ভাত খেলে কি বাত বাড়ে?
ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম
ডা. সজল আশফাক : যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে , বয়স পঞ্চাশের কোঠায় , মাঝে মধ্যে শরীরের দু’একটি গিঁট ফুলে ওঠে; তাদের প্রায় অধিকাংশেরই ধারণা ভাত খেলে শরীরে রস জমে । এই রস জমার অর্থ হচ্ছে শরীরের ২-১ টি জয়েন্ট বা গিঁট ফুলে ওঠা। জয়েন্টের মধ্যে হয়তো তরল পদার্থও জমে। এ ধরনের সমস্যা আক্রান্তদের অনেকেই ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়া ভালো বলে মনে করেন।
তারা মনে করেন রুটি শুকনো খাবার তাই এটি খেলে শরীরে পানি জমবে না । আর ভাত ভেজা খাবার তাই তাতে শরীরে পানি জমবে। যদিও ভাত এবং রুটির মধ্যে খাদ্যগুণ বিষয়ক তেমন কোনো পার্থক্য নেই, তারপরও অনেকেই এটি বিশ্বাস করে আসছেন যুগযুগ ধরে ।
ভাত এবং রুটি এই দুটি খাবারেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। এ কারণে ভাত এবং রুটি উভয়েই শর্করা গোত্রীয় খাবার বলে পরিচিত। প্রতি ১০০গ্রাম বিভিন্ন ধরনের (সিদ্ধ, আতপ, কলেছাটা, ঢেঁকি ছাটা ) চালের মধ্যে শর্করার পরিমাণ ৭৬.৭ থেকে ৭৯ গ্রাম । আর ১০০ গ্রাম আটাতে শর্করার পরিমাণ ৬৯.৪ গ্রাম। ১০০গ্রাম চালে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ ৬.৪ থেকে ৮.৫ গ্রাম। একই পরিমাণ আটায় প্রোটিনের পরিমাণ ১২.১১ গ্রাম। চালে চর্বির পরিমাণ শতকরা ০.৪-১.০ ভাগ আর আটায় চর্বির পরিমাণ শতকরা ১২.১ ভাগ। আটা এবং চালে ভিটামিন বি-২ এর পরিমাণ খুবই কাছাকাছি। তবে আটাতে ভিটামিন বি-১ , ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণ চালের তুলনায় কিছুটা বেশি। খাদ্যশক্তির বিবেচনায় চাল এবং আটার অবস্থানও প্রায় এক । প্রতি ১০০ গ্রাম চাল এবং আটার খাদ্যশক্তি যথাক্রমে ৩৪৫-৩৬৫ কিলো ক্যালরি এবং ৩৪১ কিলো ক্যালরি।
ভাত এবং রুটির মধ্যে এতো মিলের মধ্যেও কিছু কিছু অমিল রয়েছে । রুটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ভাতের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি । রুটিতে আঁশ বা ফাইবারের পরিমাণও ভাতের চেয়ে বেশি । কিন্তু রুটিতে যে প্রোটিন থাকে তার নাম গ্লুটেন । এই গ্লুটেন সহজে হজম হয় না । তবে ভাতের প্রোটিন রুটির তুলনায় সহজে হজম হয় । অন্যদিকে ভাতে রুটির তুলনায় কম পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ভাত ততটা ভূমিকা রাখতে পারে না । উল্লেখ্য এ সব ফাইবারের মধ্যে থাকে সেলুলোজ, পেকটিন এবং লিগনিন জাতীয় কিছু উপাদান, যা শরীরে শোষিত না হয়ে খাদ্যের চর্বিসহ বেশ কিছু ক্ষতিকর উপাদানের শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে। এ ছাড়াও এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । তবে একটা কথা জেনে রাখা ভালো , খুব বেশি ছাঁটা চাল এবং কম ভূষিযুক্ত আটা কখনোই কম ছাঁটা চাল এবং বেশি ভূষিযুক্ত আটার চেয়ে স্বাস্থ্যকর নয় ।
ভাত ও রুটির তুলনামূলক বিচারে কাউকেই খুব বেশি খাটো করে দেখার উপায় নেই । সুতরাং ভাত খেলে শরীরে পানি আসবে, রস জমবে, বাত বেড়ে যাবে আর রুটিতে সে সবের কিছুই হবে না এমনটি হবার নয়। হয়তো চাল পানিতে সিদ্ধ করতে হয় বলে ভাতের মধ্যে পানির পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। তবে সেই পানিই যে শরীরে রসের উদ্রেক করে তা কিন্তু নয়। সব খাবারেই কিছু না কিছু জলীয় পদার্থ বা পানি থাকে। অথচ সেইসব খাবারের জলীয় পদার্থ বাতের রোগীর শরীরে রসের উদ্রেক করেছে বলে কখনো শোনা যায় না।
কিন্তু ভাত দেখলেই রসে ভরা হাত-পায়ের ছবি চোখে ভেসে ওঠে। পুরো ব্যাপারটিই মানুষের মনগড়া ভুল ধারণা। এর মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত সত্য নেই। বাতের রোগী হয়েছেন বলে যে , ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাতের বদলে রুটি খেতে হবে এমন কথা নেই। বাতের রোগী ভাত কিংবা রুটির যে কোনটিই খেতে পারবেন । কারণ ভাত খেলে শরীরে রস জমে, হাত-পা ফোলে, বাত বেড়ে যায়- এগুলোর কোনটিই সত্যি নয় ।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৫/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন