ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বৈশাখী ধাঁধা || আহসান হাবীব

আহসান হাবীব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ১৩ এপ্রিল ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৈশাখী ধাঁধা || আহসান হাবীব

এবারের পহেলা বৈশাখে মাস্ক পরা, ভুভুজেলা নিষিদ্ধ, ইলিশ খাওয়াও নাকি নিষিদ্ধ! এত নিষিদ্ধের ভেতর পহেলা বৈশাখ কি জমবে? তারপরও বাজারে ইলিশ কেনার ধুম পরে গেছে। সাতশ টাকার ইলিশ নাকি সাত হাজার টাকা হয়ে গেছে- এমনটাই শোনা যাচ্ছে। মাকের্টে বৈশাখী কেনাকাটার ভিড়। রাস্তায় এমনি জ্যাম তো আছেই গোদের ওপর বিষ ফোড়ার মত যুক্ত হয়েছে স্পেশাল বৈশাখী জ্যাম।

এমনি এক জ্যামে পড়েছেন এক ভদ্রলোক। গাড়িতে বসে দর দর করে ঘামছেন। বাপের আমলে কেনা পুরোনো গাড়ির এসি নষ্ট তারপরও কাচ তুলে রেখেছেন। নইলে আশপাশের পশ গাড়ির লোকজন বুঝে যাবে এই গাড়ির এসি নষ্ট। এই সময় এক দুস্থ লোক গাড়ির জানালার কাচে টোকা দিল। ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে কাচ নামালেন-

কী ব্যাপার?
স্যার বিরক্ত না হলে একটা কথা বলতাম।
জলদি  বলো কী বলবে?
স্যার আমি গরীব মানুষ। নতুন বিয়ে করেছি। বউয়ের শখ হয়েছে পহেলা বৈশাখে ইলিশ দিয়ে পান্তা খাবে। তাই ধার দেনা করে বহু কষ্টে একটা ইলিশ কিনেও ছিলাম তারপর...
তারপর?
তারপর স্যার এই জ্যামের ভিতর দিয়া রাস্তা পার হইতেছিলাম, হঠাৎ দেখি ব্যাগে মাছটা নাই। প্রথমে ভাবছিলাম এ নিশ্চয়ই মেছো ভূতের কাজ। পরে ভাবলাম এই ঢাকা শহরে মেছো ভূত কোত্থাইকা আইব! আমগো গাও গেরাম হইলে একটা কথা আছিল। পরে দেখি ... এই দেখেন স্যার ব্যাগটা ছিড়া আছিল, ব্যাগ থাইকা মাছটা পইরা গেছে। অনেক খুঁজলাম, মাছটা স্যার আর পাইলাম না। তাই স্যার সবার কাছে হাত পাতছি, সবার সাহায্য নিয়া যদি আবার একটা ইলিশ মাছ কিনতে পারি, বুঝেন তো স্যার নতুন বউয়ের কাছে মুখ দেখাই কীভাবে ইলিশ না নিয়া গেলে!  

ভদ্রলোক লোকটার অভিনব বৈশাখী বুদ্ধি দেখে ভেতরে ভেতরে চমৎকৃত হলেন। মোলায়েম গলায় বললেন, ‘মিয়া গল্প তো ভালোই বানাইছ। এই গল্প লেইখা পত্রিকার বিশেষ বৈশাখী সংখ্যায় পাঠায়া দাও। ছাপলে বিল পাইবা! তারপর একটা হুঙ্কার দিলেন, ‘ব্যাটা বাটপার যা ভাগ। আমার সাথে ফাপড় নাও, জুতিয়ে তোর ইলিশ খাওয়া ... ইত্যাদি ইত্যাদি বলে কাচ তুলে দিয়ে ফের দর দর করে ঘামতে লাগলেন।   

দুস্থ লোকটা সরে গেল পুনরায় অন্য কোনো গাড়ির জানালায় টোকা দিতে।

এদিকে ভদ্রলোক হঠাৎ খেয়াল করলেন আরে একি! ঠিক তার সামনের গাড়ির পেছনের বাম্পারের নিচে সত্যিই একটা আস্ত ইলিশ মাছ পড়ে আছে। তিনি ড্রাইভারকে দিয়ে মাছটা তুলে আনালেন। ছি ছি লোকটা তাহলে সত্যি কথাই বলেছিল আর তিনি কিনা অবিশ্বাস করে বিশ্রি গালাগাল দিয়ে লেঅকটিকে তাড়িয়ে দিয়েছেন! তিনি ড্রাইভারকে বললেন, ‘যাও তো মাছটা চট করে ঐ লোকটাকে দিয়ে এসো, আর এই টাকাটাও দিও।’

বলে মানিব্যাগ থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে ড্রাইভারের হাতে দিলেন। সমস্ত ঘটনায় ড্রাইভারও বেশ উত্তেজিত। চোখের সামনে এরকম একটা মানবিক ঘটনা! সে একশ টাকা আর ইলিশ মাছ নিয়ে ছুটলো লোকটার সন্ধানে।

একটু পরই ড্রাইভার ফিরে এলো। হাসি মুখে বলল, ‘স্যার দিছি, লোকটা যে কি খুশি হইছে!’
খুশী হওয়ারই কথা। আত্মতৃপ্তি নিয়ে ভাবলেন ভদ্রলোক- টাকাটা দিয়ে ভালই করেছেন, গালাগাল করাটা ঠিক হয়নি,  আহা বেচারা নতুন বিয়ে করেছে।

আর ঠিক তখনই ভ্রু কোঁচকানো এক স্মার্ট মহিলা এসে গাড়ির পাশে দাঁড়ালেন। এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। তার হাতে তিনটি ইলিশ দড়ি দিয়ে বাধা। মহিলা স্বগোক্তি করলেন, ‘কি আশ্চর্য এক হালি ইলিশ কিনলাম,  রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা যে দড়ি ছিঁড়ে কোথায় পড়ল! আপনারা কেউ দেখেছন?’

প্রশ্নটা ঐ গাড়ির ভদ্রলোককেই। ভদ্রলোক ফ্যাকাশে হাসি হেসে এমন ভাবে মাথা নাড়লেন যেন তিনি এই জীবনে ইলিশ দেখা তো দূরের কথা ইলিশ মাছের নামও শোনেন নি। ড্রাইভার হারামজাদা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে!

প্রিয় পাঠক, এবার আপনারাই বিবেচনা করুন এই তিনজনের মধ্যে মানে মহিলা, ভদ্রলোক আর বিয়ে করা দুস্থ লোক- কার বৈশাখটা সবচেয়ে ভালো কাটবে? খুবই সিম্পল একটা জলবৎ তরলং বৈশাখী  ধাঁধা!
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ এপ্রিল ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়