ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ব্রেক্সিট : অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন ধারা সূচিত হতে পারে

তৈয়বুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২৫ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্রেক্সিট : অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন ধারা সূচিত হতে পারে

তৈয়বুর রহমান : অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) না থাকার পক্ষে রায় দিয়েছে ব্রিটিশরা। এতে সম্ভত কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন বোধ করবে জার্মানি। বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ও শীল্প নীতি নিয়ে।

 

তবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ব্রিটেনের অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন ধারা সূচিত হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত ইউরোপ জুড়েও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সংরক্ষণশীল নীতির বদলে জার্মানি ও ব্রিটেন সার্বিকভাবে মূক্তবাজার অর্থনীতি ও দৃঢ় আর্থিক নীতির প্রয়োজনীয়তার ব্যাপরে একমত। এছাড়া সদস্য দেশগুলো কোনো কোনো সময় আর্থিক নীতির ব্যাপারে শিথিল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে থাকেন। কিন্তু জার্মানি ও ব্রিটেন দৃষ্টিভঙ্গী কিছুটা হলেও দৃঢ়। তাই ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার গণরায়ে খানিকটা হলেও বেকায়দায় পড়বে জার্মানী।

 

কেননা কাউন্সিল অব মিনিস্টার্সেও সমমনা একটি সদস্য দেশকে হারালো তারা। এই কাউন্সিল অব মিনিস্টার্সই ইউনিয়নের অধিকাকাংশ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

 

 

সর্বাধিক জনসংখ্যা, দৃঢ় ও টেকসই অর্থনীতি হওয়ার পরও কাউন্সিলে জার্মানির এখন আর কোনো ক্ষমতাই থাকলো না। বলতে গেলে অপর পাঁচটি সদস্য দেশের মতো অবস্থা হলে তাদের। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, জার্মনির মোট উৎপাদন ইতালীর মোট উৎপাদনের দ্বিগুন। মার্গারেট থেচারের ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্য ছিল বাণিজ্য উদারীকরণ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের পক্ষে। সুতরাং অনেক বিষয়ে জর্মানি ও ব্রিটেন চলতো চোখে চোখ রেখে। ইইউ-এর বাজার অর্থনীতির মুখপাত্র যুক্তরাজ্যর অনুপস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলো এখন এ ব্যাপারে তাদের চিন্তাধারা কিভাবে সংগঠিত করে সেটাই দেখার বিষয়।

 

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বাধিক অবদান রেখে আসছিল যুক্তরাজ্য। আর সর্বাধিক অবদান রেখে আসছে জার্মানি। সুতরাং ইউনিয়নের ব্যায় হ্রাসের প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ১০ শতাংশ। বেড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে যারা ভোট দিয়েছে, তারা ইউনিয়নে দুর্নীতি হ্রাস ও অপচয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত ব্যয় একেবারে বন্ধ করারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।

 

তথাকথিত ২০১৫ সালের ফাইভ প্রেসিডেন্টস রিপোর্টে ইউরোর সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবে বৃহত্তর আর্থিক কেন্দ্রিভূত করাকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এখন কথা হচ্ছে, এমনটি যদি হয়েই থাকে তাহলে ইইউ পূর্ণ রাজনৈতিক ইউনিয়নের পথে এগিয়ে যাবে। যার স্বপ্ন জাঁ মনেট (১৮৮৮-১৯৭৯) প্রায় স্বপ্ন দেখতেন। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তী একীভূত ইউরোপের স্বপ্ন তিনি প্রায়ই দেখতেন।

 

 

কিন্তু ১৯৯৯ সালে ইউরো চালু হওয়ার পর এটি পরিকল্পনামাফিক কাজ করেনি। কেননা ঋণদাতা দেশগুলো ও ঋণ গ্রহিতা দেশগুলোর মধ্যে একটা টানাপোড়েন ছিল। ঋণদাতা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানি, ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ ও নেদারল্যান্ডস। ঋণ গ্রহিতাদেশ গুলোর মধ্যে বিশেষ করে গ্রিসের কথা উল্লেখ করা যায়। তবে মাঝে মাঝে ইতালি ও স্পেনও ঋণ নিয়ে থাকে।

 

লন্ডন শহর কি ইইউ-এর বাইরে থেকে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে ? এই মুহূর্তে শহরে সবচেয়ে বেশি বেচা-কেনা হচ্ছে ডলার। কিন্তু যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য নয় কিংবা আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে উচ্চ শেয়ার পাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যোর ৫১ তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হওয়ারও ইচ্ছা যুক্তরাজ্যের নেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, আন্তর্জাতিক অর্থবাজারে বেশির ভাগ বেচাকেনা হয় ডলারে।

 

বহুদেশের সিকিউরিটি ও এক শ’রও বেশি দেশের মূদ্রা কেনাবেচা হয় লন্ডনে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

বিশ্ব উৎপাদনে ইউরোজোনের শেয়ার গত ২০ বছরে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্ব উৎপাদনে এর শেয়ার বর্তমানে মাত্র ১৫ শতাংশ এবং তা অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

 

লোকজনের অবাধ চলাচলের অর্থ হলো ইউ থেকে অবাধে লোকজন আসতে পারবে। কিন্তু ব্রিটিশরা এর বিরোধী।

 

ইইউ অন্তর্র্ভূক্ত কোনো দেশে কোনো কিছু রফতানি করতে চাইলে ব্রিটিশ কোম্পানিকে ইইউ-এর আইন মেনে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে কি এমন কোনো কারণ আছে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা গড়ে না তোলার।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৬/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়