ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মণিপুরিদের বর্ণিল বিষু উৎসব || শুভাশিস সিনহা

শুভাশিস সিনহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১২ এপ্রিল ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মণিপুরিদের বর্ণিল বিষু উৎসব || শুভাশিস সিনহা

অলংকরণ অপূর্ব খন্দকার

সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের ব্যাপকতার মধ্য দিয়ে মণিপুরিরা জাতিগত অস্তিত্বকে বৃহৎ পরিসরে জানান দিয়ে রেখেছে এই দুনিয়ায়। ভাষার দিক দিয়ে মণিপুরিরা দুই ভাগে অন্তর্বিভক্ত, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ও মেইতেই মণিপুরি। ভাষার আমূল ভিন্নতা সত্ত্বেও তাদের রয়েছে প্রায় একই সংস্কৃতির উত্তরাধিকার; সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিসরে তাই তারা একই জাতিসত্তার পরিচয়বাহী। সেখানে পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মানুসারী ‘পাঙাল’রাও অন্তর্ভুক্ত, যারা মুসলিম মণিপুরি নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে পাঁচ দিনব্যাপী উদযাপন করে বিষু উৎসব। ‘বিষু’ শব্দটি কোত্থেকে কীভাবে এল, তার সুরাহা এখনও হয়নি। সংস্কৃতে বিষু শব্দের কাছাকাছি অর্থ সমতা বা সমান। জ্যোতির্বিজ্ঞান বলে, সূর্য নাকি সেদিন বিষুবরেখার মাঝখানে থাকে। দিন আর রাতের দৈর্ঘ্য তাই সমান। কিন্তু যে উৎসবটি একেবারে গ্রামীণ মানুষের লোকজীবনের ভেতর থেকে উৎসারিত, তার কপালের তিলকটা জ্যোতির্বিজ্ঞানের পুস্তকি ভাষা নেবে কী করে সেটা প্রশ্ন।

 

ভারতবর্ষে এই উৎসবের সমান বা কাছাকাছি ধরণের অসংখ্য উৎসব রয়েছে। আসামে প্রচলিত রয়েছে ‘বিহু’ উৎসব। বিহু শব্দটা সেখানকার ডিমাসা জাতির ভেতর থেকেই এসেছে বলে ধারণা করা হয়। বোহোগ বিহু নামের একটি লোকনৃত্য বেশ জনপ্রিয় অসমীয়াদের মধ্যে। কিন্তু মনে করা হয় ‘বিহু’ শব্দটি ‘বিষু’ শব্দেরই অপভ্রংশ, যেখানে বি শব্দের অর্থ চাওয়া বা কামনা করা, আর ষু শব্দের অর্থ শান্তি-সমৃদ্ধি। সকলের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় যে উৎসব হয়ে থাকে। আবার ‘কলাগুরু’ বিষ্ণুপ্রসাদ সিংহের মতে বি মানে কিছু চাওয়া বা প্রার্থনা করা এবং ষু মানে কিছু দেওয়া। অর্থাৎ পরস্পরের আদানপ্রদানের উৎসব। মণিপুরিদের বিষু উৎসবের চরিত্রের সঙ্গে শব্দটির সেই উৎপত্তিগত অর্থের একটা সাযুজ্য আছে। বলা হয়েছে এই উৎসব নাকি ইন্দো-আর্য, অস্ট্রো-এশীয়, সিনো-বর্মীদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা ইন্দো-আর্য পরিবারভুক্ত। মণিপুরিদের সঙ্গে অসমীয়া জনগণের একটা সংস্কৃতিগত আত্মীয়তার কথাও ভাবা যেতে পারে। আবার ভারতের কেরালাতেও বিষু নামের উৎসব উদযাপনের হদিস পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এটি পালন করে থাকে। মালয়ালম ক্যালেন্ডার কলাবর্ষম অনুযায়ী এ দিন নববর্ষ শুরু হয়। বিষু বিষয়ক অমীমাংসিত প্রশ্নমালার সুতো ছিঁড়ে আমরা এখন এর উদযাপনের দিকে নজর দেই।

 

