ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভ্যাট বৈষম্য হ্রাসে সুপারস্টোর মালিকদের দৌড়ঝাঁপ

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৬, ২৫ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভ্যাট বৈষম্য হ্রাসে সুপারস্টোর মালিকদের দৌড়ঝাঁপ

এম এ রহমান : বৈষম্য দূর করে সমহারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আরোপের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনাও অব্যাহত রেখেছেন সুপারস্টোর মালিকরা।

 

ভ্যাট নীতিমালায় বৈষম্য দূরীকরণ ও অব্যাহত হয়রানি বন্ধ করতে বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কাছে দাবি জানিয়েছে।

 

মঙ্গলবার এনবিআরের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা এ দাবি জানিয়েছেন। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

 

এর আগে নীতিমালায় বৈষম্য ও অব্যাহত হয়রানির প্রতিবাদে গত ১৫ এপ্রিল সারা দেশে আগোরা, মীনাবাজার, স্বপ্ন, প্রিন্স বাজার, ক্যারি ফ্যামিলি, শপ অ্যান্ড সেফ, আলমাস, আমানাসহ সব ধরনের সুপারমার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংগঠনটি।

 

এবার এনবিআরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক আলোচনা সভায় সংগঠনটির নেতারা জেনারেল স্টোরের মতো অভিন্ন ভ্যাট রেটের দাবি জানালেন।

 

বর্তমানে সুপারস্টোরগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে ৪ শতাংশ ভ্যাট আদায় করছে। যেখানে জেনারেল স্টোরগুলো প্যাকেজ ভ্যাট প্রদান করে থাকে। তাই অসম প্রতিযোগিতা দূরে তাদেরও প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

 

এ বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘সুপারস্টোরে আসা ক্রেতারা ৪ শতাংশ ভ্যাট প্রদানে অনীহা দেখান। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কেননা, একই ধরনের ব্যবসায় অন্যরা প্যাকেজ ভ্যাট সুবিধা ভোগ করে আসছে।’

 

তিনি বলেন, ‘তাই সরকার হয় সুপারস্টোরগুলোতে প্রযোজ্য ৪ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করুক, না হয় আমাদের প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় আনুক। এনবিআরকে আমরা সেই দাবিই জানিয়েছি।’

 

সুপারস্টোর মালিক সমিতি আরো জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সুপারমার্কেটগুলো খাদ্য ও পণ্যের আধুনিকতম সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য কাজ করে আসছে। বর্তমানে সুপার চেইনের দোকানের সংখ্যার দিক থেকে এশিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দুটি সুপারমার্কেট চেইনের দোকানের সংখ্যাই ১৪ হাজার। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন শ্রীলঙ্কায় এ শিল্প অল্প সময়েই অনেক দূর এগিয়েছে। ভারতে সুপারমার্কেটের মোট সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার,  শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১ হাজার। নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে এই শিল্পের ভূমিকা অনুধাবন করে এইসব দেশের সরকার এই শিল্পকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ১৩০টি সুপারশপ রয়েছে।

 

এ ছাড়া সুপারস্টোরগুলোতে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভাড়ার ওপর ভ্যাট কমানোসহ সংগঠনটি হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন।

 

এনবিআরকে দেওয়া সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো হলো :

 

সমহারে ভ্যাট প্রয়োগ : একই রকম ব্যবসা পরিচালনা করেও জেনারেল স্টোর যেখানে প্যাকেজ ভ্যাট প্রদান করে, সেখানে সুপারস্টোরগুলো ক্রেতাদের নিকট থেকে ৪ শতাংশ ভ্যাট আদায় করছে। ফলে শুরুতেই অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে সুপারস্টোরগুলো। এ অবস্থার নিরসনকল্পে প্যাকেজ ভ্যাট চায় সংগঠনটি।

 

আমদানীকৃত যন্ত্রপাতির ওপর কর : সুপারমার্কেটে বিভিন্ন খাদ্য এবং মনোহারি দ্রব্যাদি নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এইসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আমাদের উচ্চ কর প্রদান করতে হয়, যার ফলে নতুন দোকান খোলা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় আমাদের ব্যবসার কাঙ্ক্ষিত প্রসার ঘটছে না।

 

ভাড়ার ওপর ভ্যাট : বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশে উচ্চ হারে ভাড়া প্রদান করে দোকান খুলতে হয়। তার ওপর ৯ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান আমাদের জন্য অসহনীয়। এই ভ্যাট তুলে দিয়ে আরো অধিক দোকান খোলার সুযোগ চায় সংগঠনটি।

 

বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান সংগঠনগুলোর দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন। আলোচনা সভায় সংগঠনটির সভাপতি নিয়াজ রহিম, সহসভাপতি কাজী ইনাম আহমেদসহ এনবিআরের ভ্যাট ও আয়করের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৬/এম এ রহমান/ইভা/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়