ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিজুতে জেগে ওঠে পাহাড়ের প্রাণ

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৯ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিজুতে জেগে ওঠে পাহাড়ের প্রাণ

ফুল বিজুতে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে দিচ্ছে চাকমা তরুণীরা

ফেরদৌস জামান

বিভিন্ন জাতি ও জাতিসত্তার সমন্বয়ে আমাদের বাংলাদেশ। প্রতিটি জাতির রয়েছে আলাদা পার্বণ এবং সেই পার্বণ উদযাপনে উৎসবের ধরনও আলাদা। আবার জাতিভেদে রয়েছে একই উৎসবের ভিন্ন নাম। যেমন- বাঙালির কাছে যা পহেলা বৈশাখ, চাকমাদের কাছে এই উৎসবটির নাম ‘বিজু’ এবং মারমাদের কাছে ‘সাংগ্রাই’। অন্য দিকে রাখাইনরা বৈশাখ উদযাপন করে জলকেলী করে। এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের বর্ণাঢ্যতায় যুক্ত হয়েছে নতুন অনেক অনুষঙ্গ। যদিও এর পেছনে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ করে ফোন অপারেটরদের অবদান চোখে পড়ে। বলতে দ্বিধা নেই, এ ধরনের আয়োজনে বৈচিত্র এসেছে কিন্তু প্রাণটা পাওয়া যায় না। কোথায় যেন একটু শূন্যতা রয়েই যায়। অভাব অনুভূত হয় চিরায়ত বাংলার বুক থেকে উঠে আসা প্রাণ জুরানো মেঠো ঘ্রাণের। পহেলা বৈশাখ এখন আর শুধুই প্রাণের পার্বণ নয় বরং ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাছে অসাধারণ এক পণ্যও বটে! পাঠক চলুন মাটি ও মানুষের সারল্য গায়ে মেখে, নির্ভেজাল এক বর্ষবরণের গল্প শুনি। এই গল্পে পাওয়া যাবে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের চাকমাদের ‘বিজু’ উৎসবের চিত্র।

ইদানিং দেশের বিভিন্ন জায়গা, এমনকি বিদেশ থেকেও অনেক দর্শনার্থী পাহাড়িদের বর্ষবরণ উৎসব উপভোগ করতে পার্বত্য এলাকায় গিয়ে হাজির হন। আমরাও একবার সেই উৎসব দেখতে গেলাম। জানার ইচ্ছা ছিল উৎসব ঘিরে  তাদের সংস্কার- তারা কী খান, কী ধরনের কাপড় পরেন এসব আরকি! ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সোজা বাসে করে রাঙামাটি শহরে গিয়ে নামলাম। জায়গাটির নাম ভেদভেদী বাসস্ট্যান্ড। অদূরেই মনোগড়ের বড়বি আদাম (বড়বিপাড়া)-এ অপেক্ষায় ছিল আমাদের বন্ধু অবলিকিতেশ্বর চাকমা তুখলু।

উৎসব কেন্দ্র করে একটি শব্দ আমার নজর কাড়ল। তাদের ভাষায় ‘উদিজগর্বা’। বিজু উৎসবে এই শব্দটির গুরুত্ব রয়েছে। এর অর্থ হঠাৎ অতিথি। উৎসব চলাকালে যে কোনো বাড়িতে উদিজগর্বা এলে তারা ভীষণ খুশি হয়। আমরা একের পর এক বাড়িতে উদিজগর্বা হয়ে উপস্থিত হই। প্রথমে তুখলুর বন্ধু রাজীব চাকমার বাড়িতে গেলাম। ঘরে নিয়ে বসানোর অল্পক্ষণ বাদেই পরিবেশনের জন্য একের পর এক আসতে লাগল হরেক পদের খাবার। পাঁজন, বিরিয়ানি (মটর কালাইয়ের সঙ্গে মুরগি অথবা আলু দিয়ে রান্না করা), পিঠা, জিলাপী, রসগোল্লা, আচার, তরমুজ ইত্যাদি। সমস্ত খাবার ঘরে রান্না করা। এগুলোর মধ্যে ‘পাঁজন’ হলো গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী একটা পদ। পাঁজন বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, যেমন- কচি কাঁঠাল, কাচকলা, আলু, শিমুল (স্থানীয় বিশেষ ফুল), তারা (ঘাস বা বাঁশ প্রজাতীর উদ্ভিদ), মাশরুম ইত্যদি দিয়ে তৈরি। কমপক্ষে ৫ থেকে শুরু করে ৪৫ বা আরও অধিক প্রকার সবজি দিয়ে এই খাবার তৈরি করা চাকমাদের ঐতিহ্য। এই খাবার বিজু উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। আরেকটি হলো দুই ধরনের বিশেষ পানীয়- দোচোয়ানী ও জোগোরা। এগুলো সাধারণ চালের ভাত ও বিন্নি চালের ভাত থেকে তৈরি করা হয়।
 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ এপ্রিল ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