ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বলয়

সুফিয়া বেগম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বলয়

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

|| সুফিয়া বেগম ||

সকালে নাস্তার পর্ব শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় প্রস্থ কাজের হাক-ডাক শুরু হয়ে যায়। বাজার করতে হবে, রান্না করতে হবে। এই রান্না আবার যে সে রান্না নয়;  বাসায় সে বাদে আরও ছয়জন সদস্য আছে। ড্রাইভারের কথা বাদ দিয়ে বাকি পাঁচজনের পাঁচ রকমের রুচি। সবাই নিজের পছন্দমাফিক খাবার চায় দুপুরের টেবিলে। তার ওপর শাক-ডাল-সবজি কমন আইটেম তো আছেই। সাবেরা এভাবে একা হাতে বাসার এই মহাযজ্ঞ সামলিয়ে আসছে গত কয়েক বছর ধরে।

ওর প্রতিদিনের কাজের রুটিনের ব্যত্যয় ঘটে না সহজে। রান্না শেষ করে খাবার টেবিল সাজিয়ে রেখে বাথরুমে ঢোকে সে। ততক্ষণে সবার গোসল হয়ে গেছে। বাথরুমে পড়ে রয়েছে আধা ভেজা কাপড়ের স্তূপ। সেগুলো কেঁচে শুকাতে দিয়ে নিজে গোসল সেরে যখন বের হয়, তখন বেলা পড়তে শুরু করে। খাবার টেবিল গুছিয়ে নিজের খাবার নিয়ে বসে সাবেরা। মুখে দুই লোকমা না দিতেই তুর্যর ডাক কানে আসে। খাবারের প্লেটটা একপাশে ঠেলে সরিয়ে রেখে রান্নাঘরের বাইরে এসে জবাব দেয় সাবেরা।
‘ভাইজান, কী কইবেন কন।’
‘তেমন কিছু না। আজ বিকেলে আমার চার-পাঁচজন বন্ধু আসবে। ওদের জন্য বিকেলে বিশেষ কিছু নাস্তার ব্যবস্থা রেখো।’
‘অত তাড়াতাড়ি বিশেষ নাস্তার ব্যবস্থা কি করন যাইব ভাইজান? আগে কইলে আমি একটু যোগাড়-যন্ত্র কইরা রাখতে পারতাম।’
‘যোগাড়-যন্ত্র আর কী করবে ? ঘরে যা ব্যবস্থা আছে মানে আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো প্রতিদিন আমাদের জন্য যা নাস্তা বানাও সেরকম হলেও চলবে।’
‘আচ্ছা ভাইজান। তয় একটা কতা আফনেরে দিতাছি। বন্ধুদের সামনে আফনের মুখ ছোড অইতে আমি কিছুতেই দিমু না।’

ততক্ষণে তুর্য চলে গেছে সেখান থেকে। সাবেরা রান্নাঘরে গিয়ে তার খাবার প্লেটটা টেনে নিয়ে বসতেই মিসেস কবির সামনে এসে দাঁড়ান।
‘তোমার দেখছি এখনও খাবার শেষ হয়নি। খেতেই যদি তোমার এতক্ষণ লাগে তাহলে চলবে কী করে?’
সাবেরা তাড়াতাড়ি প্লেটটা একপাশে ঠেলে সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়। বলে, ‘এই তো আমার খাওয়া শেষ। আফনের কী লাগব আমারে কন, আমি অহনই কইরা দিতাছি।’
‘তোমাকে এক্ষুণি কিছু করতে হবেনা সাবেরা। সন্ধ্যার পর আমার কয়েকজন বন্ধু আসবে। এই ধরো সব মিলিয়ে আটজনের বেশি হবে না। আমি ওদেরকে বাসায় দাওয়াত করেছি। সন্ধ্যার পর ওরা আসবে। আসার পর হালকা চা-নাস্তা দিবে। তবে ওদের জন্য রাতের খাবারের আয়োজনটা যেন ভাল হয় সেদিকে খেয়াল রেখো।’
‘ঠিক আছে আম্মা। আফনে কোন চিন্তা কইরেন না। সব অইয়া যাইব।’

যাওয়ার জন্য এক পা বাড়িয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়েন মিসেস কবির। সাবেরা জিজ্ঞেস করে, ‘আর কিছু কইবেন আম্মা?’
‘একটু আগে তুর্যর গলা শুনলাম না ? তোমাকে যেন কী বলছিল?’
‘জে আম্মা, ভাইজান কইছিল উনার চার-পাঁচজন বন্ধু আইব। বিকালে তাদের লাইগা নাস্তার ব্যবস্থা করনের কথা কইছিল।’
‘আর সময় পেলনা। আজই আসতে হবে ওর বন্ধুদেরকে?’একটু উষ্মা প্রকাশ করেন মিসেস কবির। তারপর সাবেরাকে বলেন, ‘তুমি আবার সব গুবলেট করে দিও না যেন। একদিন এত মেহমান তো, তাই বলছি।’
‘না আম্ম, আফনে একদম চিন্তা কইরেন না। সব ঠিকমতো অইব। আমি অহনই কামে হাত দিতাছি।’

