের আশার আলো দেখিয়েছে। যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ নেই সেই সব এলাকায় ডাগওয়েলের পানি দিয়ে কৃষক সারা বছর বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছে।

আর এই ডাগওয়েল থেকে কৃষক পরিবারগুলো খাবার পানি সংগ্রহের পাশাপাশি গৃহস্থালির কাজেও ব্যবহার করছে। বরেন্দ্র এলাকায় ডাগওয়েলে চুয়ানো পানি সংগ্রহের পাশাপাশি ফানেল আকৃতির সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বৃষ্টির পানিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ বাড়িয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে।

সোলার পাম্প ব্যবহারের মাধ্যমে ডাগওয়েলের পানি উত্তোলন করে সেচ কাজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও পানীয় জল খাবার হিসেবে ব্যবহার করা একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। বর্তমান কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি ডাগওয়েল বা পাতকূয়া  স্থাপন করেছে। আর এর সুফল পাচ্ছে এই সব অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো ।  

বরেন্দ্র এলাকার উপকারভোগী কৃষক নিকুঞ্জ চন্দ্র বর্মন জানান, তার এলাকায় সেচের পানির তেমন কোন উৎস নেই। ভূগর্ভস্থ স্তরের গঠন প্রকৃতির কারণে এলাকায় কোনো গভীর/অগভীর নলকূপ বসানো যায় না। এই এলাকায় ডাগওয়েল স্থাপনের ফলে বর্তমানে তারা কম সেচ লাগে এমন সবজির আবাদ করতে পারছেন। পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজেও পানি ব্যবহার করছেন।

নওগাঁর পত্মীতলা উপজেলায় শিহাড়া মৌজার উপকারভোগী কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, এলাকায় ডোবা বা পুকুর দেখা গেলেও সেখানকার পানি ব্যবহার উপযোগী নয়। ভূগর্ভস্থ স্তরের গঠন প্রকৃতির কারণে এখানে কোনো গভীর অগভীর নলকূপ বসানো যায় না। ডাগওয়েল থেকে তারা ১২ থেকে ১৩টি পরিবার খাবার পানি পাবার পাশাপাশি বেশকিছু জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করছেন।  

একই জেলার পোরশা উপজেলায় লেলেঙ্গাহার মৌজার উপকারভোগী কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, মসজিদ সংলগ্ন নির্মিত ডাগওয়েল বা কূয়া হতে এলাকার জনগণ পানি পানসহ  দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন। আরও পাতকূয়া স্থাপন করা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ থেকে কূয়া খনন করে দেওয়ার ফলে তাদের কষ্ট অনেকটা দূর হয়েছে।

পোরশা উপজেলার শিহাড়া মৌজার উপকারভোগী কৃষক মঞ্জুর হোসেন জানান, ভূগর্ভস্থ স্তরের কারণে এই এলাকায় কোনো নলকূপ বসানো যায় না। ইউনিয়ন পরিষদ হতে একটি তারা পাম্প বসানো হয়েছিল। কিন্তু পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ায় পানি পাওয়া যায় না। বর্তমানে কূপ খননের ফলে কূপের সংরক্ষিত পানি দ্বারা কৃষকরা কম সেচ লাগে এমন সবজি জাতীয় ফসল আবাদ করতে পারছেন। পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজেও পানি ব্যবহৃত হচ্ছে।  

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ বলেন, কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিএমডিএ ডাগওয়েল থেকে সহজে পানি উত্তোলনের জন্য সোলার পাম্পের ব্যবহার শুরু করেছে।

এতে করে অতি সহজেই কৃষক পরিবারগুলো পাতকূয়া থেকে পানি উত্তোলন করতে পারছে। আর এই পানি দিয়ে ফসল উৎপাদনসহ খাবার পানি সংগ্রহের পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজ সম্পন্ন করছেন তারা। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ১০০টি পাতকূয়া খনন করেছে। এর মধ্যে ৬টিতে সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছেন এলাকার অসংখ্য কৃষক পরিবার।

তিনি আরো বলেন, বরেন্দ্র এলাকায় ডাগওয়েলে চুয়ানো পানি সংগ্রহের পাশাপাশি ফানেল আকৃতির সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বৃষ্টির পানিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ বাড়িয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে। কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা ভেবে বরেন্দ্র এলাকার যেসব স্থানে গভীর নলকূপ নেই সেসব এলাকায় এই ডাগওয়েল স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।  

সবার সার্বিক সহযোগিতায় পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে বরেন্দ্র অঞ্চলে। যার সুফল ভোগ করবে উত্তরাঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক পরিবার। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে পাতকূয়া অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 


রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৩০ জুলাই ২০১৬/তানজিমুল হক/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়