ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভূতুরে শহরে একা ৪০ বছর!

ফাতিমা রুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভূতুরে শহরে একা ৪০ বছর!

ফাতিমা রুনা : গত চার দশক (প্রায় ৪০ বছর) ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যের জনহীন গোথিক অঞ্চলে সম্পূর্ণ একা বসবাস করে আসছেন বিলিবার নামক এক ব্যক্তি। সেখানে থেকে তিনি আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রাকৃতিক পরিবর্তনের পুংখানুপুঙ্খ তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ করে আসছেন ব্যক্তিগত শখ হিসেবে।

১৯২০ সাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বিলিবার নিয়মিত ওই এলাকার তুষারপাত, তাপমাত্রা, বরফ গলে যাবার মাত্রা ও স্থানীয় প্রাণী সহ সকল ধরনের ডাটা নোট করে আসছেন। তিনি কখনো ভাবেননি যে, তার এই শখের হিসেব বিজ্ঞানীদের জন্যে এক অসাধারণ নিখুঁত তথ্য ভাণ্ডারে রূপান্তরিত হবে যা বৈশ্বিক উষ্ণতা ও ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনের গবেষণায় কাজে আসবে। ফলাফলস্বরূপ তিনি এখন ‘দ্যা স্নো গার্ডিয়ান’ (তুষার অভিভাবক) উপাধিতে ভূষিত।

আমেরিকার নিউজার্সিতে বেড়ে ওঠা, বিলিবার গোথিক এলাকায় প্রথম আসেন ১৯৭২ সালে রুটজারস ইউনিভার্সিটিতে পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে। কোলাহল পূর্ণ জীবন কখনোই তাকে টানেনি। পরবর্তীতে নিরিবিলি জীবন খুঁজতে গিয়ে তিনি তার পড়াশুনার পাঠ গুছিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে চলে আসেন জনমানবহীন এই ভূতুরে শহরে।

১৯৭৪ সালে বিলিবার পূর্ণমাত্রায় তার শীতকালীন ক্যাম্পিং শুরু করেন ওই এলাকার এক ক্ষুদ্র তাবুতে কিন্তু সেখানে বছরে ২৫ ফুটের ওপরে তুষারপাত হয়, ওই বছর যা ওই এলাকার জন্য মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। ভাগ্যক্রমে বিলিবার সেখানে তখন এক পরিত্যাক্ত খনি খুঁজে পান এবং প্রাণে বেঁচে যান ভয়াভহ শীতের হাত থেকে। ওই খনিতেই তিনি পরবর্তী আট বছর এক নাগাড়ে সেখানেই কাটিয়ে দেন এবং শুরু করেন তার তুষারপাতের ডাটা সংগ্রহের কাজ।

বিলিবার বলেন, ‘আমার আসলে কিছু করার ছিলনা ওই সময়টাতে। শুধুমাত্র কৌতূহলের বসেই তথ্য সংগ্রহ শুরু করি’।

খনির আশ্রয় ছেড়ে তুষার অভিভাবক তার স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যান বটে কিন্তু তার অপেশাদার গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি তুষার ডাটা সংগ্রহ করতে থাকেন একান্তই নিজস্ব পদ্ধতিতে। দাগ দেয়া খুটি এবং স্নো বোর্ড বরফে পুঁতে তিনি তথ্য নিতেন যা পরিষ্কার করতে তার কখনো কখনো দুই দিন সময় ব্যয় হয়ে যেত।

৬৫ বছর বয়সী বিলিবারের নিখুঁত হিসেব করা এভালেঞ্জ বা পর্বত থেকে ধেয়ে আসা  তুষার ঝড়ের বর্ণনা ও তথ্য, বর্তমানে গবেষকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে গণ্য। বৈশ্বিক তাপমাত্রার প্রভাব সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় বিলিবারের এই গত ৪০ বছরের নোট থেকে।

এই নিরলস প্রচেষ্টাকে কোনো গোপন এজেন্ডা বলার সুযোগ নেই কারণ তিনি তার এই প্রজেক্ট শুরু করেছিলেন এতটাই আগে যে সাধারণ মানুষ বৈশ্বিক উষ্ণতা বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে তেমন জানতোই না।

নিজ জীবনধারন পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে বিলিবার বলেন, ‘অনেকরই হয়তো ধারণা যে আরামদায়ক চেয়ারে নিজ কক্ষে বসে, বই পড়তে পড়তে কিংবা জানালার বাইরে তুষার পড়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে এতগুলো বছর ধরের এই তথ্য লিখেছি। আসলে তা নয়। বাস্তবতা হল, এটা অনেক বিরক্তির একটা কাজ কিন্তু আমি এটা করতে ভালোবাসি।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়