ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাস্তবের স্লামডগ মিলিয়নার!

সাইফুল আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাস্তবের স্লামডগ মিলিয়নার!

সাইফুল আহমেদ : বস্তিতে থাকেন। জীবন নিয়ে টানাটানি। ভাইয়ের পড়ালেখা চালাতে পারছেন না। পরিবারের আহার যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাতে টাকা নেই। এমনকি সকালে নাস্তা করবেন কী দিয়ে, সেই চিন্তায় আগের রাতে ‍ঘুম আসে না। তারপরও সারা দিনের খাটুনিতে ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরে ভর করল রাজ্যের ঘুম। কিন্তু, পরদিন সকালে উঠে দেখলেন আপনি লাখোপতি হয়ে গেছেন! ব্যাংকে আপনার ৬০ লাখ টাকা! কেমন অনুভূতি হবে আপনার।

 

‘স্লামডগ মিলিয়নার’ সিনেমাটি নিশ্চয় দেখেছেন। অস্কার জেতা ড্যানি বয়েলের আলোচিত এই সিনেমাতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ভারতের মুম্বাইয়ের এক বস্তির ছেলে রাতারাতি লাখোপতি হয়ে উঠে। কিন্তু, সেটা তো সিনেমা, বাস্তবে কি তা সম্ভব! সিনেমা আর বাস্তব কি কখনো এক হয়?

 

বাস্তবের এক ‘স্লামডগ মিলিয়নারের’ খোঁজ পাওয়া গেছে সেই ভারতেই। তবে সেই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র জামাল মালিকের মতো এই বস্তিবাসী কিন্তু ‘কোন বনে গা ক্রোরপতি’ খেলে ‘মিলিয়নার’ হননি। ভারতের কলকাতা শহরের দক্ষিণাঞ্চলের এই বস্তিবাসী নারী হঠাৎ করেই একরাতের ব্যবধানে ৬০ লাখ রুপির মালিক হয়ে গেছেন। তবে তিনি জানেন না ব্যাংকে তার নামে অ্যাকাউন্টে ৬০ লাখ রুপি কীভাবে আসল।

 

গত ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদি সরকার ঘোষণা দেয় যে, ৯ নভেম্বর থেকে প্রচলিত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল বলে গণ্য হবে। নতুন ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হবে।

 

এদিকে, ৮ নভেম্বর রাতেই ওই নারীর নামে থাকা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০ লাখ রুপি আসে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয় ভারতের অর্থনীতিবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট এর কাছে। তারা বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। চলে সেই নারীকে খুঁজে বের করার পালা।

 

সেই নারীর খোঁজ পেতে বেশ বেগ পেতে হয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। তবে যখন পেলেন তখন ‘চক্ষু চরকগাছ’। কলকাতার বস্তির নোংরা-নর্দমাময় পরিবেশে পেরিয়ে গোয়েন্দারা যখন সেই নারীর কাছে পৌঁছালেন, দেখলেন, ওই নারী এই বস্তিতে লুকাতে আসেননি। বরং এখানেই তার বসবাস। তার বাবা সামান্য একজন শ্রমিক, যার মাসিক আয় কখনোই ৬ হাজার ৫০০ রুপি অতিক্রম করেনি।

 

আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- সেই নারী কিংবা তার বাবা কারোই কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। অথচ যার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, তার নামেই কি না, ব্যাংকে ৬০ লাখ রুপি!

 

এ বিষয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ হয়তো সেই নারীর কাগজপত্র ব্যবহার করে একটি জন ধন অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তারপর যখন ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা এল, সেই ৬০ লাখ রুপি কালো অর্থ সেই অ্যাকাউন্টে রেখেছে।’

 

বলে রাখা ভাল, জন ধন অ্যাকাউন্ট হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃতির একটি পদক্ষেপ যেখানে দরিদ্ররা কোনো জামানত ছাড়াই অর্থাৎ ‘জিরো ব্যালেন্সে’ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে এবং তাদেরকে একটি ডেভিট কার্ড দেওয়া হয়।

 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গোপনীয়তার রক্ষার খাতিরে সেই নারীর নাম জানাননি। তবে তাদের অভিমত, শুরু থেকেই জন ধন অ্যাকাউন্টের অপব্যবহারের মাধ্যমে অনেক ব্যক্তিকে না জানিয়ে তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে আসছে একটি বাটপার শ্রেণি।

 

রাতের ব্যবধানে নিজের নামে ব্যাংকে ৬০ লাখ রুপি জমা হলো ঠিকই, কিন্তু সেই নারীর সত্যিকারের ‘মিলিয়নার’ হয়ে উঠা হলো না। সত্যিই সিনেমা ও বাস্তব কখনো এক হয় না!

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৬/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়