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের বিষু উৎসব বাংলা বর্ষপঞ্জির দিনক্ষণ অনুযায়ী হয়ে থাকলেও এর কৃত্য-আচারের পুরোটাই তাদের নিজস্ব লৌকিক উপাদানে ভরপুর। মণিপুরিদের বিশ্বাস তাদের প্রতিটি লামে (এলাকায়) এক একজন নির্দিষ্ট দৌ (দেবতা) থাকেন, যাঁর সেবা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ইহজগতে তাদের মঙ্গল আসবে। সেই দেবতাকে বলা হয় ‘লামর দৌ’। বিষুর দিন এই লামর দৌ’য়ের তুষ্টির জন্য বিশেষ কৃত্য পালন করা হয়। বাড়ির পিছনে কোনো নিভৃত জায়গায় গিয়ে লামর দৌয়ের প্রতি নিবেদিত গান-নৃত্য পরিবেশনের রীতি কিছুকাল আগে পর্যন্ত চল থাকলেও এখন তা তেমন দেখা যায় না। এই লামর দৌ বা সোজা বাংলায় গ্রামদেবতা তিনি-ই, যিনি ওই গ্রামে প্রথম দেহত্যাগ করেছিলেন। মারা যাওয়াকে মণিপুরিরা ‘দৌ অনা’ বলে অভিহিত করে, অর্থাৎ আত্মা মনুষ্যদেহ ছেড়ে দেহহীন ‘দেবতা’য় পরিণত হয়। এ উৎসবের আরেকটি প্রচলিত মতে প্রকাশ পায় সংস্কারের ভেতরকার লৈঙ্গিক সমতাও।  বলা হয়, লামর দৌ হবেন সেই এলাকায় মারা যাওয়া প্রথম পুরুষ ও নারী। যেমন ঘোড়ামারা গ্রামের লামর দৌ হচ্ছেন বলাই আর থানু নামের দুই পুরুষ ও নারী। বিষুর দিন নিবেদিত ভোগ-প্রসাদে সে-গ্রামে তাঁরাই পূজিত হন। সেভাবে প্রতিটি গ্রামে আলাদা আলাদা লামর দৌ’য়ের পূজা চলে এদিন। এই পূজা কোনো যজ্ঞ বা শ্লোকাচারে হয় না। হয় সাধারণ ভক্তি আর ভোগ নিবেদনে। মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে ভক্তির ধরণে বৈষ্ণবীয় ভাব, আবার কলার পাতায় প্রসাদ নিবেদনের ধরণে মণিপুরির আদি প্রাকৃত রূপ। 

 

বিষুর দিন মণিপুরিরা ভোর থেকে উঠে গোবর-মাটি-পানি মিশিয়ে ঘর-দোর লেপা মোছা শুরু করে। ‘বৎসরের আবর্জনা’ যেন ধুয়ে মুছে সাফ যায়। তারপরই বাড়ির মেয়েরা লেগে যায় রান্নাবাড়ার কাজে। সহজিয়া বৈষ্ণব ধর্মানুসারী মণিপুরিদের পর্ব-পার্বণে (প্রাকৃত ধর্মের কিছু পর্ব বাদে) কেবল নিরামিষ ভোজনের নিয়ম। কত শত পদ। ডাল, সাকলখই, ঙৌথং, ইরলপা, তিঁতা ভাজা এসব তো আছেই, সঙ্গে থাকে বিরন বা বিন্নিচালের ভাত, যা খাওয়া হবে কলা-দুধ-চিনি মিশিয়ে। পরিবারের কর্তাটি খুব সকালবেলা স্নান সেরে অন্যান্য কৃত্য শেষ করে কলার পাতায় সাজানো ‘দৌর এইরুক’ বা দেবতার ভোগ নিবেদন করেন বাড়ির আরাঙে। (মণিপুরিদের বাড়ির সামনে বাঁশ দিয়ে বানানো বিশেষ ধরণের স্থায়ী গেটকে আরাঙ বলা হয়ে থাকে। আরাঙ একদিকে যেমন রাস্তা থেকে বাড়ির সীমানা নির্ধারণ করে, তেমনি তা নিরাপত্তার ধারণাকেও নির্দেশ করে।) পূর্বপুরুষের বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনা করে প্রসাদ নিবেদনের আর্তিতে জড়িয়ে থাকে নিজের পরিজনদের আগামী বছরটির শুভকামনাও।

 

