ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বান্দরবানে বেড়ানোর কিছু তথ্য

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২০ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বান্দরবানে বেড়ানোর কিছু তথ্য

অপরূপ নীলগিরি

ফেরদৌস জামান : বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা প্রকৃতির অকৃত্রিম দান। শত শত পাহাড় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে অনন্তকাল ধরে। সবুজ সতেজ পাহাড়ের সঙ্গে সব সময় চোখে পড়বে মেঘের দুরন্তপনা। পাহাড়ের শরীর বেয়ে নেমে আসছে অজস্র ছোটবড় ঝরনা। সেই ঝরনাধারায় সৃষ্ট সাঙ্গু নদী পাহাড়ের ফাঁক গলে বইতে বইতে গিয়ে মিশেছে সাগরে- এই হলো পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রকৃতির ক্ষুদ্র বিবরণ।

বর্তমানে কেবল বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমীরাই নয়, বরং বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পর্যটক বান্দরবান ভ্রমণে আসেন। বর্ষায় বান্দরবানের প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর। বৃষ্টিস্নাত সবুজ আর ঝরনাগুলোর  যৌবনতুল্য তেজ এর প্রধান রহস্য। ঠিক এই সময় হচ্ছে ঈদ। ঈদে যারা দু-চার দিনের জন্য শহরের কোলাহল ছেড়ে বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে চান, তাদের জন্য বান্দরবান হতে পারে উপযুক্ত জায়গা।


বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য বেড়ানোর স্পটগুলো হলো-
শৈলপ্রপাত ঝরনা ও বমদের বসতি : বান্দরবান শহর থেকে সবচেয়ে নিকটের ঝরনা হলো শৈলপ্রপাত। এটি দৃষ্টিনন্দন একটি জলপ্রপাত। শহর থেকে যেতে সময় লাগবে প্রায় এক ঘণ্টা।  চাইলেই আপনি এই ঝরনার পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য অবশ্য সঙ্গে অতিরিক্ত এক সেট কাপড় নিয়ে যেতে হবে। নিকটেই বমদের ‘ফারুক পাড়া’। সেখানে তাদের জীবনযাত্রা দেখতে পাবেন। এতে কিছুটা হলেও ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ সম্বন্ধে ধারণা পাবেন।


চিম্বুক পাহাড় : বাংলাদেশের উচ্চতম জায়গা বলে চিম্বুকের পরিচিতি রয়েছে। এটি আসলে দেশের সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। চিম্বুক মূলত একটি পর্বতশ্রেণি। বান্দরবান শহর থেকে সড়ক পথেই যাওয়া যায়। সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। চিম্বুকে রয়েছে একটি মিলিটারি ক্যাম্প। রাস্তার ঠিক পাশেই তাদের পরিচালিত রেস্তোরাঁ। ভুনা খিচুড়ি, গরম সিঙ্গারা, কফি ও চা পাওয়া যায়। এমনও শোনা যায়, আকাশ যদি একেবারেই পরিস্কার থাকে তাহলে নাকি সেখান থেকে দূরে বহুদূরে  বঙ্গোপসাগর দেখা যায়। বর্ষাকালে তো বটেই অনেক সময় শীতকালেও চিম্বুকে মেঘ থাকে। যাওয়া আসার পথের সৌন্দর্য আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করবে। সম্পূর্ণ পথ ক্রমেই উঁচুতে উঠে গেছে। আঁকাবাঁকা পথ, পাশে গভীর খাদ, দূরে শত শত পাহাড়। গাড়ি চলে পাহাড়ের পিঠের উপর দিয়ে। বাংলাদেশ যে কত সুন্দর অনুধাবন করা যায় বান্দরবান গেলে।

জাদি টেম্পল বা স্বর্ণমন্দির : শহরের সাঙ্গু সেতু পার হয়ে মাত্র কয়েক কি.মি. দূরে এক পাহাড়ের চূড়ায় এটি অবস্থিত। শুধু বান্দরবান নয়, পার্বত্য অঞ্চলের বিখ্যাত ও দৃষ্টিনন্দন মন্দির বলে এর পরিচিতি রয়েছে। অনেক দূর থেকেই পাহাড় শীর্ষে মন্দিরটি দেখা যায়। ভেতরে প্রবেশ করতে দশ টাকার টিকিট কিনতে হয়। হাফ বা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে সেখানে প্রবেশ নিষেধ। নিকটেই রয়েছে দেবতা পুকুর, স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিকট এর গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে।
 

