ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিশ্বের প্রথম ‘গ্রীন নিট পোশাক কারাখানা’ নারায়ণগঞ্জে!

নিয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১০, ২৫ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্বের প্রথম ‘গ্রীন নিট পোশাক কারাখানা’ নারায়ণগঞ্জে!

নিয়াজ মাহমুদ, না.গঞ্জ থেকে ফিরে : পরিবেশবান্ধব বা গ্রীন কর্মপরিবেশ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এখন আর সেটা স্রেফ একটি স্লোগান কিংবা সভা সেমিনারে আলোচিত কল্পিত বিষয় নয়। বাংলাদেশের গ্রীন পোশাক কারখানা এখন ব্র্যান্ডিং করার বিষয়।

 

পোশাক শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর আমাদের জীবন পুরোপুরি নির্ভরশীল। পরিবেশকে উপেক্ষা করে পৃথিবীতে কিছুই করা যায় না। সুন্দর অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত সমাজ ব্যবস্থার অংশ হতে পারে না। তেমনিভাবে সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য প্রকৃতির আনুকুল ব্যবস্থায় দেশেই নির্মাণ হয়েছে একটি নিট পোশাক কারখানা।

 

রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুর প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড। অন্যান্য দু’ চারটি পোশাক কারখানা থেকে ব্যতিক্রম। ২৮ বিঘা জমির উপর নির্মিত এ কারখানাটি হতে যাচ্ছে দেশের তো বটেই, বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব নিট পোশাক কারখানা।

 

প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই কারখানায় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। কারখানার ছাদে স্থাপিত সৌরবিদ্যুতের প্যানেলের মাধ্যমে চাহিদার ১৩ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে। কারখানা ভবন থেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা হবে। বাথরুমে বসানো হয়েছে এমন ধরনের সরঞ্জাম, যা সাশ্রয় করবে পানি। সব মিলিয়ে অন্য তৈরি পোশাক কারখানার চেয়ে এখানে বিদ্যুৎ ও পানি অর্ধেক কম লাগবে।’

 

কারখানাটি বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব নিট পোশাক কারখানা। আমেরিকার ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ হচ্ছে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এ সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে নির্মাণ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো করা কারখানাকে দেওয়া হয় প্লাটিনাম মর্যাদা।

 

 

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমই’র প্রাক্তন সভাপতি মো. ফজলুল হক রিইজিংবিডিকে জানান, প্লামি ফ্যাশনস কর্তৃপক্ষের দাবি, ইউএসজিবিসির নিয়ম শুরু থেকেই মেনে চলছে প্লামি ফ্যাশনস। নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের সবকিছুই তাদের নির্দেশনায় হয়েছে। চলতি মাসের ইউএসজিবিসি প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের শেষেই সনদ পাওয়া যাবে।

 

শনিবার কারখানাটি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তিনটি দোতলা ভবন রয়েছে। যার ছাদ টিন শিট দিয়ে নির্মিত। ফটকের পাশেই বাইসাইকেল রাখার ছাউনি। শ্রমিকরা ছাউনিতে তাদের সাইকেল রাখবেন। কারখানায় ১২শ’ শ্রমিক এমন পরিবেশে কাজ করবেন। রয়েছে ছোট লেক ও ফোয়ারা।

 

ভবনগুলোতে ওপরের তলায় কাজ চলবে সূর্যের আলোতে। আকাশ মেঘলা থাকলে আপনাআপনি জ্বলে উঠে বাতি। ওঠা-নামার জন্য পাঁচটি সিঁড়ি ও বের হওয়ার দরজার সংখ্যা ১১টি।

 

কারখানাটি ঘুরে আরো দেখা যায়, পুরো ভবনে পাইপ লাগানো হয়েছে, যা দিয়ে বৃষ্টির পানি নিচের ট্যাঙ্কে জমা করা হবে। এ জন্য দুই লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একাধিক ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। আর এই পানি বাথরুমে এবং প্রয়োজনে অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত হবে। পাশেই আছে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি)।

 

তিনটি ভবনের একটি ভবন শুধুই শ্রমিকদের জন্য ব্যবহার হবে। নিচতলায় শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র ও খাবারের জন্য ডাইনিং কক্ষ থাকছে। ওপরের তলায় আছে নামাজঘর ও একটি প্রশিক্ষণ কক্ষ। এখানে একসঙ্গে ২০০ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে। ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল লাগানো হয়েছে।

 

মাসে ৯ লাখ ২০ হাজার পিস পোশাক উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন এ কারখানাটি শনিবার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে পরিবেশবান্ধব গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি গড়তে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগসহ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।’

 

কয়েকজন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য পোশাক কারখানা থেকে মাসিক বেতন এ কারখানায় বেশি। এছাড়াও মেডিক্যাল ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।  

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৫/নিয়াজ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়