ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভাষাসৈনিকের সাক্ষাৎকার

ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ আলী খান মৃত্যুশয্যায়

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ আলী খান মৃত্যুশয্যায়

ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ আলী খানের পাশে রাইজিংবিডির ঝালকাঠি প্রতিনিধি অলোক সাহা

অলোক সাহা, ঝালকাঠি : ভাষা আন্দোলনে ঢাকার রাজপথের সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন অসংখ্য ভাষাসংগ্রামী। স্থানীয়ভাবে তারা তৈরি করেছেন জনমত, করেছেন মিছিল-মিটিং আর সংগ্রাম।

 

অনেকেই পুলিশের নির্মম নির্যাতনও সহ্য করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই স্বীকৃতি পাননি আজও। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি গোটা দেশ যখন ভাষার জন্য উত্তাল, তখন সে অন্দোলনের ঢেউ লাগে দখিনের জনপদ ঝালকাঠিতে।

 

এ জেলা শহরের সেসব কৃতী সন্তান তখন ভাষার জন্য রাজপথে লড়াই করেছেন মোহাম্মদ আলী খান এদের মধ্যে অন্যতম। মোহাম্মদ আলী খানসহ সেই সময়ের যেসব সূর্যসন্তানের জন্য আমরা আমাদের মায়ের ভাষা ফিরে পেয়েছি তাদের খোঁজ নিচ্ছে না এই প্রজন্ম। এমনকি নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাদের চেনেন না। তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আজও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই ভাষার মাসে তার ভাষা আন্দোলনে যোগ দেওয়াসহ ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার স্মৃতিকথা তুলে ধরা হলো :

 

এক সময়ের লড়াকু মোহাম্মদ আলী খান এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। ৮০ ছুঁই ছুঁই মোহাম্মদ আলী খান আজ কিছুই বলতে পারছেন না। বিছানায় বসেই তার দিন কাটাতে হয়। ছোট ছেলে সালেক আজাদ সোহাগ তার দেখাশোনা করেন সর্বক্ষণ।

 

ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ আলী খানের পাশে রাইজিংবিডির ঝালকাঠি প্রতিনিধি অলোক সাহা

 

এ সময় বালিকা বিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রীকে ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। তখন ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লাইলি বেগমের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত ছাত্রী এই বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়।

 

এ ছাড়াও আদর্শ ও উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররাসহ প্রায় ৪০০ ছাত্র-ছাত্রীর এ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে স্লোগান দেওয়া হয়। বিক্ষোভ মিছিলের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ঝালকাঠি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে একটি সভা করে। সভায় ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।

 

মায়ের ভাষা রক্ষা করেই ঘরে বসে থাকেননি। এর পরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনে নিজেকে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত করেন মোহাম্মদ আলী খান। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের বশিরহাট ক্যাম্পের অধীনে থুবা সাব-ক্যাম্পের সাব-কমান্ডার ছিলেন। প্রথমে ওখানে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে দেশে এসে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ছিনিয়ে আনেন গৌরবময় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে কীর্তিমান এই ব্যক্তি।

 

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ আলী খান। পরে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রেডক্রিসেন্টের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বর্তমানেও টিআইবির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন।

 

তবে অনেকেই জানেন না এই ভাষাসংগ্রামীর বীরত্বগাথা ইতিহাস। এখন শেষ বয়সে হলেও এই ভাষাসংগ্রামীর নামে জেলা শহরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনার নামকরণ করার দাবি এখানকার সচেতন মহলের।


 

 

রাইজিংবিডি/ঝালকাঠি/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/অলোক/মুশফিক/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়