দেবতার উদ্দেশ্যে প্রসাদ নিবেদনের পর শুরু হয় রান্নার তরকারি বা নিরামিষ পদগুলোর মানবিক আদানপ্রদানের পালা। আজ বিষু, আজ যেমন রাত আর দিনের দৈর্ঘ্য সমান, যেমন শেষ আর শুরুতে সন্ধি ঘটবে, তেমনি আজ মানুষও যেন সবাই সমান সমান। আজ কেউ কারও পর নয়, কেউ কারও শত্রু নয়। গ্রামের এ-মাথা ও-মাথা চলবে খাবার আনা-নেওয়া। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে কুপাঙ (বড় থালাবিশেষ)-এ করে নানান পদের খাবার নিয়ে এ-বাড়ি ও-বাড়ি বিতরণ করে। এক একটা বাড়ির পাকঘরে জমা হয় অজস্র পদের তরকারি। ছেলেদের পরনে থাকে দ্বিরঙা পাছাতি, কখনো সাদা-কালো, কখনো সাদা-সবুজ, কখনো বা সাদা-লাল ডোরাকাটা। তবে সাদা রঙটি থাকবেই, তা যে সত্য ও শুভ্রতার প্রতীক। মেয়েদের পরনে নিচের ভাগে থাকে লাহিং নামের পরিধেয় বস্ত্রবিশেষ, হলুদ, লাল, নীল নানান রঙের। উপরের অংশে ব্লাউজ আর ছোট-বড় ইনাফি বা ওড়না। মণিপুরিদের জাতিতাত্ত্বিক মোটিফ ‘মোইরাঙ’ খচিত ও নানান কারুকার্য-আঁকা।

 

সন্ধ্যায় লাগবে পিঠা ভাজার ধুম। এই পিঠা আলাদাভাবে ‘বিষুর পিঠা’ নামে পরিচিত। বিশেষভাবে তৈরি করতে হয়। ‘বিরন’ বা বিন্নি চালের সাথে দুধ-কলা-গুড় মিশিয়ে তৈরি করতে হয় পিঠার মূল উপাদান। নানান আকারের পিঠা বানানো হয়। গোল, চ্যাপ্টা, চৌকাণা নানা রকম। পিঠাগুলো কড়াই থেকে তোলার জন্য থাকে সরু কাঠি, কাঠির এক ভাগ সুইয়ের মতো ছুঁচালো। বিষুর পিঠা চাবাতে গেলে মনে হবে অনেকটা চুইংগামের মতো। খানিক বেশি সময় ধরে চাবাতে হয়। কিন্তু যত চাবানো ততই স্বাদ। পিঠা যখন বাসি হয়ে যায়, তখন এর স্বাদ বেড়ে যায় আরও! যদিও তখন দাঁতের শক্তির ওপর নির্ভর করে তার পেষণানন্দের ব্যাপারটা। পিঠা তৈরির পর প্রথম পিঠাভোগ নিবেদন করা হয় বাড়ি সংলগ্ন তুলসীগাছের তলায়। এরপর ঘরে ঘরে পিঠা বিলানোর পালা। পিঠার গন্ধে মৌ মৌ করে পাড়াগুলো। বউ-কথা-কও পাখির চার মাত্রার ডাকের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে মণিপুরিদের ছেলেভুলানো ছড়ার লাইন-‘বিষুর পিঠা বাঘগই খেইল’ (বিষুর পিঠা বাঘে খে’ল)। হয়তো সেই ছড়ার বাঘ বিশ্বায়নের গ্রাসে একদিন সত্যি সত্যি মণিপুরি শিশুদের প্রিয় বিষুর পিঠাকে গ্রাস করে নিতে চাইবে, তারই প্রতীকে মুখে মুখে ছড়ায় কথাটি।

যা হোক, বিষুর দিন রাতে থাকে নিকন খেলা (পাশাখেলা)। কাপড়ের বানানো বোর্ড। গুটিগুলোও বেশ কারুকাজ করা। নিকন খেলার সিংনা বা পাশাখেলার প্রতিযোগিতা চলে রাতভর। খেলায় নারী-পুরুষ ছোট-বড় সবাই অংশ নেয়। খেলার সঙ্গে কত মজা-মস্করা হাসি-আনন্দ। পাঁচ দিন ধরে চলে এই বিষুর পিঠা খাওয়া আর নিকন খেলার পর্ব। আগে বিষুর সময় নানান রকমের গ্রামীণ খেলাধুলা হতো। মণিপুরিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল ‘গিল্লা খেলা’। গিল্লা নামের এক বিশেষ পাহাড়ি গাছের বিচি দিয়ে তৈরি গিল্লাখেলার চাকতিটি। কখনো দুপায়ের পাতায়, কখনো দুই হাঁটুর চাপে, কখনো-বা চোখের উপরে গিল্লাটিকে রেখে মাটিতে পেতে রাখা আরেকটি গিল্লায় গিয়ে সেটি ঠোকানোর মধ্য দিয়ে খেলাটি এগিয়ে যায়। এখন সেই পাহাড়-জঙ্গল থেকে গিল্লা সংগ্রহের সময়ও নেই, তাই খেলাটিও বিলুপ্তপ্রায়।

 