মিসেস কবির চলে যাবার পর খাবার প্লেটটার দিকে একটুক্ষণ চুপ করে চেয়ে থাকে সাবেরা। সারাদিন শেষে দু’মুঠো ভাত মুখে দিয়েছিল সে। সেটাও সহ্য হলো না। এখন মনে হচ্ছে সারাদিন না খেয়ে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে যেতে পারলেই এই বাড়ির মানুষগুলো বেশি খুশি হতো।
কথাটা মনে হবার সাথে সাথে সাবেরা টের পায় পেটের ভিতর ক্ষুধাটা আরও বেশি করে মোচড় দিয়ে উঠছে। কিন্তু কাজের তাগাদা তার চেয়েও বেশি জোড়ালো। সাবেরা তাই ফ্রিজ থেকে মাছ-মাংস যা যা প্রয়োজন বের করে পানিতে ভিজায়। তারপর খাবার প্লেটটা টেনে নিয়ে বসে। এখন আর আয়েশ করে ভাত খাবার সময় নেই। তাছাড়া এতক্ষণ প্লেটে অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে থেকে খাবারগুলো বিস্বাদের মতো লাগছে সাবেরার মুখে। তবু সে গোগ্রাসে প্লেটের ভাতটুকু খেয়ে শেষ করে। শরীরটাকে সচল রাখতে এটুকু না করলেই নয়।

বিশ্রাম নামক শব্দটা সাবেরার নিকট থেকে অনেক দিন আগেই বিদায় নিয়েছে, ছয় বছর আগে যেদিন এই বাড়িতে প্রথম কাজ করতে এসেছিল সেদিন থেকে। সময় নামক হিসেবের কাঁটাটা সাবেরাকে তার বেহিসেবী গহবরে এমনভাবে গ্রাস করে নিয়েছে যে নিজের দিকে মুহুর্তের জন্য ফিরে তাকানোর ফুরসত নেই সাবেরার।
এসব নিয়ে ভাবতে গেলে কাজের কাজটাই ঠিকমতো করা হবে না। সাবেরা দ্রুত হাত চালায়। নাস্তার আয়োজন শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই কলিং বেল বেজে উঠে। দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলে দেয় সাবেরা। ঘরে ঢুকে তুর্যর বন্ধুরা। সাবেরা তুর্যর ঘরে নাস্তা পাঠিয়ে দিয়ে মিমির ঘরে যায় নাস্তা নিয়ে। সাবেরার হাত থেকে নাস্তার ট্রেটা প্রায় ছো মেরে নিয়ে নেয় মিমি। সাথে সাথে খুশিতে খলবলিয়ে উঠে সে।
‘খুব ভাল করেছ বুয়া। আমার পছন্দের অনেক নাস্তা বানিয়েছ আজ।’  
সাবেরা খুব খুশি হয় মিমির কথায়। মিমিটা বরাবরই এরকম। যা খেতে দেয়া হবে তাতেই খুশি। খাবার নিয়ে হাজারটা বায়নাক্কা করে না সে। এ বাড়ির প্রতিটি সদস্যের মনতুষ্টির চেষ্টায় যখন সাবেরার প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত সেখানে মিমি ওর জন্য এক পশলা শান্তির পরশ।

