ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাড়া নয়, সেবার মান উন্নত করা জরুরি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাড়া নয়, সেবার মান উন্নত করা জরুরি

আলী নওশের : রেল হচ্ছে একমাত্র পরিবহণ, যা মোটামুটি নিরাপদ, আরামদায়ক ও ভাড়াসহ নানা দিক দিয়ে অন্য পরিবহণের তুলনায় যাত্রীবান্ধব। এ কারণে রেলে যাতায়াতে সাধারণ মানুষের আকর্ষণ থাকে বেশি। বিশেষত স্থলপথে স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতে প্রধান বাহন এই রেল।

 

কিন্তু লোকসান কমানোর অজুহাতে আবার বাড়ানো হচ্ছে এই গণপরিবহনের ভাড়া। ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে রেলভবনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেল সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন বলেছেন রেলকে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতেই ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারি থেকে এ ভাড়া কার্যকর হবে।

 

রেলপথের সাধারণ যাত্রীদের জন্যে এটি মোটেও সুখবর নয়। লোকসান কমানোর কারণ দেখিয়ে সাড়ে তিন বছর আগেও রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এখন রেল পরিবহণ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রেল মন্ত্রণালয় রেলের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংসদীয় কমিটির মতে, বর্তমানে রেলের যে ভাড়া আছে, তা খুবই কম। বলা হচ্ছে, রেলের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলের বিদ্যমান লোকসান কমানো যাবে। নিশ্চিত করা হবে যাত্রীদের উন্নত সেবাও।

 

বাস্তবতা হচ্ছে, এর আগে রেলের ভাড়া বাড়লেও এতে  লোকসান তো কমেইনি, এমনকি বাড়েনি সেবার মানও। যাত্রীদের অভিযোগ, রেলের সেবার মানে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। কাজেই আরেক দফা ভাড়া বাড়ালে সেবার মান বাড়বে- এমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা।

 

এদিকে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছে যাত্রীদের সংগঠনসহ নানা নাগরিক ফোরাম থেকে। রেলের মতো একটি সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে একবারে ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সাড়ে তিন বছরের মাথায় আবারো ভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডব্লিউবিবি) সম্প্রতি ঢাকায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রেলের যাত্রীভাড়া না বাড়ানোর বিকল্প কিছু উপায় অবলম্বনের কথা বলেছে।  

 

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ভাড়া বাড়ানোর সঙ্গে তুলে দেওয়া হয় ভর্তুকি। ওই সময় এ সিদ্ধান্তের পক্ষে রেলপথ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, লোকসান কমানোর পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি তাদের প্রধান লক্ষ্য। এবারো একই কারণ দেখিয়ে রেলের ভাড়া আরেক দফা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যুক্তি দেখানো হচ্ছে, ২০ বছরে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২০ শতাংশ। রেলের সংশ্লিষ্ট খরচ বেড়েছে ৩৬০ শতাংশ। রেলের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বেড়েছে কয়েক গুণ।

 

এ ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ালে যাত্রীসেবা খাত থেকেই অতিরিক্ত ৩০৫ কোটি টাকা এবং মালামাল পরিবহণ খাত থেকে আসবে আরো ১৫৬ কোটি টাকা। ফলে লোকসান কমবে ৪৬১ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১২ সালের ৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি প্রত্যাহারের পর লোকসান কতটুকু কমেছে, তার কোনো হিসাব উপস্থাপন করেনি কর্তৃপক্ষ।

 

অবশ্য, দীর্ঘকাল অবহেলায় থাকার পর রেলের কার্যক্রমে গতি আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় করা হয়েছে রেলকে গুরুত্ব দিয়ে । রেলের সম্প্রসারণে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। তাই রেলের উন্নয়নের চিন্তা করে সাড়ে তিন বছর আগে একবারে ভাড়াবৃদ্ধি হলেও যাত্রীরা তা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু রেলে যাত্রী সেবার মানের তেমন উন্নতি ঘটেনি। ফলে আবার ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

রেলের উন্নয়ন অবশ্যই দরকার। এর জন্য অর্থও দরকার। তবে ভাড়া বাড়ানো নয়, আয় বৃদ্ধির বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সুতরাং ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের ওপর চাপ সৃষ্টি নয়, বরং আগে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

 

রেলের লোকসানের প্রধান কারণ অদক্ষতা, অপচয়, দুর্নীতিসহ সার্বিক অব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনা উন্নত করে ও সেবার মান বাড়িয়ে লোকসান কমানো শুধু নয়, রেলকে লাভজনক করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ভাড়া বাড়িয়ে রেলের বিপুল পরিমাণ লোকসান কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। লোকসান কমানোর অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে রেলের ভূমির বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধি, ইজারামূল্য বৃদ্ধি, ট্রেনে উন্নত মানের বগি সংযোজনের মতো কিছু পদক্ষেপ নিলে রেলপথ কর্তৃপক্ষের আয় বাড়তে পারে।

 

রেলের বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে, প্রচুর অর্থ পাওনা আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। সম্পত্তি উদ্ধার ও পাওনা টাকা আদায়, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, পণ্য পরিবহণ বাড়ানোর উদ্যোগ এবং পরিচালনব্যবস্থা যুগোপযোগী করা হলে রেলওয়ের পক্ষে স্বনির্ভর হয়ে ওঠা সম্ভব। পণ্য পরিবহণ বৃদ্ধি করা গেলে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় হবে রেলপথ কর্তৃপক্ষের।

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৬/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়