ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বর্বরতার সাক্ষী গঙ্গাসাগর গণকবর

সমীর চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বর্বরতার সাক্ষী গঙ্গাসাগর গণকবর

গঙ্গাসাগর গণকবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : আখাউড়া-ধরখার সড়কের পাশে ছোট গ্রাম টানমান্দাইল। গণহত্যার জন্য সারাদেশের মতো এই গ্রামটিকেও বেছে নেয় পাকবাহিনী। তাতে সহায়তা করে এদেশের রাজাকাররা।

 

ভয়াবহতা শুরু ২৩ আগস্ট। ওই দিন গ্রামের পুরুষদের ধরে এনে শুরু করে নির্মম নির্যাতন। বেয়নেটের আঘাতে জর্জরিত করে নিয়ে যাওয়া হয় দেড় কিলোমিটার দূরে আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর গ্রামের দীঘিরপাড়ে। সেখানে আবারো চলে কয়েকদফা নির্যাতন। পরে সেখানে তাদের দিয়েই বিরাট গর্ত করে পাকবাহিনী।

 

পরে হাত বেঁধে সেই গর্তের সামনে জোড়ায় জোড়ায় দাঁড় করিয়ে মাথায়, বুকে, পেটে গুলি করতে থাকে নরপশুরা। এভাবে ৩৩ জনকে হত্যা করা হয়। নরপশুরা তাদের সেই গর্তে পুতে ফেলে। মৃত্যু আতঙ্কে সেদিন পুরো এলাকা জনমানবহীন হয়ে পড়েছিল।

 

Brahmanbaria

গঙ্গাসাগর গণকবরে ঝুলিয়ে শহীদদের নামের তালিকা

 

ওইদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, মো. গোলাম কাদির, ডা. আবু তাহের, মো. তোতা মিয়া, মো. আবুল হাশেম মোল্লা, গোলাম মাওলা, আব্দুল গনি, হায়দার আলী, শামসু মিয়া, আব্দুল মান্নাফ মিয়া, খালেদ মোল্লা, মোজাউল হক সরকার, মালু মিয়া, ছোবাহান মিয়া, রাজু মিয়া, আবুল ফায়েজ, তারু মিয়া, আবুল বাশার, রিয়াজ উদ্দিন, হাজি কাছু মিয়া, আব্দুল মান্নান, খেলু মিয়া, সারজুল হক, তারাচান্দ মোল্লা, বাবরু মিয়া, আব্দুল আলিম, সাধণ মিয়া, ওমর আলি, সমল মিয়া, মোসলেম মিয়া, ফজলুল হক ও আনু মিয়া।

 

এভাবেই নির্যাতন করতে থাকে পাকবাহিনী। অবশেষে দেশ স্বাধীন হয়। গ্রামে আসতে শুরু করে মানুষ। খোঁড়া হয় সেই গর্ত। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষত-বিক্ষত লাশ পঁচে গিয়েছিল। অনেক লাশই হয়ে গিয়েছিল কঙ্কালসার। ফলে শনাক্ত করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল।

 

ঘটনার দিনের কথা স্মরণ করে গণকবরের পাশের বাসিন্দা নূরুনাহার নামে এক নারী বলেন, ‘গর্ত থেকে লাশ তোলার পর চারদিকে এতো দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে যে কয়েকদিন আমরা ভাত খেতে পারেনি। ওই দিনের বিভীষিকার কথা মনে পড়লে আজও গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।’

 Brahmanbaria3

গঙ্গাসাগর গণকবর যাওয়ার রাস্তা

 

তিনি আরো বলেন, ‘সেদিন শহীদ সাধন মিয়াকে তার স্বজনরা চেনে পরনের চেক লুঙ্গি ও কোমরে চাবির গোছা দেখে। আরেকজন বয়স্ক মানুষকে তার স্বজনরা চেনেন হাতের গলিত আঙ্গুলে তসবিহ দেখে।’

 

২০০১ সালে তৎকালীন উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিনের উদ্যোগে গণকবরের চারদিনে ইটের দেয়াল নির্মাণ করা হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে গণকবরের মাঝেই ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শহীদদের নামের তালিকা। তবে স্বাধীনতার এতো বছর পরও গণকবরে যাওয়ার রাস্তাটি পাকা করা হয়নি।

 

মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তানভীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী শিউলী আক্তার জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন গণকবর দেখতে আসেন। তাছাড়া বড়দের মুখ থেকে ওই দিনের গণহত্যার কথা তারা শুনেছেন।

 

আখাউড়া উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মো. শামছুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গণকবরে যেতে রাস্তাটি মেরামত ও গণকবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/ব্রাহ্মণবাড়িয়া/১২ ডিসেম্বর ২০১৬/সমীর চক্রবর্তী/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়