ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাশিয়া-জাপানের শান্তি চুক্তি হয়নি যে কারণে

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাশিয়া-জাপানের শান্তি চুক্তি হয়নি যে কারণে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে শান্তি চুক্তির পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে বিরোধপূর্ণ একটি দ্বীপপুঞ্জ। এর নাম কুরিল দ্বীপপুঞ্জ।  

সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে জাপান সফরে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তির দিকে এগোতে চায় দুই দেশ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) এমন সময় তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় কুরিল দ্বীপপুঞ্জে আগ্রাসন চালায়, যখন জাপান আত্মসমর্পণ করেছে। তবে তখনও জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ সমাপ্তির চুক্তি হয়নি। সেই থেকে কুরিলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাশিয়ার হাতে।

কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানে ‘উত্তরাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত। এর অবস্থান জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপ ও রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের মাঝে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করে আসছে জাপান। কিন্তু রাশিয়া কখনো তাতে রাজি হয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক সনদ হিসেবে জাপান ও মিত্র শক্তির দেশগুলোর মধ্যে ১৯৫১ সালে শান্তি চুক্তি হয়। কিন্তু ওই চুক্তিতে সই করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ হয়নি আজও। তবে শত্রুতা ভুলে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলার জন্য ১৯৫৬ সালে দুই দেশ এক যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। আজও রাশিয়া ও জাপানের সব ধরনের সম্পর্কের ভিত্তি সেই ঘোষণার ওপর নির্ভরশীল।

স্থায়ী শান্তি চুক্তির পথে এগিয়ে যেতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠক করবেন পুতিন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শিগগিরই এ চুক্তি হচ্ছে না।

কুরিল দ্বীপপুঞ্জের পরিচিতি
চারটি দ্বীপ নিয়ে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ। দ্বীপগুলো হলো- কুনাশির (জাপান ডাকে কুনাশিরি), ইতুরুপ (জাপান ডাকে ইতোরোফু), শিকোতান ও হাবোমাই। এসব দ্বীপে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বসবাস করেন। মৎস্য আহোরণ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে।

যে কারণে বিরোধ
১৯৪৫ সালের সেপ্টম্বর মাসে জাপান আত্মসমর্পণের পর কুরিল দ্বীপপুঞ্জে আগ্রাসন চালায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বীপগুলোয় বসবাসকারী জাপানিদের জাপানের মূল ভূখ-ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেদখলে চলে গেলেও জাপান কখনো দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা ছাড়েনি। যত দিন এ বিরোধ নিষ্পত্তি না হচ্ছে, ততদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তির শান্তি চুক্তি করতে পারছে না দেশ দুটি।

যুদ্ধ শেষের পরে দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে কিছুতেই স্থায়ীভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।

১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একমত হয়, কুরিল দ্বীপপুঞ্জের পুরো মালিকানা পাবে রাশিয়ানরা। কিন্তু ১৯৫৬ সালে রাশিয়া ও জাপানের যৌথ চুক্তিতে বলা হয়, শান্তি চুক্তি হলে শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপ দুটি জাপানকে দেওয়া হবে। সেই চুক্তি আজো হয়নি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৫৬ সালের আলোকে ১৯৯৩ সালে একই ধরনের একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করে জাপান ও রাশিয়া। এই ঘোষণাকে ভিত্তি ধরে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর সমঝোতা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, তবে কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।

যে কারণে বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মানি জাপানের মাটি ব্যবহার করে অসংখ্য রাশিয়ানদের হত্যা করে। যে কারণে রাশিয়ায় জাপানের গ্রহণযোগ্যতা আজও তলানিতে। রাশিয়ার প্রতি জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গিও একই রকম বৈরী। চারটি দ্বীপের মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার মতো জনমত কখনো তৈরি হয়নি জাপানে।

বিরোধী নিষ্পত্তি না হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো- প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবেশের জন্য পুরো কুরিল দ্বীপপুঞ্জ রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য অপরিহার্য। রাশিয়ার আশঙ্কা, জাপানের সঙ্গে চুক্তিতে গেলে পরে চুক্তি ভেঙে আরো দ্বীপের মালিকানা দাবি করে বসতে পারে তারা। এ ছাড়া দ্বীপগুলোতে মূল্যবান আকরিক ও হাইড্রোকার্বনের মজুত রয়েছে।

এখন কী হতে পারে?
কুরিল দ্বীপপুঞ্জের বিরোধ নিষ্পত্তিতে নতুন করে ভাবছে জাপান। ১৯৫৬ সালের যৌথ ঘোষণার আলোকে চুক্তির দ্বার উন্মোচন করতে চাইছে তারা; যে ঘোষণায় বলা আছে, চুক্তি হলে জাপানকে দুটি দ্বীপ দেওয়া হবে। তবে এ সপ্তাহের মধ্যে শান্তি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

পশ্চিমা দেশগুলো ও জাপানের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ভুগছে রাশিয়া। তাদের অর্থনীতির গতি শ্লথ। এবারের সফরে পুতিন চেষ্টা করবেন, জাপানি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যি চুক্তি করতে। তার দেশে বিনিয়োগ করারও আহ্বান জানাবেন তিনি। তবে জাপান জানিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো অর্থনৈতিক চুক্তি করবে না জাপান।

তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন।

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ডিসেম্বর ২০১৬/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়