ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে বাণিজ্য

তানজিমুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) লাইন সম্প্রসারণে অনিয়ম ও খুঁটি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ সব অনিয়মে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এর ফলে বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। বিউবো সংশ্লিষ্ট কাজের নথিপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
 
অভিযোগে জানা গেছে, বিউবোর কর্মকর্তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে মিলেমিশে খুঁটি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। পরিকল্পনা ও ডিজাইন অনুযায়ী লাইন সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ না করে ‘যেখানে টাকা সেখানে খুঁটি’ নীতিতে কাজ করছেন পিডিবির গোদাগাড়ী বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ। এ ছাড়া দালাল সিন্ডিকেট ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা খুঁটি বাণিজ্য করে মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়ে নিয়েছেন।

পিডিবির একটি সূত্র মতে, রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচিত ওমর ফারুক চৌধুরী শিল্প প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে গোদাগাড়ী উপজেলার ৫২টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ বিভাগে চাহিদাপত্র (ডিও) দেন। সে অনুযায়ী বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এবং পরবর্তীতে বার্ষিক পরিকল্পনায় সংশোধিত আকারে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত সময়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের লাইন সম্প্রসারণ, ট্রান্সফরমার স্থাপন ও সাব-স্টেশনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করা হয়।

এই পরিকল্পনার আওতায় ২০১৩ সালের প্রথমদিকে ২১০টি বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলেও গত জুনে ঠিকাদারকে সব কাজের বিল বাবদ প্রায় ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।

এদিকে কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও গত ২৮ আগস্ট বিভিন্ন উপজেলার স্থানে খুঁটি বসানোর কাজ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে এখনো ১৭টি খুঁটি গোদাগাড়ী বিএমডিএ ইয়ার্ডে পড়ে রয়েছে। এসব খুঁটি বিভিন্ন এলাকায় বসানোর জন্য অগ্রিম টাকা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিজাইন ও দরপত্র অনুযায়ী যেসব গ্রামে খুঁটি বসানোর কথা সেসব গ্রামে কোনো কাজ হয়নি। খুঁটি বাণিজ্যের কারণে যত্রতত্র খুঁটি বসানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের সহড়াপাড়া গ্রামের ১১০টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে সাতটি খুঁটি স্থাপনের কথা থাকলেও পার্শ্ববর্তী কদমহাজির মোড়ের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির প্রকৌশলী রাইতুল ইসলামের পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোজন দেওয়ার জন্য ওই সাটি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। তার পরও শেষ খুঁটি থেকে প্রকৌশলী রাইতুল ইসলামের বাড়ির দূরত্ব ৯৮ গজ। কিন্তু নিয়মানুযায়ী শেষ খুঁটি থেকে ৩০ গজের বেশি দূরত্ব হলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায় না।

এদিকে বিজয়নগর ফিডারের আওতায় বিদিরপুর কিসমতপাড়া এলাকায় লাইন পুনর্বাসনের কথা থাকলেও সেখানে কাজ হয়নি। অন্যদিকে শিডিউলে উল্লেখ না থাকলেও পিরিজপুর ফুটবল মাঠের পার্শ্বে দুটি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। একইভাবে শিডিউল বহির্ভূতভাবে সাব্দিপুরে দুটি খুঁটি
স্থাপন করা হয়েছে।

আবার শিডিউলে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মাদারপুর মাওলানার গেট থেকে ঝুড়িউলাপাড়া হয়ে সিডির মোড় পর্যন্ত ২০টি খুঁটি স্থাপনের উল্লেখ থাকলেও এলাকাগুলোতে খুঁটি স্থাপন করা হয়নি। শিডিউলে না থাকলেও কুমারপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় খুঁটি বসানো হয়েছে। বালিয়াঘাট ফিডারের আওতায় ঘনশ্যামপুর, জাহানাবাদ, মোল্লাাপাড়া, কবুতরপাড়াতেও খুঁটি বসানো হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাইন সংরক্ষণ কাজেও অনিয়ম হয়েছে। প্রতিটি খুঁটি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা টাকা দিয়েছেন শিডিউলে না থাকলেও সেখানে খুঁটি বসানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তার লাগানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ট্রান্সফরমার।

এদিকে লাইনে নিম্নমানের তার লাগানো হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্নমানের তার লাগানোয় সঞ্চালন বিঘ্ন হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

গোদাগাড়ী পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমান আলী জানান, তার এলাকা বারুইপাড়ায় ২২টি খুঁটি স্থাপনের শিডিউল থাকলেও বসানো হয়েছে মাত্র নয়টি। এতে অনেকে সংযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এ ছাড়া মহিউদ্দিন কলেজপাড়ার জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, লাইনে যেসব তার দেওয়া হয়েছে সেগুলো খুবই নিম্নমানের। এসব তারে স্বাভাবিক ভোল্টেজ সঞ্চালন করতে পারছে না। ফলে প্রায়ই ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে।

এলাকাবাসী ও গোদাগাড়ী পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিডিউল বহির্ভূতভাবে ১৬টি খুঁটি নিয়েছেন, যা তার নিজের এলাকা কুমরপুরের নিমতলা রানীনগরে স্থাপন করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান নিয়েছেন সাতটি খুঁটি। পৌর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি রবিউল আলম নিয়েছেন ছয়টি ও সভাপতি অয়েজুদ্দিন বিশ্বাস নিয়েছেন ছয়টি খুঁটি।

তবে এসব নেতা খুঁটি বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। খুঁটি বাণিজ্যের অভিযোগ মিথ্যা বলে তাদের দাবি।

গোদাগাড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে শিডিউল অনুযায়ী খুঁটি ও লাইন স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে শিডিউল অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে কাজ সম্পন্ন করা হবে।

 



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫/তানজিমুল/উজ্জল/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়