ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত ২০ গবেষণা

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২৭ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত ২০ গবেষণা

প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : বিজ্ঞানের অবদানে সবকিছুই সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। বিজ্ঞানীর নিরলস কঠোর পরিশ্রমে প্রতিদিনই কিছু না কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে।

 

বিজ্ঞান নানা শাখা-প্রশাখা বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আর চলছে গবেষণা ও আবিষ্কার। জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, গণিত শাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র, ভূতত্ব, মানবতত্ব ও আরো অন্যান্য বিষয় এর ওপর সফল গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। আসলে প্রয়োজন বা জিজ্ঞাসা থেকেই যাবতীয় আবিষ্কারের উন্মেষ। আর এ জন্য জানা আর গবেষণার বিকল্প নেই।  বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কারই অবিস্মরণীয়।

 

আবার এই বিজ্ঞানই বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু পরীক্ষা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে একটি শব্দই বলা যায়, অদ্ভুত। সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে তেমনই বেশ কয়েকটি অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর বৈজ্ঞানিক গবেষণা জেনে নিন।

 

* মৃত্যুর ঠিক আগে মানুষের হৃদস্পন্দন কেমন থাকে তা মাপার জন্য এক বিচিত্র পরীক্ষা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৩৮ সালের ৩১ অক্টোবর এক ব্যক্তির কব্জিতে সেন্সর বেঁধে দেন বিজ্ঞানীরা। তারপর তাকে গুলি করে মারা হয়।

 

* কুকুর মানুষের কতটা অনুগত, তা বুঝতে একটি প্রশিক্ষিত কুকুরকে নিয়ে পরীক্ষা করেন এক দল বিজ্ঞানী। সঠিক আজ্ঞা পালন না করলেই বিদ্যুতের শক দেওয়া হচ্ছিল কুকুরটিকে। প্রতি ভুলের জন্য একটু করে শকের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছিল। কুকুরটির অবস্থা দেখে বেশ কয়েক জন এই পরীক্ষায় আর অংশ না নিয়ে বেড়িয়ে যান।

 

* মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুতের শক দিলে কী হয়, তা দেখার জন্য পরীক্ষা হয়েছে বহু বার। তবে ভয়ঙ্করতমটি সম্ভবত ঘটেছিল ১৮০৩ সালে। এক বিশাল প্রেক্ষাগৃহে একটি মৃতদেহের শরীরে ১২০ ভোল্টের বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়। শক দেওয়ার ফলে মৃতদেহ বিকৃত হয়ে স্টেজে সোজা হয়ে কাঁপতে থাকে। ভয়ে জ্ঞান হারান একাধিক দর্শক।

 

* পশুদের মাঝে কোনো মানবশিশু বড় হলে তার চরিত্রে পশুদের ছাপ পড়ে। কিন্তু উল্টোটাও কী সত্যি? এটা বোঝার জন্য একটি শিম্পাঞ্জির বাচ্চাকে তাদের সন্তানের সঙ্গে মানুষ করতে শুরু করেন এক বিজ্ঞানী। দু’জনকেই আর কারো সঙ্গে মিশতে দেওয়া হত না। ফলাফল হয় অদ্ভুত। ন’মাস পরে শিশুটি শিম্পাঞ্জির মতো আচরণ শুরু করে। শিম্পাঞ্জিটিকে এরপর তার নিজের পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হলে কিছুদিন পরে সে মারা যায়।

 

* রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? এটা বোঝার জন্য একটি ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মাথায় চিপ লাগিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আশানুরূপ ফল পেয়ে মানুষের ওপর শুরু হয় পরীক্ষা। ছয় এবং সাতের দশকে করা এই পরীক্ষাগুলোয় বহু মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল।

 

* ১৯৭০ সালের মার্চে বিজ্ঞানীরা একটি বানরের মস্তিষ্ক কেটে অন্য একটি বানরের দেহে তা বসিয়ে দেন। মাত্র দেড় দিন বেঁচেছিল এই বানরটি। পরীক্ষার করতে গিয়ে একাধিক বানরের মৃত্যু হয়েছিল। ভয়ঙ্কর এই পরীক্ষার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল একাধিক সংগঠন।

 

* সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় এক বিচিত্র পদ্ধতির সাহায্য নেন বিখ্যাত চিকিৎসক এউইন ক্যামেরন। তার দাবি ছিল, এই ধরনের কোরো রোগীর মস্তিষ্ককে দীর্ঘ দিন ভালো চিন্তা করতে বাধ্য করা হলে রোগ সেরে যায়। চিকিৎসার অঙ্গ হিসাবে দিনের পর দিন রোগীকে হেডফোনে গান শোনাতেন ক্যামেরন। রোগ নির্মূল হওয়ার বদলে অন্য বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয়।

 

* পীতজ্বর ছোঁয়াচে নয়, এটা প্রমাণ করতে এক বিচিত্র পরীক্ষা করেন স্টাবিন্স ফার্থ। ১৯ শতকের গোড়ার এই চিকিৎসক তার বক্তব্য প্রমাণে পীতজ্বর আক্রান্ত রোগীর বমি খেতেন। পরে অবশ্য প্রমাণ হয়, ফার্থ সঠিক বলেননি। রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ।

 

* ১৯২৭ সালে সাবেক সোভিয়েতের এক বিজ্ঞানী ইভানভ চেষ্টা করেছিলেন মানুষের সঙ্গে বানরের শঙ্কর তৈরির। পরীক্ষা করতে বহু দিন আফ্রিকায় থেকেছিলেন তিনি। পরীক্ষা ব্যর্থ হয় এবং ইভানভের জেল হয়।