মিমির ঘর থেকে বের হয়ে সাবেরা দ্রুত নাস্তা নিয়ে যায় সামনের লনে। কবির সাহেব ও মিসেস কবির বরাবর বৈকালিক নাস্তাটা এখানে সারেন। টেবিলের উপর নাস্তাগুলো সাজিয়ে রেখে ট্রে হাতে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে সাবেরা। কবির সাহেব চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে ওর দিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘কিছু বলবে?’
‘জে আব্বা। রাইতে আফনে কী খাইবেন হেইডা কইয়া দিলে বালা অইত।’
‘কী আর খাব? ঐ প্রতিদিন যা করো তাই দিও, স্যুপ আর সবজি। তার আগে আম্মাকে জিজ্ঞেস করে নিও আজ স্যুপ আর সবজি খাবেন না কি অন্য কিছু খাবেন? আম্মা যদি অন্য কিছু খেতে চায় তাহলে আমাকেও তাই দিও। আমার জন্য আলাদাভাবে তোমার কষ্ট করার দরকার নেই।’
‘জে আচ্ছা’ বলে যেতে উদ্যত হয় সাবেরা। পেছন থেকে ডাক দেন মিসেস কবির- ‘শুনো।’
‘কিছু কইবেন আম্মা?’
‘গেস্টদের নাস্তা দিয়েছ?’
‘জে আম্মা, দিছি।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে তুমি যাও। আর শুনো, রাতের খাবারের আয়োজন ঠিক আছে তো? দেখো, আমাকে যেন আবার ছোট হতে না হয় আমার বন্ধুদের নিকট।’
‘জে আচ্ছা’ বলে সাবেরা সেখান থেকে দ্রুত চলে যায়। কবির সাহেব চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাসায় অতিথি এসেছে না কি ? কই আমি তো জানি না?’
‘তুমি আর কতটুকু খোঁজ রাখো? তুর্যর বন্ধুরা এসেছে।’
‘ও আচ্ছা। আর ঐ যে রাতের রান্নার কথা বললে কাউকে দাওয়াত করেছ না কি?’
‘ও তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি? আজ রাতে আমার কয়েকজন বন্ধু বাসায় খাবে। সাবেরাকে সে ব্যাপারেই বলছিলাম।’
‘ঠিক আছে’ বলে পত্রিকার পাতায় মনযোগী হন কবির সাহেব।

মিসেস কবির একটু আড়চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তুমি দেখছি আজকাল সাবেরার ব্যাপারে খুব কেয়ারিং?’
কবির সাহেব ঝট করে পত্রিকাটা টেবিলের উপর রেখে বলেন, ‘তার মানে?’
‘না, বলছিলাম আজকাল সাবেরার সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবছ তো তাই। এই যেমন একটু আগে বললে!’
স্ত্রীকে কথা শেষ করতে দেননা কবির সাহেব। উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘কেন বললাম বুঝ না? ও তো একটা মানুষ না কি? তুমি তো এ বাড়ির কর্ত্রী। তোমারই তো ভাবার কথা ছিল ওর সুবিধা-অসুবিধার দিকটা। একটা মানুষ সারাদিন বিরামহীন খাটুনি খেটে যাবে আর তোমরা সবাই পায়ের উপর পা তোলে বসে থাকবে তাই না? এ জন্যই তো এ বাড়িতে কাজের মানুষ থাকতে চায় না।’

যেতে উদ্যত হন কবির সাহেব। এমন সময় সাবেরা হন্তদন্ত সেখানে আসে। কবির সাহেব জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে? এমন করছিস কেন?
‘আব্বা, দাদুর শরীরে ধুম জ্বর। দেখবেন চলেন। আমি নাস্তা নিয়া গিয়া ডাকতাছি দেহি সাড়া দেয় না। গায়ে হাত দিয়া দেহি শরীর পুইরা যাইতাছে। মাথায় জলপট্টি দিয়া তয় আফনেরে ডাকতে আইছি।’
সাবেরা হয়তো আরও কিছু বলত। কিন্তু কবির সাহেব আর দাঁড়ান না সেখানে। ‘চল দেখি’ বলে মায়ের ঘরের দিকে হাঁটতে থাকেন তিনি। সাবেরাও যায় পিছু পিছু। মিসেস কবির সেদিকে তাকিয়ে থেকে বিরক্তি প্রকাশ করেন। নিজে নিজে বলেন, ‘আর সময় পেলনা জ্বর বাধাবার! এখন সাবেরা যদি ঐদিকে ব্যস্ত থাকে তাহলে আমার বন্ধুদের জন্য রান্নাটা কে করবে? তারপর ধীর পায়ে শ্বাশুড়ির ঘরের দিকে হাঁটতে থাকেন তিনি।’

