ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভূমিকম্প-ঝুঁকি ও আমাদের করণীয়

রফিক মুয়াজ্জিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভূমিকম্প-ঝুঁকি ও আমাদের করণীয়

রফিক মুয়াজ্জিন : এখনো প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি মানুষ। আমরা কতটা অসহায় সেটা ভালোভাবে বোঝা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। তখন নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। গত শনিবার উপমহাদেশের দেশগুলোতে আঘাত হানা ভূমিকম্প যেন এ বিষয়টি আরো ভালোভাবে মনে করিয়ে দিল।

 

ভূমিকম্প, সুনামি, অগ্নুৎপাত, বন্যা প্রভৃতি দুর্যোগ হয়তো ঠেকানো যাবে না, তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি ও সম্পদহানি কমানো যায়। এজন্য নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদিএবং স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি।

 

ভাগ্য ভালো যে, ভূমিকম্প যে মাত্রায় নেপালে আঘাত হেনেছে, তত বেশি মাত্রায় বাংলাদেশে আঘাত হানেনি। নেপালের মতো বাংলাদেশেও যদি ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতো, তাহলে বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসত। বিশেষ করে ঢাকা শহর পরিণত হতো ধ্বংসস্তূপে। নেপালে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মারা গেছেন ২০ জনেরও বেশি মানুষ। এ ছাড়া, চীনে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, রিখটার স্কেল অনুযায়ী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলে এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯। তীব্রতা অনুযায়ী এটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। এটির গভীরতা ছিল ১৫ কিলোমিটার। নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে ৮১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল।

 

ভূকম্পন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব ৪৭৫ কিলোমিটার হওয়ায় এখানে মাত্রা কম ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম বলেন, দূরত্বের কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দেশে ৩ থেকে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক কম। তার পরও ভূমিকম্পে রাজধানীর মিরপুরে ডায়মন্ড গার্মেন্টস নামের একটি পোশাক কারখানা ও বংশালে ছয়তলা একটি ভবন কিছুটা হেলে পড়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে শাহ আলম টাওয়ার নামের একটি ১০তলা বাণিজ্যিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ভূমিকম্পে ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনার পাড় এলাকায় অলকা নদী বংলা নামের একটি বহুতল ভবন সামান্য হেলে পড়েছে। এতে একটি বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় ভালুকা উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আতঙ্কে মহাসড়কে নেমে আসেন। নওগাঁর শহরের গোস্তহাটির মোড় এলাকায় দুটি তিনতলা ভবন হেলে পড়ে। 

 

বাংলাদেশ এ যাত্রায় রক্ষা পেলেও ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা। জাতিসংঘের হিসাব অনুয়ায়ী, পৃথিবীতে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দুটি শহরের মধ্যে একটি ঢাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ভূ-অভ্যন্তরে ভূচ্যুতির কারণে যেকোনো সময় আঘাত আনতে পারে উচু মাত্রার ভূমিকম্প। ভারত ও মিয়ানমার একই ঝুঁকিতে আছে। ফলে ওই দুই দেশের ভূমিকম্পেও বিপদের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

 

গত দুই দশক ধরেই বাংলাদেশে ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। এ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানোর উপায় না থাকলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে। তবে সে পথে নেই বাংলাদেশ।

 

অপরিকল্পিত নগরায়ন, ভবন নির্মাণ, জলাশয় ভরাট প্রভৃতি কর্মকাণ্ড ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলছে। যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। আইন রয়েছে শুধু কাগজে। এসব কারণে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরো নগর  ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

 

রাজউকের এক হিসাবে বলা হয়েছে, ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ির সংখ্যা ৩২১টি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাবে ৫৮৫টি। স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পেই এসব ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ভূ-অভ্যন্তরে তিনটি বড় ধরনের ভূচ্যুতি রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণা অনুযায়ী, এই ভূচ্যুতির কারণে বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১ শতাংশ এলাকা মধ্যম (জোন-২) এবং ১৬ শতাংশ এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে। জোন-১-এ রয়েছে সিলেট, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ কয়েকটি জেলা। জোন-২-এ পড়েছে রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় তিন শহর। খুলনা ও বরিশালের অবস্থান জোন-৩ এ।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর চ্যুতি, সিলেটের ডাওকি চ্যুতি, সীতাকুণ্ড-টেকনাফ চ্যুতি এবং উত্তর আন্দামান-টেকনাফ সাবডাকশন জোন সক্রিয় হওয়ায় ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

 

সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় রাতের বেলায় ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৯০ হাজার মানুষ হতাহত হবেন। দিনের বেলায় হতাহত হবেন ৭০ হাজার। ঢাকা মহানগরে তিন লাখ ২৬ হাজার ভবনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এর ৭২ হাজার সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে।

 

ঢাকা মহানগরীর ৬৫ শতাংশ ভবন জলাশয় ভরাট করে বালুমাটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে, যা মাত্র ৬ মাত্রার ভূমিকম্পও সহনীয় নয়। রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিমে জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠা ভবনগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশের ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারত, তা কল্পনাও করা যাবে না। শুধু ঢাকায় ভূমিকম্পে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হবে। সারা দেশে ক্ষতির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। মহাখালী ফ্লাইওভার ছাড়া আর কোনো ফ্লাইওভারই ভূমিকম্প সহনীয় নয়।

 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী জানান, বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোতে এখন হালকা ইমারত নির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা না রেখেই বড় বড় ইমারত করা হচ্ছে। ভূমিকম্প হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

 

আসামে সর্বশেষ ১৯৫০ সালে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। দেশের ভেতরে ডাউকি ফাটলের কারণে ১৮৯৭ সালে ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে ভারত ও বাংলাদেশের এক হাজার ৫৪২ জন নিহত হন। এর মধ্যে ঢাকার ১০ জনসহ বাংলাদেশের মোট ৫৪২ জন ছিলেন। এর আগে ১৮৬৯ সালে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এবং ১৮৮৫ সালে মধুপুর-বগুড়া ভূচ্যুতিতে ৭ মাত্রার ও ১৯৩০ সালে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্পেই যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়।

 

সাধারণত ১১০ থেকে ১৩০ বছর পর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটে। ভূকম্পনের জন্য শক্তি সঞ্চার করতে ভূ-অভ্যন্তরে সাধারণত এ সময় লাগে। বাংলাদেশে তিনটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে শত বছর আগে।

 

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ ফিল কামিনস সম্প্রতি ন্যাচার জার্নালে লিখেছেন, যেকোনো সময় বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে, যার উৎপত্তিস্থল হবে বঙ্গোপসাগর। এতে তিন দেশে ১০ লাখ মানুষ হতাহত হতে পারেন। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের বুলেটিনে জানানো হয়, ইরানের রাজধানী তেহরান ও ঢাকা সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা শহর।

 

কাকতালীয়ভাবে ২৫ এপ্রিল ঘটছে একের পর এক ভূমিকম্প। ১৯৫৭ সালের ২৫ এপ্রিল তুরস্কে ৭ দশমিক ১ মাত্রার, ১৯৬৬ সালে উজবেকিস্তানে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার, ১৯৮৯ সালে মেক্সিকোতে ৭ দশমিক ১ মাত্রার, ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ৭ দশমিক ২ মাত্রার এবং সর্বশেষ গত শনিবার নেপালে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প।

 

এ তো গেল বিপর্পয় আর আশঙ্কার বিবরণ। এবার আসি প্রতিকার বা প্রতিরোধের বিষয়ে। বাংলাদেশে যেহেতু বেশিরভাগই সমতল এলাকা। তাই এখানে পাহাড়ি এলাকার মতো ভূমিধসের আশঙ্কা নেই। এখানে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার নাম ভবনধস। বিশেষ করে ঢাকার মতো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শহরে ভূমিকম্প একটা আতঙ্কের নাম। এ শহরের অনেক ভবনই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নির্মাণ করা হয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর কারণে অনেক ভবন যথেষ্ট ভূমিকম্প সহনীয় নয়। শহরের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জলাশয় শুধু বালু দিয়ে ভরাট করে তার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। এসব ভবনের ভিত্তি শক্ত না হওয়ায় সেগুলো মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

ভূমিকম্পের মতো বিপর্য়য় এড়াতে নিয়মনীতি মেনে ভবন বানানো উচিৎ। ঢাকা অন্যতম ভূমিকম্প-ঝুঁকির শহর হওয়ায় এখানে ভবন নির্মাণে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। খরচ বাঁচাতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ না করে, জীবন বাঁচাতে মানসম্পন্ন সামগ্রী ব্যবহার করা উচিৎ। জলাশয় ভরাট করে ভবন বানাতে হলে শুধু বালু দিয়ে নয়, শক্ত মাটিও ব্যবহার করতে হবে। ভবনের উচ্চতা অনুয়ায়ী এর ভিত্তি শক্ত করা প্রয়োজন।

 

এসবের পরও ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পকালে এবং ভূমিকম্পের পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রসের গাইডলাইন অনুসরণ করা যেতে পারে।

 

ভূমিকম্পের আগে করণীয়
১. বাড়ি বা কর্মক্ষেত্রের ভেতরে ও বাইরে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করুন, যেন ভূমিকম্পের সময় ভাবতে না হয় কোথায় আশ্রয় নেবেন। সে স্থানের আশপাশে যেন উঁচু কোনো ফার্নিচার বা গায়ে পড়ার মতো জিনিস না থাকে। ২. অন্ধকারে দেখার জন্য হাতের কাছে টর্চ রাখুন। ৩. ভূমিকম্পে গড়িয়ে পড়ার মতো আলগা জিনিস সব সময় বন্ধ শেলফে রাখা উচিত। শেলফগুলো ভালোভাবে দেয়ালের সঙ্গে আটকে রাখুন যেন এগুলো পড়ে না যায়। ভারী মালপত্র শেলফের নিচের দিকে রাখুন। ঝাঁকুনিতে যেন এগুলো গায়ের ওপর না পড়ে। ৪. দেয়ালে ঝোলানো ছবি, আয়না ইত্যাদি বিছানা থেকে দূরে রাখুন। ৫. গ্যাস ও বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি নিরাপদ রাখুন। লিক হওয়া গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে নিন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন। এগুলোর চাবি কোথায় আছে এবং কীভাবে বন্ধ করতে হয় তা শিখে নিন। ৬. মাঝে মাঝে ভূমিকম্প ও জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মহড়া দিন, যাতে সবাই আয়ত্ত করতে পারে। ৭. শুকনো খাবার ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুন।

 

ভূমিকম্পের সময় বাড়ির ভেতর থাকলে
১. ড্রপ, কাভার ও হোল্ড অন পদ্ধতিতে মেঝেতে বসে পড়ুন, কোনো মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং কিছুক্ষণ বসে থাকুন। হেলমেট পরে বা হাত দিয়ে ঢেকে মাথাকে আঘাত থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করুন। ২. বিছানায় থাকলে মাথা বাঁচাতে বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতরের দিকের দেয়ালের কাছে বসে আশ্রয় নিতে পারেন। ৩. বাড়ির বাইরের দিকের দেয়াল বা কাচের জানালা বিপজ্জনক। এগুলো থেকে দূরে থাকুন। ৪. বহুতল ভবনের ওপরের দিকে অবস্থান করলে ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকাই ভালো। ৫. ভূকম্পন থেমে গেলে বের হয়ে আসুন। ৬. নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন।

 

বাড়ির বাইরে থাকলে
১. খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতল ভবনের প্রান্তভাগের নিচে বা পাহাড়-পর্বতের নিচে কোনোভাবেই দাঁড়াবেন না। ওপর থেকে খণ্ড পড়ে আহত হতে পারেন। ২. লাইটপোস্ট, বিল্ডিং, ভারী গাছ অথবা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে দাঁড়াবেন না। ৩. রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না। মাথার ওপর কাচের টুকরো, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ৪. চলমান গাড়িতে থাকলে গাড়ি থামিয়ে খোলা জায়গায় পার্ক করে গাড়ির ভেতরেই আশ্রয় নিন। ৫. কখনোই ব্রিজ, ফ্লাইওভারে থামবেন না। বহুতল ভবন কিংবা বিপজ্জনক স্থাপনা থেকে দূরে গাড়ি থামান।

 

ভূমিকম্পের পরে
১. ভূমিকম্প শেষ হলেও আরো কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। প্রায়ই পরপর কয়েকবার কম্পন হয়। ২. কম্পন থেমে গেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর বের হোন। ওপর থেকে ঝুলন্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষণ পরও পড়তে পারে। ৩. নিজে আহত কি না পরীক্ষা করুন, অন্যকে সাহায্য করুন। বাড়িঘরের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করুন। নিরাপদ না হলে সবাইকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যান। ৪. গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন। ৫. কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন সুইচ বা ফিউজ বন্ধ করে দিন। ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। ৬. উদ্ধারকাজের জন্য নামতে হলে হেলমেট, হাতমোজা, জুতা, ফুলপ্যান্ট, ফুলহাতা শার্ট এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ নামুন যেন আপনার কোনো আঘাত না লাগে। ৭. ব্যাটারিচালিত রেডিও রাখুন যেন প্রয়োজনীয় খবর শোনা যায়। ৮. আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখুন। ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর রাখুন।

 

ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে
১. আগুন জ্বালাবেন না। বাড়িতে গ্যাসের লাইন লিক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ২. ধুলাবালির মধ্যে পড়লে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিন। ৩. ধীরে নড়াচড়া করুন। বাঁচার আশা ত্যাগ করবেন না। উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকুন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৫/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়