এ-তো গেল বিষু উৎসবের ঐতিহ্যগত সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের কথা। কিন্তু গত প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশে উৎসবটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে এর সমকালীন সাংস্কৃতিক তাড়ণায় আয়োজিত একটি অন্যরকম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। একে কেন্দ্র করে বিশ্বাস-সংস্কারের সীমাবদ্ধতাকে ভেঙে খোলা মাঠে নানান ধরণের আয়োজনে প্রতি বছর মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরি তারুণ্যের সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ‘মণিপুরি থিয়েটার’। কমলগঞ্জের ঘোড়ামারায় ১৯৯৭ সালে প্রথম আয়োজিত হয় বিষু উৎসবের এই মঞ্চ-অনুষ্ঠান। মণিপুরি থিয়েটারের তরুণরা ভেবেছিল কেবল ঐতিহ্য, কৃত্য আর লোকাচারে পড়ে থাকলে চলবে না, বিষু উৎসবকে বাঙালির নববর্ষের মতো মণিপুরিদের একটা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্মিলনের ক্ষেত্র করে তুলতে হবে। ধীরে ধীরে এ-আয়োজনে শুধু মণিপুরি নয়, বাঙালিসহ আশেপাশের নানান সম্প্রদায়ের মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। ঢাকা থেকেও প্রতিবছর শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবিরা সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, প্রান্তিক জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কতি নিয়ে অসংখ্য সেমিনার হয়েছে। মণিপুরিদের ধর্মীয় মণ্ডপভিত্তিক পালা-লীলার পরিবেশনাগুলো বেরিয়ে আসে খোলামঞ্চে। খেলামঞ্চেই পরিবেশিত হতে শুরু করল খানিকটা নিরীক্ষাধর্মী ও সম্পাদিত রাসলীলা, রাখালরাস, উদুখলরাসসহ নানান আঙ্গিক। মানত ও মঙ্গলের ধারণা থেকে বের হয়ে জাতিগত সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে এ-উৎসবটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখন মণিপুরিদের কাছে বিষু উৎসবের আকাঙ্ক্ষা যতটুকু পিঠা-ভোজন-নিকন খেলার জন্য, মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনটির জন্যও তার কম নয়। এ বছর নতুন কী নাটক হয়, কী চমক থাকে, কোন ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি ঘটে, কী নিয়ে আলোচনা হয় এসব। আর সকালে মণিপুরিদের নিজস্ব ঝলমলে পোশাকে নিজেদের ভাষায় গান করতে করতে ঢোল আর মৃদঙ্গ বাজাতে বাজাতে রাস্তায় চলতে থাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

 

মেইতেই মণিপুরিরা মণিপুরে উদযাপিত সহস্র বছরের পুরাতন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পালন করে ‘সাজিবু চেইরাওবা’ নামের নববর্ষ উৎসব। মেইতেই মণিপুরিদের মধ্যে প্রচলিত চন্দ্রবর্ষপঞ্জিতে সাজিবু হচ্ছে প্রথম মাস। ‘চেই’ মানে কাঠি, ‘রাওবা’ মানে ঘোষণা। মণিপুরে আদিকালে নতুন বছর আসার সময় গ্রামীণ জনপদে রাজার আজ্ঞাবাহী একজন অশ্বারোহী কাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে নববর্ষের ঘোষণা করত। তা থেকেই দিনটির নাম ‘চেইরাওবা’ বা মতান্তরে ‘সাজিবু চেইরাওবা’ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এদিন মেইতেই মণিপুরিরা ধোয়া মোছা করে বাড়ি-ঘর পবিত্র করে তোলে। থাকে নানান খাবার-দাবারের আয়োজন। এছাড়া মণিপুরিদের আদিভূমি ভারতের মণিপুরে এদিন মেইতেইরা চেইরোচিং পর্বতে উঠে নৃত্যগীত করে থাকে; বিশ্বে তাদের অবস্থান যেন সেই পর্বতের মহত্তম উচ্চতায় ওঠে- এই প্রতীকী বিশ্বাসে। মণিপুরিদের প্রাচীন কাঙখেলার প্রতিযোগিতাও হয়ে থাকে কয়েকদিন ব্যাপী। পাঙাল বা মুসলিম মণিপুরিদের সেভাবে বিশেষ কোনো কৃত্য না থাকলেও নববর্ষের দিন বিভিন্ন ধরণের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হয়ে থাকে। তাদের মধ্যেও কাঙ খেলার প্রচলন রয়েছে।

বছর শেষ ও শুরুর সন্ধি এভাবে মণিপুরি জনজীবনে নানান বৈচিত্র্যে সেজে ওঠে। কৃত্য আর সহজ লোকাচার সেখানে একাকার হয়ে যায়।  আর জীবন তার চলমানতার শক্তিকে নবায়ন করে প্রকৃতির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক রচনার মধ্য দিয়ে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়