আমেনা বেগম প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন। কবির সাহেব আম্মা, আম্মা বলে কয়েকবার ডাকেন, চোখেমুখে পানি দেন। একটু চোখ মেলে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেন আমেনা বেগম। কবির সাহেব তাড়াতাড়ি ডাক্তার কল করেন। ততক্ষণে সাবেরা আর তিনি মিলে জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা করেন আমেনা বেগমের। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বলেন, ‘অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছেনা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভাল।’
কবির সাহেব তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করেন। তুর্যকে ডেকে এনে দু’জনে মিলে ধরাধরি করে গাড়িতে উঠান আমেনা বেগমকে। সাবেরাকে বলেন, ‘তুমি চলো আমার সাথে। আম্মার সাথে সাথে থাকবে।’
‘আমি? আচ্ছা ঠিক আছে, চলেন যাই। কিন্তু...’
কথাটা বলা হয়নি সাবেরার। মিসেস কবির এগিয়ে এসে বলেন, ‘ও চলে গেলে এত রান্না কে করবে?’
কটমট করে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জবাব দেন কবির সাহেব, ‘তুমি করবে!’
‘আমি কি অত রান্না কখনও করেছি না কি যে আজ রান্না করব? ঠিক আছে, তুমি গাড়িটা পাঠিয়ে দিও। আমি ব্যবস্থা করে নিব।’
‘গাড়ি পাঠিয়ে দিব? কেন? একটা গাড়ি তো রয়েছেই।’
‘একটা গাড়ি দিয়ে কী করে হবে ? বাড়িতে যেহেতু রান্না হবে না, তাই আমার বন্ধুরা আসলে ওদেরকে নিয়ে বাইরে কোথাও চলে যাব ভাবছি। সেক্ষেত্রে একটা গাড়িতে কী করে হবে?’
‘সেটা আমি জানি না। তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। গাড়ি পাঠানো যাবে না।’
তুর্য এতক্ষণ ওর বাবা-মায়ের কথা শুনছিল। বাবার কথা শেষ হতেই সে বলে, ‘মা, তোমার বন্ধুদেরকে ফোন করে বলে দাও না আজ যেন না আসে। কি এমন হবে ? মানুষের বিপদ তো আর আগ থেকে বলে আসে না।’

আর দাঁড়ায় না সেখানে তুর্য। দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে সে। গাড়ি চলে যায় গেটের বাইরে। মিসেস সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। তারপর স্বগোক্তি করে বলেন, ‘আমার ছেলেটাও দিন দিন কেমন বদলে যাচ্ছে। বাবার ন্যাওটা হয়ে যাবে না তো তুর্য?’
গাড়িতে বসে অনবরত চোখের পানি মুছে সাবেরা। কবির সাহেব সেটা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি অত কাঁদছ কেন? আল্লাহ আল্লাহ করো। দেখবে আম্মার কিচ্ছু হবে না।’
শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছতে মুছতে সাবেরা বলে,‘ আব্বা, দাদুকে দেখে আমার ছোডনটার কথা খুব মনে পড়তাছে। সকালে আওনের সময় দেইখা আইছি গায়ে ধুম জ্বর। হের বাপেরে কইছিলাম আইজ কামে না যাইতে। কি জানি কি করছে? সারাদিন একটা খোঁজ নিবার পারি নাই। যদি ওর বাপে খালি ঘরে পোলাডারে ফালাইয়া চইলা যায়?’
‘একথা আগে বলবে তো! তোমার ছেলে অসুস্থ আর তুমি সারাদিন আমাদের বাসায়? সন্তান অসুস্থ হলে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো মা কাছে থাকা। আচ্ছা, তুমি কেঁদ না। আমি দেখছি কি করতে পারি। তোমার স্বামীর মোবাইল নম্বরটা দাও তো আমাকে।’
‘হের ত কোন ফোন নাই আব্বা।’
‘তাহলে এক কাজ করি। হাসপাতালের কাছেই তো এসে গেছি আমরা। আমি আর তুর্য আম্মাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকি। তুমি গাড়িতে করে চলে যাও। তোমার ছেলের শরীর যদি বেশি খারাপ থাকে তাহলে ওকে এখানে নিয়ে আসবে। চিকিৎসা যা দরকার এখানেই হবে।’
‘কী কন আব্বা?’
‘আমি ঠিকই বলছি। তাড়াতাড়ি যাও। আর শোন! ড্রাইভারকে রাস্তা চিনিয়ে নিতে পারবে তো?’
‘জে আব্বা, পারব।’
‘তাহলে এক্ষুণি চলে যাও।’

পরদিনই খবরটা মিসেস কবিরের কানে পৌঁছে যায় যে, কবিরা সাহেব গাড়ি পাঠিয়ে সাবেরার ছেলেকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করিয়েছেন।
দুই দিন হাসপাতালে মাকে নিয়ে ব্যস্ততায় কাটে কবির সাহেবের। এর মধ্যে মিমি-তুর্য একাধিকবার এসে দেখে গেছে তাদের দাদুকে। কিন্তু মিসেস কবির একবারের জন্যও তার শ্বাশুড়ির খোঁজ নিতে আসেনি। তৃতীয় দিন আমনা বেগম একটু সুস্থ হলে তাকে নিয়ে বাসায় ফেরেন কবির সাহেব। খুব স্বাভাবিকভাবে তিনি স্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘কেন সে তার মাকে একটিবারের জন্য দেখতে যেতে পারেনি?’ কিন্তু কবির সাহেব ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে এর উত্তরে তার স্ত্রীর একটি অতি নোংরা মনের পরিচয় বেরিয়ে আসবে তার সামনে।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫/তাপস রায়   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়