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে ঝুলন্ত সেতু

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স :  শহর থেকে মাত্র চার কি.মি. দূরে বান্দরবান-কেরানীরহাট সড়কে এটি অবস্থিত। এর ভেতর বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স মূলত একটি শিশু পার্ক। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র চিড়িয়াখানা। লেকের উপর রয়েছে দুইটি ঝুলন্ত সেতু। লেকের জলে বোটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

নীলগিরি :  শহর থেকে পূর্ব-দক্ষিণে বান্দরবান-থানচী সড়কে এর অবস্থান। শহর থেকে দূরত্ব ৪৭ কি.মি.। জায়গাটি সমুদ্র সমতল থেকে ২২০০ ফুট উপরে। নীলগিরি মূলত একটি উন্নত মানের রিসোর্ট; কাছ থেকে মেঘ দেখা ও স্পর্শ করার উপযুক্ত জায়গা। প্রায়শই জায়গাটি মেঘে ঢেকে থাকে। দুঃখের বিষয় এখানে চাইলেই সবাই থাকতে পারবেন না, তবে ঘুরে দেখতে মানা নেই। আগে থেকে রিজার্ভেশন নিশ্চিত করলে থাকা যাবে।

নীলাচল :  নীলাচলকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়ে থাকে। এর অবস্থান শহরের নিকটেই মাত্র চার কি.মি. দূরে। বান্দরবান ভ্রমণে পর্যটকেরা যে সমস্ত জায়গা ঘুরে দেখেন তার মধ্যে নীলাচল অন্যতম।

চাইলে নিজ ব্যবস্থাপনাতেই বান্দরবান ঘুরতে যেতে পারেন। এটি তেমন দুঃসাধ্য কোনো ব্যাপার নয়। তবুও আপনার সুবিধার্থে প্যাকেজ টুর বিষয়ক কিছু তথ্য দেয়া হলো। টুর অপারেটররা ৫,৫০০ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকার মধ্যেই বান্দরবানে প্যাকেজ টুরের ব্যবস্থা করে থাকে। প্যাকেজের সময় সাধারণত ৩ দিন ২ রাত। সেবার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকে ঢাকা-বান্দরবান-ঢাকা যাতায়াত, থাকা-খাওয়া, নিজস্ব পরিবহণে সাইটগুলো ঘুরে দেখা, অভিজ্ঞ গাইডের ব্যবস্থা ইত্যাদি। এবার জেনে নিন টুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়।


গ্রীন বাংলাদেশ টুরস। ফোন: ০২-৮৬৫২২৫৪, ০১৮১৯-৪৮০৫৪০
দ্য গাইড টুরস লিমিটেড। ফোন: ০২-৯৮৮৬৯৮৩, ০১৭১১-৬৯৬৩৩৭
ক্যাপ্টেইন হলিডেজ। ফোন : ০১৯৭৭০৫৮৪৫২
সাউথ এশিয়ান টুরিজম। ফোন : ০১৭১৬-৪৬৬০৪৭
লেজার টুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস লি. ফোন : ০২-৯৩৪৮৭০৬, ০১৭১২-১১১১১১

থাকার জায়গা :
হলিডে ইন রিসোর্ট, মেঘলা, বান্দরবান। ফোন : ০১৮৫৬-৬৯৯৯১১। এখানে ১৮০০ থেকে ২৫০০ হাজার টাকার মধ্যে কটেজ পাওয়া যায়।
বান্দরবান পর্যটন মোটেল। ফোন : ৩৬১-৬২৭৪১, ৩৬১-৬২৭৪২। এখানে ২০০ থেকে ৩৭৫০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
হোটেল পূরবী, ভি আই পি রোড, বান্দরবান। ফোন: ০১৮৫৬-৬৯৯৯১০




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়