 

* ফরাসি বিপ্লবের গিলোটিন পরবর্তী অধ্যায়ের পর বিজ্ঞানীরা একটি বিষয় দেখতে চাইছিলেন, খণ্ডিত মস্তিষ্ক জীবিত রাখা সম্ভব কি না। ১৯২৮ সালে এক সোভিয়েত বিজ্ঞানী এই পরীক্ষায় সফল হন। একটি কুকুরের কাটা মাথা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ‘জীবিত’ রাখেন তিনি। এক দল বিজ্ঞানীর সামনে সেই ‘জীবিত’ মস্তিষ্ক দেখানোও হয়।

 

* কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সমকামীতাকে অসুখ হিসাবে দেখা হত। ১৯৭০ সালে তুরান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক এক সমকামীর মাথায় বিদ্যুতের শক দিয়ে তাকে ‘স্বাভাবিক’ করার পরীক্ষা শুরু করেন। পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও সেই সমকামী মানুষটির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

 

* ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানী দেমিকভ সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন তার আবিষ্কার দিয়ে। তিনি একটি জার্মান শেপার্ডের ঘাড়েরসঙ্গে একটি স্পিতজের মাথা এবং ডান পা জোড়া লাগিয়ে দেন। সবাইকে অবাক করে ‘কুকুরটি’ হেঁটে দেখায়। কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য প্রাণীটি মারা যায়।

 

* একটি হাতিকে ড্রাগ দিলে কী হবে? উত্তর জানার জন্য ১৯৬২ সালে এক দল বিজ্ঞানী একটি হাতিকে ২৯৭ মিলিগ্রাম এলএসডি দেন। মানুষের সহ্যক্ষমতার প্রায় ৩ হাজার গুণ এই পরিমাণ ড্রাগ দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই হাতিটি মারা যায়।

 

* সাইবর্গ কথাটি তখনো বিজ্ঞানীমহলে বিশেষ পরিচিত নয়। সেই সময়ে কেভিন ওয়ারউইক নামে এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নিজের দেহে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে সরাসরি ইন্টারনেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। আধুনিক রোবটের যুগে ইনিই প্রথম সফল সাইবর্গ।

 

* মধ্যযুগের বিখ্যাত পদার্থবিদ প্যারাসেলসাস একবার এক বিচিত্র জীব তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। ১৫০০ সালে তিনি মানুষের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু ঘোড়ার জঠরে স্থাপন করে নিষিক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। পরীক্ষাটির নাম দিয়েছিলেন হোমিনকিউলাস। বলা বাহুল্য, তার সেই পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিল।

 

* বিংশ শতকের গোড়ায় এক মার্কিন বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন তিনি আত্মার ওজন নির্ণয় করতে পারবেন। মৃত্যুর ঠিক আগে ও পরে একাধিক ব্যক্তির ওজন নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আত্মার ওজন ২১ গ্রাম। যদিও তার এই মতামতকে বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব দেননি।

 

* ১৯২৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ার্নার ফোর্সম্যান নিজের কাঁধ দিয়ে নিজেই একটি সার্জিকাল ক্যাথিটার হৃদপিণ্ড পর্যন্ত ঢুকিয়ে দেন। পরে নিজেই সেই অবস্থায় এক্স রে করে দেখেন। তার এই পরীক্ষার জন্য তাকে বহিস্কার করা হয়। পরে ১৯৫৬ সালে প্রথম সফল কার্ডিয়াক ক্যাথেটেরাইজেশনের জন্য নোবেল পান তিনি।

 

* কাতুকুতু দিলে মানুষ শারীরবৃত্তীয় কারণে হাসে, না বাকিদের দেখে হাসে এটা বোঝার জন্য নিজের সন্তানের ওপর অনবরত কাতুকুতু দিয়ে পরীক্ষা করেন ক্লরেন্স লিউবা নামে এক বিজ্ঞানী। যে সময়ে শিশুটিকে কাতুকুতু দেওয়া হতো, তখন অন্য কেউ সেখানে থাকতেন না। সাত মাস পরীক্ষার পর দেখা গেল শারীরবৃত্তীয় কারণেই কাতুকুতু দিলে মানুষ হাসে, অন্যদের দেখে নয়।

 

* আজকের পৃথিবীর বেশির ভাগ দূষণের জন্য দায়ী করা হয় টমাস মিডগ্লে জুনিয়রকে। তিনিই প্রথম লেডমিশ্রিত গ্যসোলিন আবিষ্কার করেন। এবং এটি ক্ষতিকারক নয় বোঝাতে নিজে সেটি দিয়ে হাত ধুয়ে টানা এক মিনিট সেটির গন্ধ শোঁকেন। তখন তার কিছু না হলেও পরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হোন তিনি।

 

* ১৯৩০ সালে রবার্ট কর্নিশ নামে ক্যলিফোর্নিয়ার এক বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন, তিনি মৃতকে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারেন। বক্তব্য প্রমাণে শেয়ালের ওপর পরীক্ষা করেন তিনি। মৃত শেয়ালগুলোকে অনবরত রক্ত দিয়ে এবং তার নিজের আবিষ্কারের দু’টি ইঞ্জেকশন দেন তিনি। কয়েক মুহূর্তের জন্য সত্যিই শেয়ালগুলোর দেহে ‘প্রাণ’ ফিরে আসে। তবে এর পরে আর কখনো এই পরীক্ষায় সফল হননি তিনি।

 

 

 রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়