ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বাছাই কমিটি নিয়ে খালেদার ‘সুনির্দিষ্ট মতামত’

রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাছাই কমিটি নিয়ে খালেদার ‘সুনির্দিষ্ট মতামত’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে বাছাই কমিটি করার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ‘সুনির্দিষ্ট মতামত’ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

রোববার বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সংলাপের পর সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।

 

তবে বাছাই কমিটিতে বিএনপি কোনো নাম প্রস্তাব করেছে কি না, করলে কাদের নাম প্রস্তাব করেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাছাই কমিটি সম্পর্কে তার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। আশা করছি, রাষ্ট্রপতি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পদ্ধতিগত বিষয় নির্বাচন করবেন। পরে পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করবেন।’

 

নির্বাচন কমিশন গঠনের এই প্রক্রিয়া রাষ্ট্রপতি আগামী মাসের মধ্যেই শেষ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।

 

নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করতে গত ১৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় মুলত সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাবের একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই প্রস্তাবে যেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে- সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন করতে হবে। ইসি নিয়ে যেহেতু কোনো আইন হয়নি, সেহেতু সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে বিএনপি মনে করে।’

 

ইসি নিয়ে খালেদা জিয়া প্রস্তাব দেওয়ায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে (খালেদা জিয়া) ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।

 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ভবিষ্যতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এই প্রস্তাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আলোচনার মাধ্যমেই সংকটের সমাধান করতে হবে।

 

আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। নতুন যে নির্বাচন কমিশন হবে তার অধীনেই ২০১৯ সালে হবে একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

 

নতুন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নিতে রোববার থেকে আলোচনা শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রথম দিন বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

 

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তিনটি প্রধান বিষয় হচ্ছে- নিরপেক্ষ বাছাই কমিটি গঠন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আরপিও সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ।’

 

রাষ্ট্রপতি এই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি সমাধানে আসবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।

 

‘বৈঠকে আমরা খুশি হয়েছি। আশাবাদী হয়েছি। রাষ্ট্রপতি একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিক নেতা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবেন’, বলেন বিএনপি মহাসচিব।

 

প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণ পরিবেশে হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।’

 

ইসি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানোর প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে ডেকেছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

 

‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) এ কথা উল্লেখ করেছেন, যেহেতু আপনারা ইসি গঠনে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের আগে ডেকেছি। আপনাদের মতামত নিতে চেয়েছি। রাষ্ট্রপতি মনে করেন, সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য ও সাহসী ইসি গঠন প্রয়োজন। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলের মতামত প্রয়োজন’, বলেন মির্জা ফখরুল।

 

রোববার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। এর নেতৃত্বে ছিলেন দলটির চেয়ারপারসন খারেদা জিয়া।

 

বিকেল সাড়ে ৪টায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা বঙ্গভবন থেকে বের হন।

 

প্রতিনিধিদলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন। 

 

ইসি পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করার পর রাষ্ট্রপতি পর্যায়ক্রমে ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ডিসেম্বর ২০১৬/রেজা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়