ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মধ্যম আয়ের দেশ : নানা সমীকরণ

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৩ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মধ্যম আয়ের দেশ : নানা সমীকরণ

হাসান মাহামুদ : দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। সব স্তরের মানুষ খুশি এই স্বীকৃতিতে। কিন্তু নানান সমীকরণ মেলাচ্ছেন দেশের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

 

সরকার বলছে, স্বাধীনতার পরবর্তী নানা অপ্রাপ্তির মধ্যে এটি বড় সুসংবাদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে বর্তমান সরকারের সাম্প্রতিক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে।

 

কিন্তু ভিন্ন বক্তব্য আছে অর্থনীতিবিদ, রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের। 

 

বিশেষ করে, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আশঙ্কা করছেন, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাওয়া বর্তমান সুবিধাগুলো হারাতে হতে পারে।

 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে দেশের উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জে পড়তে হতে পারে। কারণ এখন থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে। যদিও এসব সুবিধা বাতিলের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। এরই মধ্যে এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘যত দিন পর্যন্ত জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করবে, তত দিন নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ। আর জাতিসংঘের বোর্ড সভায় এটা অনুমোদন পেতে আরো তিন চার বছর সময় লেগে যাবে।’

 

অর্থনীতিবিদরা আরো বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যাওয়া মানেই নিম্ন আয়ের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়া নয়। এর মধ্য দিয়ে শুধু একটি দেশের আয় বাড়ে, কিন্তু অন্যান্য সূচকে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

 

এদিকে রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, এ স্বীকৃতি অর্জনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোটাসহ বিশেষ সুবিধা হারাতে পারে বাংলাদেশ, যা এতদিন নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে ভোগ করে আসছিল।

 

বিশেষ করে, বাংলাদেশের অগ্রসরমাণ অর্থনীতি পোশাক খাতের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল বলে এই আশঙ্কা আরো বেশি বলে জানাচ্ছেন তারা।

 

নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলেও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

 

শুক্রবার তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, এই অর্জনের ফলে এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। কারণ, ঋণদাতারা এখন হয়তো কিছুটা কঠিন শর্ত জুড়ে দিতে পারে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পেয়ে থাকে, সেগুলো যেন অব্যাহত থাকে, এ ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

তবে দাতাসংস্থাদের চলমান কার্যক্রমে পরিবর্তন আসবে না বলে জানান তিনি।

 

এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া অবশ্যই আমাদের ইতিবাচক অগ্রগতি এবং বড় অর্জন। এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হবে।’

 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম রাইজিংবিডিকে বলেন, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়াতে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক ইউরোপ-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কোটা সুবিধা হারাতে পারে। এটি অবশ্যই সুখকর হবে না।

 

অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার একটি সংকেত মনে করতে হবে। কারণ বিশ্ববাণিজ্যে যদি অবস্থান পাকা না করতে পারি, ঠিক কোটাসুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বেশ বিপদে পড়ব। তাই এসব সুবিধা বন্ধ হলেও যাতে বিশ্ববাণিজ্যে আমরা পিছিয়ে না পড়ি, সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

 

কোনো দেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে অনূর্ধ্ব ৪ হাজার ১২৫ ডলার হলে সেটা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। আর মাথাপিছু জাতীয় আয় ৪ হাজার ১২৫ ডলার থেকে অনূর্ধ্ব ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার হলে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ বলা যাবে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ।

 

প্রতিবছর ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় অনুসারে দেশগুলোকে চারটি আয় গ্রুপে ভাগ করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার এ আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত দেয়।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৫/হাসান/বকুল/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়