ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে অবশেষে বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংস্থাটির অনুসন্ধান শুরুর প্রায় চার বছর পর তাকে তলব করা হলো। দুদক থেকে পাঠানো চিঠিতে তাকে আগামী ৪ ডিসেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তলব করা হয়েছে ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদেরও। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

প্রথম দফায় বুধবার বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দুই সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন- পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন্নাহার।

বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ বা আইনের আওতায় আনা প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেছেন, বেসিক ব্যাংইকের বিষয়ে আমি কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি তদন্তের প্রয়োজনে শুধু পরিচালনা পর্ষদ নয়, যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। আমরা লিখিতভাবে তাদেরকে জানিয়েছি। চেয়ারম্যা নসহ পরিচালনা পর্ষদের যাকে দরকার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এক্ষেত্রে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় মোট আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। মামলায় ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আনা হয়।

এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখার মাধ্যমে অনিয়ম করে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান রয়েছে। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রযেছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণ গ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, গ্রেপ্তার হওয়া মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি।

তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চুরসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সম্পৃক্ততা দুদকের অনুসন্ধানে আসেনি। তবে তদন্তকালে যদি তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে জাড়িতদের পরবর্তীকালে আসামি করা হবে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিএজি কার্যালয় ও খোদ বেসিক ব্যাংকের নানা প্রতিবেদনে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে শুনানিতে এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দুদককে। মূলত এরপরই দুদক থেকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মামলার তদন্তে দুদকের উপ পরিচালক মোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম ও ঋত্বিক সাহা, সহকারী পরিচালক শামসুল আলম, উপসহকারী পরিচালক ফজলে হোসেন ও মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার তদারককারী কর্মকর্তারা হলেন পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়