ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অভিযোগ করুণ ১৬২৩৬ নম্বরে
মামুন || রাইজিংবিডি.কম
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে কোনো হয়রানির শিকার হলে কিংবা কোনো অভিযোগ থাকলে ফোন করুণ ‘১৬২৩৬’ নম্বরে।
সুনির্দিস্ট যেকোনো অভিযোগের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেকোনো অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এই কেন্দ্র।
গ্রাহক যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যেক ব্যাংকের তথ্য প্রদান কেন্দ্রের সামনে অথবা ক্যাশ কাউন্টারে ১৬২৩৬ নম্বরযুক্ত স্টিকার লাগিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া ই-মেইল [email protected], ফ্যাক্স ৮৮-০২-৯৫৩০৪৬৪ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব পোর্টালে www.bb.org.bd/comlainbox/complainbox.php গ্রাহক অভিযোগ কিংবা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারবেন। মহাব্যবস্থাপক, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় (দ্বিতীয় ভবন, ১৮ তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ বরাবর ডাক ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অভিযোগ করা যাবে।
সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (অফিস চলাকালীন সময়) গ্রাহক কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করতে পারেন।
যেসব বিষয়ে গ্রাহক অভিযোগ করতে পারেন তা হচ্ছে- বিভিন্ন ধরনের হিসাব খোলা ও হিসাব পরিচালনাসংক্রান্ত অভিযোগ।সুদের হিসাবে ভুল, অতিরিক্ত সুদ আদায়, সুদহার ধার্যকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘনসংক্রান্ত অভিযোগ। চার্জ, কমিশন, ফি ধার্যের অনিয়ম। অন্তর্মূখী রেমিট্যান্স প্রদানে দেরি করা বা অস্বীকৃতি জানানো, গ্যারান্টি বা এলসির বিপরীতে পেমেন্ট দিতে অস্বীকৃতি জানানো, চেক, বিল ও ড্রাফটের অর্থ আদায়ে বা আদায়কৃত অর্থ প্রদানে বিলম্ব করা হলে। ঋণ বা আমানতের ওপর সুদহার বিষয়ে গ্রাহককে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিলে। ঋণের জন্য আবেদন করার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ করে ঋণ মঞ্জুরে দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেলে অভিযোগ করুন। এ ছাড়া বেতন, পেনশন, ভাতা ইত্যাদি প্রদানে দেরি করা হলে, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা এটিএম পরিচালনায় অনিয়ম দেখা দিলে, লকার সেবায় হয়রানি বা অনিয়ম ইত্যাদি বিষয়সহ অন্যান্য অভিযোগ থাকলে গ্রাহক তা জানাতে পারেন।
এর আগে রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের উপস্থিতিতে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের অভিযোগের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে হয়রানির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অভিযোগের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সংখ্যানুপাতে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে, ২৫৬টি। তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথক্রমে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক।
প্রতিবেদনে প্রকাশিত শীর্ষ ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাপ্তির হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা মোট অভিযোগের ২৮.১৩ শতাংশ।
এতে আরো দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে ব্র্যাক ব্যংকের বিরুদ্ধে। ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ১৭৫টি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সংখ্যা ১২৩টি।
তবে সার্বিকভাবে অভিযোগ জমা পড়ার দিক থেকে ব্র্যাক ব্যাংকের অবস্থান দ্বিতীয়। আর ইসলামী ব্যাংক আছে পঞ্চম স্থানে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের সবগুলো ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩০টি। আর সিআইপিসি চালু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ ২০১১ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট অভিযোগের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯২০টি; যার শতভাগই নিষ্পত্তি হয়েছে।
তবে আলোচিত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় অভিযোগ তুলনামুলক কম এসেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাপ্ত মোট অভিযোগ ৪ হাজার ৪৭৬টি। আর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এ সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩০টি। এ হিসাবে অভিযোগ কমেছে ১২.২০ শতাংশ।
অভিযোগগুলোর সবচেয়ে বেশি এসেছে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত, এ সংখ্যা ১ হাজার ৩৬১টি। যা মোট অভিযোগের ৩৪ শতাংশ। অন্যগুলোর মধ্য রয়েছে ঋণ ও অগ্রিমসংক্রান্ত ৬৭০টি, কার্ডসংক্রান্ত ২২৮টি, মোবাইল ব্যাংকিংসংক্রান্ত ৯১টি, ট্রেড বিলসংক্রান্ত ২১টি, রেমিট্যান্সসংক্রান্ত ৬৪টি, স্থানীয় বিলসংক্রান্ত ৪১২টি, বৈদেশিক বিলসংক্রান্ত ৩৬৮টি, ব্যাংক গ্যারান্টিসংক্রান্ত ৮৭টি ও বিবিধ ৬২৮টি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৫/মামুন/রাসেল পারভেজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন